শীর্ষবিন্দু নিউজ: মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকে ‘প্রহসন’ ও ‘লজ্জাজনক’ বলেও উপহাস করেছেন বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত অন্যতম আসামী চৌধুরী মাঈনুদ্দিন। বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যায় অভিযুক্ত চৌধুরী মাঈনুদ্দিন।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ ১১টি মানবতাবিরোধী অভিযোগে বিচার চলছে চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন প্র্রসিকউশনের সাক্ষীরা। তারা সকলেই তাদের স্বজনকে হত্যার জন্য চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানকে দায়ী করেন। গত ২৪ জুন ওই দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর আগে গত ৪ জুন বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরু করার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে চৌধুরী মাঈনুদ্দিনের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ না জানালেও এর আগে বাংলাদেশকে নিয়ে অন্যান্য অনেক অপ্রীতিকর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ ব্রিটেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের পর ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে তা প্রত্যাহার করে নিয়ে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ওঠে আসে যে, এতো কিছুর পরেও নীরব বাংলাদেশ সরকার। এই মানবতাবিরোধী অপরাধীর সাক্ষাৎকার নেওয়া চ্যানেল বা এর কর্তৃপক্ষের কাছে তার এ বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ পর্যন্ত পাঠানো হয়নি বাংলাদেশের তরফ থেকে। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর নিন্দাটুকুও করা হয়নি। সরকারের যে দফতরের দায়িত্বের মধ্যে এটি পড়ে, সেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরং ‘এ বিষয়ে এখনো কিছু ভাবা হয়নি’ বলে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ কয়েকদিন আগেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তোলা। এবং বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তির উন্নয়ন করা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় এ ধরনের অনেক মন্তব্যের জবাব দিয়ে এসেছি। এ বিষয়টিও আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। তিনি বলেন, কে কোথায় কি বলছে, এটা আমরা প্রতি মুহূর্তেই তদারকি করি। কিন্তু সব কিছুর প্রতিবাদ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে যে যাই বলুক আমরা আমাদের কাজটি (মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার) সঠিকভাবে করতে পারলে বিশ্ববাসী বুঝতে সক্ষম হবে, প্রকৃত অপরাধী কে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করার পর দেশি এবং বিদেশি কিছু মানুষের অপপ্রচারকে দায়ী করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিক বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। দীপু মনিসহ সরকারের বিভিন্ন মহল এ বিষয়ে বিবৃতিও দিয়েছিলেন।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অপারেশন ইনচার্জ হিসেবে কুখ্যাত মাঈনুদ্দিন স্বীকার করেন, তিনি অখণ্ড পাকিস্তানের সমর্থক এবং জামায়াতের ছাত্র সংঘের সদস্য ছিলেন। মাঈনুদ্দিনের এসব মন্তব্যের বিপরীতে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন আল জাজিরাকে কোনো প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহুমদ খন্দকার কাছে এ বিষয়ে কথা বলতে প্রথমে অস্বীকৃতি জানিয়ে পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানান। তবে তিনি জানান, আল জাজিরা বা মাঈনুদ্দিনের কাছে প্রতিবাদ পাঠানোর মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার কাতারভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চৌধুরী মাঈনুদ্দিন জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের ওপর তার আস্থা নেই। তাই তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এ ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি হয়ে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করবেন। জামায়াতের তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের(এখন তা ইসলামী ছাত্রশিবির) নেতা চৌধুরী মাঈনুদ্দিন আরও বলেন, এটা একটা ক্যাঙ্গারু কোর্ট, প্রকৃত আদালত নয়। এ ধরনের বিচারের আদালতে কেউই নিজেকে সমর্পণ করতে চাইবে না। বুদ্ধিজীবী হত্যায় ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া প্রসিকিউশনের কয়েকটি সাক্ষ্য-প্রমাণকে তিনি সত্যের বিপরীত বলেও আখ্যা দেন।
Leave a Reply