শীর্ষবিন্দু নিউজ: মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধের মামলায় গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ ও সমালোচনার মধ্যেই রায় নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। অন্য দিকে, সোমবার ওই রায় ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। বিকালে তারা সারা দেশে হরতালের ডাক দেন। রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আপিলের দাবি জানানো হয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, সেক্টরর্স কমান্ডার্স ফোরাম ও বিভিন্ন বাম দলের পক্ষ থেকে।
সংসদে অধিবেশন চলাকালে দিনের কার্যসূচির শুরুতে ফ্লোর নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন রায়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তির আদেশ না হওয়ায় দেশের মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুরোধ জানিয়ে মেনন বলেন, সব ভাল যার শেষ ভাল তার। কিন্তু আমরা খোঁচট খেয়ে গেলাম। দেশের মানুষের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দাড়িয়ে বলেন, আমরা অনেক ঝড়ঝঞ্চা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বিচার শুরু করেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্যাইবুনালের সঙ্গে সিংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। রায় পাচ্ছি। বিচার হবে। এটাই জাতির বড় পাওয়া। তিনি বরেন, অনেকে আওয়ামী লীগকে দোষী করতে চাচ্ছেন। কিন্তু জিয়া এই যুদ্ধপরাধীদের যখন ফিরিয়ে এনেছিল- তখন তা প্রত্যখ্যান করলে আজ ৪২ বছর অপেক্ষা করতে হতো না। ওই সময় যারা বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, জিয়ার সঙ্গে সখ্যতা ও দহরম মহরম করেছিল- সেটা আর বলতে চাই না। তিনি আরো বলেন, এখন সকলেই আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। রায় শুরু হয়েছে। আমরা রায় কার্যকর করতে পারব। গোলাম আযমের বিচারের রায় বেড়িয়েছে। সে বিভিন্ন দন্ডে দন্ডিত হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক আদালত রায় দিয়েছে- জামাতকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আজ যুদ্ধপরাধী হিসাবে যারা সাজা পেয়েছে- এটা দীর্ঘদিনে প্রতীক্ষা, দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের ফসল বাস্তবায়ন হয়েছে। আমাদের দল ক্ষমতায় থাকতে এই রায় কার্যকর শুরু করব। কার্যকর হবে ইনশাল্লাহ। গোলাম আজমের রায়ের পর্যবেক্ষণে জামায়াতে ইসলামীকেও যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী করার বিষয়টি সংসদের তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
গোলাম আজমের রায়ের প্রতিবাদে জামাতের ডাকা হরতালের মধ্যে সংসদ অধিবেশনে যোগ না দেয়ায় বিরোধী দলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, রায় দেয়ার কথা শুনেই হরতাল ডেকেছে জামাত। তার সমর্থনে বিএনপি সংসদে আসেনি। রায় শুনে আজও তারা আসেনি। গোলাম আযম ও যুদ্ধাপরাধের প্রতি বিএনপি নেত্রীর সমর্থন একেবারেই পরিষ্কার। বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ্য করে সংসদ নেতা বলেন, এই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে কি না করেছেন? সংখ্যালঘুদের বাড়িতে আক্রমণ করেছেন, বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা করেছেন। গত মে মাসে হেফাজতি তাণ্ডবের মধ্যে কোরআনে আগুন দেয়ার ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, এই দেখেন কোরান শরীফগুলো কীভাবে পুড়িয়েছে। দেখলে চোখে পানি চলে আসে।
সম্প্রতি তোলপাড় সৃষ্টি করা চট্রগ্রামের হাটহাজারীর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল শাহ আহমদ শফীর বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়েদের কী তাহলে ঘরে বসে থাকতে হবে? মেয়েরা গার্মেন্টেসে কাজ করছেন- তারা তা করতে পারবেন না? বিএনপি নেত্রী কীভাবে ওনাকে সমর্থন করেন? উনি মাওলানা শফীর তেঁতুল হতে চান। তাহলে আমরা কিছু বলার নাই। শফীর সঙ্গ ত্যাগ করে খালেদা জিয়াকে নারী উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।
Leave a Reply