বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:২৮

ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন বাংলাদেশের

ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন বাংলাদেশের

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল) প্রথম লক্ষ্যমাত্রা দারিদ্র্য কমিয়ে আনায় ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ডেডলাইন ধরা হলেও নির্দিষ্ট সময়ের দুবছর আগেই ২০১৩ সালে এ লক্ষ্যমাত্রাটি পূরণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

টাইম ম্যাগাজিনে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। ‘দীর্ঘ হতাশার পর অবশেষে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুসংবাদ’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে জুন মাসে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনের সূত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ২০০০ সালে বাংলাদেশের ৬ কোটি ৩০ লাখ (৬৩ মিলিয়ন) মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করলেও ২০১০ সালে এ সংখ্যা ৪ কোটি ৭০ লাখে (৪৭ মিলিয়ন) নেমে এসেছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা সত্ত্বেও ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ২৬ ভাগ কমেছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা জনসংখ্যার হার কমিয়ে ২৯ দশমিক ৫ শতাংশে আনার কথা থাকলেও তা আরও কমে ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র্য বলতে যাদের দৈনিক আয় দুই ডলারের কম কিংবা যারা দৈনিক ২ হাজার একশ ক্যালরির কম খাদ্যগ্রহণ করে এমন ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে।

গত এপ্রিল মাসে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর শোকের ছায়ায় এই ভালো সংবাদটি অনেকটাই আড়ালে পড়ে গেছে বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ ব্যাপারে টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতি ১০ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ করে বাড়ায় এ সফলতা অর্জিত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের কাছ থেকে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর এটাই শিক্ষা নেয়া উচিত যে সরকার একা কিছুই করতে পারে না। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্র্যের বিস্তার ব্যাপক। সে তুলনায় সম্পদ ও সরকারের সামর্থ্য নগণ্য। তাই সরকারের পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগ ও সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।’

নিবন্ধে আরও বলা হয়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ১১২৯ জন শ্রমিকের প্রাণহানির পর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ব্যাপারটি অনেকের কাছে তিক্ত মনে হতে পারে, কিন্তু দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের জন্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছেন। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য কমানো ছাড়াও বাংলাদেশের আরও অর্জন আছে বলে জানায় ম্যাগাজিনটি। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তারা বলে, বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার কমে এসেছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের টিকা নেয়ার হার বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে ও সার্বিক নিরাপত্তা বেড়েছে। এসবের পাশাপাশি বেড়েছে জীবনধারণের সাধারণ মান। ২০০০ সালে মোট দরিদ্রের মাত্র ১০ শতাংশ বিদ্যুত্ সেবার নাগালে ছিলেন। বর্তমানে এই হার ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০০০ সালে দরিদ্রদের কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না, কিন্তু বর্তমানে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ দরিদ্রের হাতে মোবাইল।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, এসব উন্নতির পেছনে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরই বড় ভূমিকা রয়েছে। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত গড় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশেরও বেশি। কৃষিসহ স্থানীয় পরিবহন, যেমন রিকশা চালানোর মাধ্যমে প্রতিবছর ১০ শতাংশ করে আয় বাড়ছে। এবং যেহেতু শিশু জন্মহার প্রতিবছরই কমছে, তাই সম্পদ ও আয়ের উপর থেকে চাপ কমছে, চাকরি বাড়ছে। প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের বক্তব্য তুলে ধরা হয়।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, ‘আগে একটি পরিবারে একজন উপার্জনক্ষম সদস্য থাকলেও বর্তমানে একাধিক উপার্জনক্ষম সদস্য রয়েছে।’ প্রতিবেদনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, একটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হাজার হাজার মানুষকে দারিদ্র্যের নিম্নতম সীমায় নিয়ে যেতে পারে। রানা প্লাজার ঘটনার মতো এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবেলা করাও বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

২০০০ সালে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা ও প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) ঘোষণা করা হয়। এর আওতায় ২০১৫ সালের মধ্যে আটটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সম্মত হয় জাতিসংঘের সব সদস্য দেশ। এর মধ্যে প্রথম লক্ষ্যমাত্রাটি হচ্ছে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বিমোচন অর্ধেকের বেশি কমিয়ে আনা, যা পূরণ করার পথে বাংলাদেশ। অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনা, মাতৃস্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নয়ন, এইডস-ম্যালেরিয়া দূর করা, পরিবেশের ভারসাম্য নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024