দুই প্রার্থীর অগ্নিপরীক্ষা। রাত পোহালেই ভোটের লড়াই। উৎসব-উত্তেজনা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান সংসদে প্রতিনিধি নির্বাচনের অপেক্ষায় হাওরবাসী। প্রস্তুত নির্বাচন কমিশনও। ইতিমধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দুই প্রার্থীও তাদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণার ইতি টেনেছেন।
গত ১৮ই জুন প্রতীক বরাদ্দের পর অষ্টগ্রাম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন। এবার অষ্টগ্রামে প্রচারণার মাধ্যমেই উভয় প্রার্থী তাদের একটানা ১৩ দিনের প্রচারণায় ইতি টানলেন। গত ২৪শে এপ্রিল কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্পিকার মো. আবদুল হামিদ এডভোকেট প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর আসনটি সাংবিধানিক নিয়মে শূন্য হয়ে যায়।
গত ২২শে মে নির্বাচন কমিশন উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এডভোকেটের বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তিন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও গত ৯ই জুন বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং অফিসার জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম নেতা মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীমের মনোনয়নপত্র বাতিল এবং একমাত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ১৩ই জুন তার প্রার্থিতা ফিরে পান। বিদ্রোহী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম অষ্টগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা হওয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক অষ্টগ্রামকে প্রাধান্য দিয়ে সেখান থেকেই তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টানা চারদিন গণসংযোগ, পথসভায় তিনি তার নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চান। অন্যদিকে বিদ্রোহী সৈয়দ অসীম তার নির্বাচনী প্রচারণার বেশির ভাগ সময়ই নিজ উপজেলা অষ্টগ্রামে গণসংযোগ-পথসভায় ব্যস্ত থাকেন।
গতকাল সোমবার বিকালে অষ্টগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল হক হায়দারী বাচ্চুর সভাপতিত্বে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের শেষ নির্বাচনী জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নেত্রকোনা-১ আসনের সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহী, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমএ আফজল, জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আমিরুল ইসলাম চুন্নুসহ জেলা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক তার বক্তৃতায় ‘অসমাপ্ত উন্নয়ন’ কাজ সমাপ্ত করা এবং হাওরবাসীর পাশে থাকার সুযোগ দেয়ার জন্য তার নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোটারদের ভোট প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে বিদ্রোহী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের সাপান্ত ও বাজুরি এলাকায় গণসংযোগ শেষে মোহনতলা বাজারে পথসভা করেন। পরে বিকালে আদমপুর বাজারে পথসভা শেষে সন্ধ্যায় পূর্ব অষ্টগ্রাম আখড়া বাজার মাঠে শেষ নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন। গণসংযোগ-পথসভায় সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম হাওরবাসীর সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে স্থানীয় ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এ আসনের তিন থানার মানুষ উন্নয়ন চায়। বিগত দিনে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। তাই মানুষ নেতৃত্বের পরিবর্তন চায়। আমি নির্বাচিত হলে অবহেলিত এ হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করবো।’ এ সময় তিনি সবাইকে হাওরবাসীর দিন বদলের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
রিটার্নিং অফিসারের অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপনির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৭ হাজার ১২৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৬৯ জন এনং নারী ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৫৭ জন। উপজেলাওয়ারি হিসাবে, ইটনা উপজেলায় ভোটার ৫২ হাজার ৯৮২ জন পুরুষ ও ৫১ হাজার ৪২১ জন নারী- মোট ১ লাখ ৪ হাজার ৪০৩ জন, মিঠামইন উপজেলায় ২৬ হাজার ৮৭৯ জন পুরুষ ও ৩৬ হাজার ৪১৩ জন নারী- মোট ৭৩ হাজার ২৯২ জন এবং অষ্টগ্রাম উপজেলায় ৪৯ হাজার ৪০৮ জন পুরুষ ও ৫০ হাজার ২৩ জন নারী- মোট ৯৯ হাজার ৪৩১ জন। তিন উপজেলায় মোট ১১৮টি ভোট কেন্দ্রের ৫৪৩টি ভোট কক্ষের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ইটনা উপজেলার মোট ৯টি ইউনিয়নের ৪৩টি ভোটকেন্দ্রে ভোট কক্ষের সংখ্যা ২১০টি, মিঠামইন উপজেলার মোট ৭টি ইউনিয়নের ৩৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোট কক্ষের সংখ্যা ১৪৬টি এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার মোট ৮টি ইউনিয়নের ৩৮টি ভোটকেন্দ্রে ভোট কক্ষের সংখ্যা ১৮৭টি। ভোটগ্রহণের জন্য ইটনা উপজেলার ৪৩টি ভোট কেন্দ্রের জন্য ৪৩ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ২১০ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৪২০ জন পোলিং অফিসার, মিঠামইন উপজেলার ৩৭টি ভোট কেন্দ্রে ৩৭ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১৪৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ২৯২ জন পোলিং অফিসার এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার ৩৮টি ভোট কেন্দ্রে ৩৮ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১৮৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ৩৫৪ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের ৭ ফ্যাক্টর আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি রক্ষা: ভোটের হিসাব, তর্ক-বিতর্কের মূল কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি রক্ষা। এ নির্বাচনে দলটির ভাবমূর্তি রক্ষা করাই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস ও নির্বাচনী ফলাফলের পরিসংখ্যানে এটি আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি হিসেবে স্বীকৃত।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এ আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ১৯৭৯ সালে একবারই পরাজিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এডভোকেট। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থী ফরহাদ আহম্মেদ কাঞ্চন। এছাড়া ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচন আওয়ামী লীগ বর্জন করে। তাই নির্বাচনী প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় ছিল ‘আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি রক্ষা’। এছাড়া, আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের পিতা প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এডভোকেট এ আসনের সাত বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য হওয়ায় এখানে তার ইমেজও কাজ করছে। অনেকেই মনে করছেন, পিতার পরিচয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছেন তৌফিক। নতুন নেতৃত্বের উত্থান: উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই প্রার্থীই নবীন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্বের উত্থান ঘটেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভাষ্য, রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক রাজনীতিতে নতুন হলেও তার পিতার সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সব সময় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। ফলে এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতা কোন অংশে কম নয়। এব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. খলিলুর রহমান বলেন, দলীয় প্রার্থী হিসেবে তৌফিককে নিয়ে দলে কোন অন্তর্দ্বন্দ্ব নেই। তিনি রাজনীতিতে নতুন হলেও এলাকায় তার একটি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলে এ এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে বিদ্রোহী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীমের সমর্থকদের দাবি, এলাকাবাসী নেতৃত্বের পরিবর্তনের মাধ্যমে এলাকার সুষম উন্নয়ন চায়। সৈয়দ অসীমের মধ্যে নেতৃত্বের সে গুণ রয়েছে। এ ব্যাপারে সদ্য পদত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট সৈয়দ শাহজাহান বলেন, রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কোন রকম সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে আমার জানা নেই। দলের অনেক যোগ্য লোক থাকার পরও তাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জনমতের চাপে সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম প্রার্থী হয়েছেন। অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বেশির ভাগ নেতাকর্মী সৈয়দ অসীমের সঙ্গে রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, কেবল সুবিধাভোগী ও চাটুকার শ্রেণীর লোকজন ছাড়া আওয়ামী লীগের পুরো নেতৃত্ব সৈয়দ অসীমের ওপর আস্থাশীল।
নতুন নেতৃত্বের এ উত্থানকে অনেকেই দুই প্রার্থীর ইমেজ যুদ্ধ হিসেবে দেখছেন। অষ্টগ্রামে আঞ্চলিকতার হাওয়া: বিদ্রোহী সৈয়দ অসীমের কর্মী-সমর্থকরা অষ্টগ্রামের আঞ্চলিকতার ওপর ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। আঞ্চলিকতার বিষয়টি সামনে রেখে স্থানীয়ভাবে তারা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব এবং সতর্কতার সঙ্গে নিবিড় প্রচারণা চালিয়েছেন। আওয়ামী ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত অষ্টগ্রামে নিজেদের সংহত অবস্থান বজায় থাকবে বলে আশা করছেন তারা। এজন্য নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির নিরসন হয়েছে বলেও দাবি তাদের। তরুণ ও সাধারণ ভোটার: উপনির্বাচনে নতুন ভোটার সংখ্যা ৩৬ হাজার ২৯৪। বিপুল সংখ্যক এই ভোটার উপনির্বাচনে ভোট দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, ৩৬ হাজারেরও বেশি এই নতুন ভোটাররা নির্বাচনে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবেন। এরা সেভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও নির্বাচন নিয়ে তাদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। তাই যে প্রার্থীর দিকে তারা ঝুঁকবেন, নির্বাচনে তার পাল্লাই ভারি হবে। সংখ্যালঘু ভোট: এ আসনে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। বেশির ভাগ সংখ্যালঘু ভোটার বরাবরই আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে নির্বাচনী ফলাফলে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন। তাই এ নির্বাচনে তাদের ভূমিকাকেও বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
বিপুল এ ভোটারদের দ্বারা যে নির্বাচনী ফলাফল প্রভাবিত হবে, এ নিয়ে কোন কারও দ্বিমত নেই। তবে তাদের কাউকে কাউকে উপজেলাভিত্তিক আঞ্চলিকতাকে প্রাধান্য দিতে দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় ভোটের সমীকরণে এ জনগোষ্ঠীর ভোট বিরাট ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইটনার ভোটার: এ আসনে মোট ২ লাখ ৭৭ হাজার ১২৬ জন ভোটার রয়েছেন। সংসদীয় আসনভুক্ত তিনটি উপজেলার মধ্যে ইটনায় ভোটার সংখ্যা সর্বোচ্চ এক লাখ চার হাজার ৪০৩ জন, অষ্টগ্রামে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৯ হাজার ৪৩১ জন এবং মিঠামইনে সর্বনিম্ন ৭৩ হাজার ২৯২ জন ভোটার রয়েছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের বাড়ি মিঠামইন এবং বিদ্রোহী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীমের বাড়ি অষ্টগ্রাম উপজেলায়। ভোটের হিসাবে সর্বোচ্চ হওয়ার কারণে উভয় প্রার্থীকেই জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে ইটনাবাসীর ভোটের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। স্থানীয়দের মতে, ভোটের হিসাবে ইটনায় সর্বোচ্চ ভোটার এবং এ উপজেলার কোন প্রার্থী না থাকায় উপ-নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে এ উপজেলার ভোটাররাই মূল ভূমিকা পালন করবেন।
বিএনপি: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন বয়কট করায় এ জোটের সমর্থক ভোটারদের কি ভূমিকা হবে- এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে অন্তহীন আলোচনা রয়েছে। বিদ্রোহী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম নিজ দল আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের একমাত্র নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী। ভোটে মাঠের লড়াইয়ে সরাসরি না থেকেও ভোটের ফলাফলে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। যে কারণে উভয় প্রার্থীর পক্ষ থেকেই তাদেরকে ভোটের লড়াইয়ে কাছে টানার চেষ্টা করা হয়েছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নিজ দলের লড়াইয়ে অন্যতম ফ্যাক্টর বিএনপি জোটের ভোট।
শুরুতে বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ অসীমকে দুর্বল প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবা হলেও নিজ উপজেলা অষ্টগ্রামের আঞ্চলিকতা, আওয়ামী লীগের একটি অংশের গোপন সমর্থন এবং স্থানীয় সমীকরণে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সমর্থনের কারণে নির্বাচনী মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায় আবির্ভূত হন তিনি। পিতার ‘অসমাপ্ত উন্নয়ন সমাপ্ত করার’ অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামা রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক পড়েন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। এ অবস্থায় উপনির্বাচন পরিণত হয় আওয়ামী লীগের প্রেস্টিজ ইস্যুতে। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ আমার পিতাকে ভালোবাসেন বলেই তিনি সাতবার নির্বাচিত হয়েছেন। আর চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো শেষ করার জন্য জনগণের ভালবাসা নিয়েই আমি বিজয়ী হবো।
সাধারণ ভোটাররা জানান, গত চার দশকের উন্নয়নচিত্র নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা থাকলেও প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এডভোকেটকে তারা তাদের আপনজন মনে করে ভীষণ ভালবাসেন। তার ছেলে সেই ভালবাসার ভাগিদার হতে পারেন কিনা, সেজন্য অপেক্ষা আর মাত্র একদিনের।
Leave a Reply