বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা, কাজের পরিবেশ ও অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর করা চুক্তিতে সই করেনি যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকার অন্যান্য খুচরা বিক্রেতা কোম্পানিগুলো।
তারা সম্প্রতি একটি নতুন চুক্তি করেছে। তাদের চুক্তিকে ইতোমধ্যেই ‘দাঁতহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো। কেন উত্তর আমেরিকার নামদামী ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলো চুক্তিতে সই করল না বা আলাদা চুক্তি করল? এর আগে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি ওয়ালমার্ট, গ্যাপের মতো বিশ্ব নন্দিত কোম্পানিগুলো। হাফিংটন পোস্ট ওয়ালমার্ট ও গ্যাপসহ অন্য ১৫টি কোম্পানির আলাদা চুক্তি করার পাঁচটি কারণ তুলে ধরেছে।
কারণগুলো হলো-
মামলা নিয়ে ভয়: চুক্তি পালনে অসম্মতি জানালে বা ব্যর্থ হলে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর চুক্তি অনুসারে মামলা-মোকদ্দমার মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু উত্তর আমেরিকার কোম্পানিগুলোতে এটার কোনো বালাই নেই।
সংস্কারে অর্থ দিতে অনীহা: ইউরোপীয়দের চুক্তি অনুসারে, বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বা নিরাপত্তার চরম বিপর্যয় ঘটলে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানিগুলোকে কারখানার সংস্কার সাধনে অর্থ সহায়তা দিতে হবে।
অন্যদিকে, আমেরিকানদের চুক্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার, কারখানার মালিক, দাতা সংস্থার সঙ্গে ‘যৌথভাবে দায়’ নিবে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানিগুলো।
সুনাম হারানোর ভয়: ইউরোপীয়দের চুক্তিতে বলা হয়েছে, চুক্তিভুক্ত কোম্পানিগুলো যেসব কারখানা থেকে পোশাক কিনে সেগুলোর প্রায় এক হাজার কারখানায় নাম, ঠিকানা ও পর্যবেক্ষণের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবে। এক্ষেত্রে আমেরিকানদের চুক্তি অনুসারে, বেসরকারি সংস্থার সহায়তা ৫শ কারখানায় পর্যবেক্ষণ চালানো হবে। আগামী মাসে এ বেসরকারি সংস্থাকে বাছাই করার কথা রয়েছে।
কৃপণতা: পাঁচ বছর মেয়াদি ইউরোপীয়দের চুক্তিতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর প্রত্যেক কোম্পানি পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার করে অনুদান দিবে। কিন্তু উত্তর আমেরিকার কোম্পানিগুলোর চুক্তির ভিত্তিতে এ অনুদান দিতে হবে কোন কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে কি সংখ্যক পোশাক নেয় তার ভিত্তিতে। যারা সবচেয়ে বেশি নেয় তাদের পাঁচ বছরের জন্য দিতে হবে ১০ লাখ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশে উপস্থিতি কম: আমেরিকান জোটের মধ্য ওয়ালমার্ট, গ্যাপ, টার্গেট, নর্ডস্ট্রোম ও জেসি পেনি রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বাজারে পোশাক রফতানি হয় প্রায় ৬০ শতাংশ কিন্তু আমেরিকার বাজারে এ হার মাত্র ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর তুলনায় উত্তর আমেরিকার কোম্পানিগুলো উপস্থিতি কম। এসব কারণে ইউরোপীয় চুক্তির সঙ্গে নিজেদের জড়াতে চান না উত্তর আমেরিকার কোম্পানিগুলো।
গত মে মাসে এইচঅ্যান্ডএম, প্রাইমার্ক, ম্যাংগো, বেনেটন, ইন্ডিটেক্স, টেসকো, জি-স্টারসহ ইউরোপের অধিকাংশ এবং আমেরিকার দু-একটি কোম্পানি একটি চুক্তি করে। ‘বাংলাদেশে কারখানা ও ভবন নিরাপত্তা’ শীর্ষক চুক্তিতে কারখানায় নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে অর্থ প্রদান, তদারকিসহ আইনি বাধ্যবাধতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১২৯ জন নিহত হওয়ার পরে চুক্তিটি সম্পাদিত হয়।
Leave a Reply