শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৯

বাংলাদেশ: ডিসক্রিপ্যান্সি ইন ঢাকা

বাংলাদেশ: ডিসক্রিপ্যান্সি ইন ঢাকা

গত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারক মোহাম্মদ নিজামুল হক ব্রিটেনের খ্যাতনামা সাপ্তাহিক দ্যা ইকোনমিস্টের দুই সাংবাদিককে আদালতে হাজির হওয়ার সমন জারি করেন। বিচারক মোহাম্মদ নিজামুল হক এবং বেলজিয়ামে বসবাসরত বাংলাদেশি আইনজীবী জিয়াউদ্দিন আহমদের মধ্যে ‘স্কাইপি’ আলোচনার টেপ ও ইমেইল কি করে সাপ্তাহিকটির হস্তগত হয়েছে তা আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখার নির্দেশ দেয়া হয় ওই সমনে। এই নির্দেশের  সূত্র ধরে ট্রাইবুনালের বিচারকের আচরণের নানা গরমিল দ্যা ইকনমিস্টের চলতি সংখ্যায় ‘বাংলাদেশ: ডিসক্রিপ্যান্সি ইন ঢাকা’, নামের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে ।

ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনটির বিস্তারিত নিম্নে দেয়া হলো: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক স্ববিরোধী কথা বলেছেন বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট। ৫ ডিসেম্বর ইকোনমিস্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে কারও সঙ্গে তিনি কথা বলেননি। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলা গুরুতর অন্যায়। বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে নিজের স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলা যায় না। অন্যদিকে, তার পরদিন ৬ ডিসেম্বর, ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে জারি করা রুলে তিনি বলেছেন, যে বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে এবং আদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বেলজিয়াম প্রবাসী বাংলাদেশী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সহায়তা নিয়েছেন। এমনকি জিয়াউদ্দিন যে মামলার একটি পক্ষ তাও এড়িয়ে গেছেন বিচারপতি নিজামুল হক। এই স্ববিরোধিতা নিয়ে ইকোনমিস্ট বেশ কিছু প্রশ্নও তুলেছে। গতকাল ইকোনমিস্টের অনলাইন সংস্করণে ‘বাংলাদেশ : ডিসক্রিপ্যানসি ইন ঢাকা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব মন্তব্য করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইকোনমিস্ট বিচারপতি নিজামুল হক ও আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যকার ১৭ ঘণ্টার রেকর্ডকৃত টেলিফোন সংলাপ শুনেছে ও ২৩০টিরও বেশি ই-মেইল দেখেছে। এসব বিষয় অতি গোপনীয় এবং ব্রিটেনের গণমাধ্যমের আচরণবিধি অনুসারে আমরা (ইকোনমিস্ট) এসব বিষয় প্রকাশ করতে পারি না যদি তাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থ জড়িত না থাকে। আমরা এসব বিষয় পাওয়ার জন্য চেষ্টা করিনি , এর জন্য কোনো অর্থও দেইনি অথবা আমরা এটা প্রকাশের প্রতিশ্রুতিও দেইনি।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এসব ই-মেইল যদি খাঁটি হয় তা আদালতের (ট্রাইব্যুনালের) কাজের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশ্নের সৃষ্টি করবে। আমরা যথাসম্ভব এগুলোর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করব। তদন্তের অংশ হিসেবেই আমরা ওই দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’ ‘আমাদের তদন্ত এখনও চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর আমরা যদি দেখি যে এসব অভিযোগের সত্যতা আছে, তাহলে আমরা তা প্রকাশ করব। তার আগে আমরা বিচারপতি নিজামুল হক ও আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশ করছি। আমরা মনে করি, ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া ও গত ৬ ডিসেম্বর (ইকোনমিস্টের ওপর) তাদের আদেশের জন্য এই প্রতিবেদন প্রাসঙ্গিক হবে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নিজামুল হক সুপ্রিমকোর্টের একজন বিচারপতি এবং তিন সদস্য বিশিষ্ট ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। এখানে কোনো জুরি নেই এবং এই আদালত মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আদালতের প্রথম রায় আসতে পারে। অন্যদিকে আহমেদ জিয়াউদ্দিন একজন প্রবাসী বাংলাদেশী। তিনি ব্রাসেলসে বাস করেন এবং আন্তর্জাতিক আইনে অভিজ্ঞ। তিনি বেলজিয়াম ভিত্তিক বাংলাদেশ সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক—যে সংগঠনটি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারপতি নিজামুল হক স্ববিরোধী কথা বলেছেন। ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে রুল জারির আগের দিন ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ইকোনমিস্ট প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে বিচারপতি নিজামুল হক জোর দিয়ে বলেন, আহমেদ জিয়াউদ্দিন তাকে সহায়তা করেননি। ডকুমেন্ট তৈরিতে কিংবা অফিসিয়াল সামর্থ্যের বিষয়ে জিয়াউদ্দিন তাকে সহায়তা করেননি। তবে তিনি স্বীকার করেন, তিনি তার সঙ্গে কথা বলেছেন। বিচারপতি নিজামুল হক ইকোনমিস্টকে বলেন, ‘কারও পক্ষে এরকম কোনো ভূমিকা পালন গুরুতর অন্যায়। বিচারপতি হিসেবে আমরা তৃতীয় কোনো ব্যক্তি অথবা বাইরের কারও সহায়তা নিতে পারি না।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারপতি নিজামুল হককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি মাঝে মাঝে জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে ই-মেইল আদান-প্রদান করতেন কি না? বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ‘ না, না, না, ট্রাইব্যুনাল নিয়ে, বিচার নিয়ে অথবা বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি হিসেবে আমরা আমাদের স্ত্রীদের সঙ্গেও ট্রাইব্যুনাল নিয়ে কথা বলি না।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে ৬ ডিসেম্বর ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে আদেশে বলা হয়, জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। তাতে বলা হয়, নতুন আইনের ওপর ভিত্তি করে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। কাজেই বিচারকদের দেশের এবং দেশের বাইরের গবেষকদের সহায়তার প্রয়োজন। রুলে জিয়াউদ্দিনকে শুধু একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে (অথচ তিনি বাদীদের বিচার চায় এমন একটি সংগঠনের পরিচালক হিসেবে একটি পক্ষ)। রুলে স্বীকার করা হয়, ‘বিচারপ্রক্রিয়া চলার সময় ও আদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান তার কাছ থেকে সহায়তা নিয়েছেন।’ ব্রাসেলসে বসে দেয়া সাক্ষাত্কারে জিয়াউদ্দিন বলেছেন, আদালতের কারও সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘আমি বিচারকের মেইলগুলো চাইলে ফেরত পাঠাতে পারতাম। কিন্তু সর্বোপরি তিনি তো একজন বিচারক। তাই এটা করা হয়নি।’ তবে জিয়াউদ্দিন ও বিচারতি নিজামুল হকের মধ্যে সম্পর্ক ২৫ বছরের। জিয়াউদ্দিনের ভাই ছিলেন বিচারপতি নিজামুল হকের সহপাঠী। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তৃতীয় কোনো পক্ষের সঙ্গে আলাপকালে বিচারপতিদের সাধারণত সতর্ক থাকতে হয়। কারণ এটা করলে তাদের পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং এমন ধারণা তৈরি হতে পারে যে বিচারপ্রক্রিয়ায় জড়িত নয় এমন কারও দ্বারা আদালত প্রভাবিত হতে পারে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এসবের ফলে কয়েকটি প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কীসের ভিত্তিতে বিচারপতি (নিজামুল হক) তাকে সহায়তার জন্য জিয়াউদ্দিনকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নির্বাচন করেছে? কেন জিয়াউদ্দিনের ভূমিকা সম্পর্কে আদালতে প্রকাশ করেননি? ইকোনমিস্ট বিচারপতি নিজামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরই তিনি ৬ ডিসেম্বর রুল জারির সময় প্রকাশ করেন যে আদালত জিয়াউদ্দিনের সহায়তা নিয়েছে। তাহলে ৫ ডিসেম্বর কেন তিনি আমাদের বললেন, তাদের দুজনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল অথবা বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে কোনো কথা হয়নি। কেন তিনি বললেন, বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলা সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরদের জন্য সঙ্গত নয়?




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024