শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৪

আজ মহান বিজয় দিবস

আজ মহান বিজয় দিবস

ম. হাসান: আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৪১ বছর পূর্ণ হলো। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর লাখো প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে আজকের দিনে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি উদযাপনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মো: জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া  মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়ে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করবে সেসব শহীদকে যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। স্মরণ করবে সেসব বীর সেনানিদের যারা শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। যেসব নরনারীর সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন তাদের সবার প্রতি  কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সম্মান জানানো হবে। বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে বুটের তলায় স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে বর্বর এক হত্যাযজ্ঞের অপারেশনে নামে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। আলোচনার টেবিলে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ ছেড়ে তারা বন্দুকের নল আর কামানের গোলা বেছে নেয় সমাধানের উপায় হিসেবে। যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় আমাদের ওপর।  নিরস্ত্র  ঘুমন্ত মানুষকে নির্বিচারে হত্যায় মেতে ওঠে অস্ত্রের জোরে বলীয়ান সামরিক শাসকগোষ্ঠী। শুরু হয়  মুক্তির লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ। ব্রিটিশের বিদায়ের পর নতুনরূপে এ জাতির ওপর শোষক হিসেবে আবির্ভূত হয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক শ্রেণী। যে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ একদিন পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে আন্দোলন করে মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিল সেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকেই আবার অস্ত্র ধরতে হলো পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। পশ্চিম পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠীর হঠকারিতা, অদূরদর্শিতা এবং অবিমৃশ্যকারিতার কারণে দুই অঞ্চলের মধ্যে সৃষ্টি হয় ভেদরেখা এবং বৈষম্যের বেড়াজাল। পূর্ববাংলার মানুষের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাষকগোষ্ঠীর  শোষণ, বঞ্চনা আর অবহেলা চরম আকার ধারণ করলে  প্রতিবাদে অগ্নিগর্ভ হতে থাকে এ অঞ্চল। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষের ন্যায়সঙ্গত কোনো দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে বুটের তলায় তা পিষ্ট করার নীতি গ্রহণ করে তারা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভকারী আওয়ামী লীগের  হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে টালবাহানা শুরু করে শাসকগোষ্ঠী। ফলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে তৎকালীন পূর্ব  পাকিস্তান। একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’ জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে প্রবল করে তোলে। ঢাকা যখন অগ্নিগর্ভ, তখন পাকিস্তানি শাসকচক্র আমাদের মুক্তির আকাক্সাকে সামরিক বুটের তলায় নিশ্চিহ্ন করার পথ বেছে নেয়। রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষ হত্যার মাধ্যমে জন্ম  দেয় ২৫ মার্চের কালরাত। এর পরই চূড়ান্ত হয়ে যায় আমাদের পৃথক পথচলার যাত্রা। তাদের সাথে আর নয়। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত  লড়াই।  দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিসংগ্রামের পর পরাজয় মেনে  নেয় পাকিস্তান বাহিনী। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ৯১ হাজার ৪৯৮ জন নিয়মিত-অনিয়মিত এবং আধা-সামরিক সৈন্য নিয়ে   ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে। শুরু হয়  স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পথচলা। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মুনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং রাতে আলোকসজ্জা করা হবে। বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার কর্মসূচি : বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয় হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে। সকাল ৬-৪৫ মিনিট সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করবে। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। বিজয় র‌্যালি : ঢাকা মহানগরীর অন্তর্গত সব থানা শাখা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও জাতীয় সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকা থেকে বিজয় র‌্যালি সহকারে পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হবেন ও সেখানে স্থাপিত শিখা চিরন্তনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় বিকেল ৪-২০ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। টুঙ্গিপাড়ায় : কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী এমপি, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি (অব:), শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য শেখ হারুন অর রশিদ, শ্রী বিপুল ঘোষ ও আবদুর রহমান এমপি প্রমুখ অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি। সশস্ত্রবাহিনীর কর্মসূচি : বিজয় দিবসকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের ল্েয বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে সশস্ত্রবাহিনী। তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় সূর্যোদয়ের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৩১ বার তোপধ্বনি করে বিজয় দিবসের কর্মসূচির সূচনা করা হবে। দেশের অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্রবাহিনীর অগ্রগতি কামনা করে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সব মসজিদে বিশেষ মুনাজাতের আয়োজন করা হবে। বরাবরের মতো এবারের মহান বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ-২০১২ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হবে। কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করবেন বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, সশস্ত্রবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এবারের কুচকাওয়াজে নতুন সংযোজন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নবসংযোজিত আটটি অত্যাধুনিক এমবিটি-২০০০ ট্যাংক, অত্যাধুনিক উইপন লোকেটিং রাডার এসএলসি-২, বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে নতুন সংযোজিত নৌবাহিনীর স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড সেলভেজ ফোর্স কর্তৃক ব্যবহৃত ডিফেন্ডার কাস বোট এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে নতুনভাবে সংযোজিত সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল। মহান বিজয় দিবস কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো সংযোজিত হতে যাচ্ছে এ যাবৎকালের তৈরি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় পতাকা। এ পতাকাটির দৈর্ঘ্য ২০০ ফুট এবং প্রস্থ ১২০ ফুট। এ কুচকাওয়াজে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৯ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, বীর বিক্রম এবং উপ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: শফিক শামীম। কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী সম্মিলিত যান্ত্রিক বহরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু মোহাম্মদ মুনির আলীম। যান্ত্রিক বহরে আরো অংশগ্রহণ করবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্বলিত অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও সুসজ্জিত গাড়িবহর। এ ছাড়া এয়ারবোর্ন কনটিনজেন্ট, জাতীয় পতাকাবাহী বিশেষ দল এবং ব্যাটেল ড্রেস কনটিনজেন্টের সমন্বয়ে গঠিত ‘বিশেষ জাতীয় পতাকা কনটিনজেন্টের নেতৃত্বে থাকবেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: সাইফুল আবেদীন। বিভিন্ন বহরের প্রদর্শনীর পর পরই শুরু হবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এক মনোজ্ঞ ফাইপাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে। বিমানবাহিনীর ফাইপাস্টের নেতৃত্ব দেবেন এয়ার কমোডর এহসানুল গণি চৌধুরী।

এ দিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, বাগেরহাট ও বরিশালে নৌবাহিনীর জাহাজগুলো বেলা ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। ঢাকায় সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জে বিআইডব্লিউটিএ জেটি মাতলাঘাট ও পাগলাঘাট, চট্টগ্রামে নিউমুড়িংয়ের নেভাল জেটি, খুলনায় বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাট, বাগেরহাটের মংলায় দিগরাজ নেভাল বার্থে, বরিশালে বিআইডব্লিউটিএর জেটিতে এগুলো পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

ইসলামিক ফাউনন্ডেশন বিজয় দিবস উপলক্ষে কুরআনখানি, মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও ওয়াজ মাহফিলের ব্যবস্থা করেছে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024