সুমন আহমেদ: বাংলায় প্রবাদ আছে কাউকে প্রতিশোধ নিতে হলে তাকে একটি পুরনো গাড়ি কিনতে বলো না হলে নির্বাচনে দাড় করিয়ে দাও। এতে লোভের বশবর্তী হয়ে সে অবশ্যই তার বাড়ি অবশ্যই বিক্রি করবে। কারণ নির্বাচন করতে গেলে যেমন টাকা লাগে তেমনি গাড়ি কিনতে গেলেও টাকা লাগবে এবং সংক্ষনাবেক্ষনে পুরনো গাড়ির খরচ অনেক বেশি। বিধায় এরমধ্যে যেকোন একটি কাজ করাতে পারলেই নিজের প্রতিশোধ উপভোগ করা যাবে।
হয়তো এরই ধারাবহিকতায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লন্ডন অফিস বিক্রির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর বিমানের চার পরিচালনা পর্ষদ সদস্য এখন লন্ডন অফিস সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। এজন্য তারা শিগগিরই লন্ডন সফর করবেন। লন্ডন অফিসের জায়গা বিক্রির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার কারণেই চার পর্ষদ সদস্য ইংল্যান্ড সফর করবেন। তারা মূলত ক্রেতা খুঁজবেন। বিমানের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।
পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হয়।তবে এ নিয়ে কেউই মুখ খুলছেন না। মূলত বিমান সংস্থার নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন স্টিল বিমানে যোগ দেওয়ার পরই লন্ডন অফিস বিক্রির তোড়জোড় শুরু করেন। সফরকারী দলে থাকবেন পরিচালনা পর্ষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক ইকবাল আহমেদ। জায়গা বিক্রির বিষয়টি কেভিন স্টিল নিজেই সম্প্রতি বিমানের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলানিউজের কাছে স্বীকার করেন।
সূত্র জানায়, ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকার কনডুইট স্ট্রিটে বিমানের অফিস। এখানে বিমানের নিজস্ব জায়গার ওপর তিন তলা ভবন রয়েছে। লন্ডনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অফিসটি হওয়ায় ইংল্যান্ডেরই অনেকের নজরে জায়গাটি পড়েছে। আর কেভিন স্টিল নিজেই ওই দেশের নাগরিক হওয়ায় অফিসের জায়গা, গুরুত্ব ও এর মূল্য সম্পর্কে ভালোই জ্ঞান রাখেন। যে কারণে নিজেই ইংল্যান্ডের এই জায়গা কেনার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে কেভিনের মাধ্যমে জায়গাটির দাম ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উঠেছে।
খুব সম্প্রতি বাংলা নিউজের অনুসন্ধানী রিপোর্টে এই তথ্য গুলো উঠে আসে জনসম্মুখ্। জনপ্রিয় অনলাইন শীর্ষবিন্দুও বিমান লন্ডন অফিস নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন লন্ডন থেকে প্রকাশ করে। বাংলানিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে কেভিন বলেন, হ্যাঁ আমি নিজেই বিমানের পরিচালনা পর্ষদে এই প্রস্তাব জমা দিয়েছি। বিমানকে লাভজনক পর্যায়ে নিতে এটা একটা জরুরী উদ্যগ বরে কেভিন মনে করেন। লন্ডন অফিসের জায়গা বিক্রির সিদ্ধান্তের কথা শুনে বিমানের বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশের পর লন্ডনপ্রবাসী বাংলাদেশিরাও এর বিরোধিতা করেন।
বিমানের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এই চক্রের প্ররোচনাতেই লন্ডন অফিসের জায়গা বিক্রিতে উদ্যোগী হয়েছেন কেভিন স্টিল। এজন্য বিমানের সর্বশেষ পরিচালনা পর্ষদ সভায় লন্ডন অফিস, মতিঝিলের অফিস, ফার্মগেটে বিমানের প্রেসের জায়গাসহ বিভিন্ন সম্পদ বিক্রির প্রস্তাব করেন। বিমানের দামি এই জায়গাগুলোর ওপর কেভিনই প্রথম নজর দেননি। এর আগেও বিমানের একাধিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসব জায়গা বিক্রিতে উদ্যোগী হয়েছেন। মূলত বড় বড় ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে আঁতাত করে মোটা অংকের অর্থপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা পেয়েই এসব উদ্যোগ নেন অতীতে একাধিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কেভিনও সেই একই পথে হাঁটছেন। এখন কেবল দেখার পালা যে, জাতীয় সম্পদ বিক্রি করে কতটুক এগিয়ে যেতে পারে জাতীয় পতাকা বহনকারী বিমান।
Leave a Reply