শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: সিলেটের শিল্পপতি রাগীব আলীর অবৈধ দখল থেকে তারাপুর চা-বাগান মুক্ত করার পর এবার সেখানের মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালসহ যাবতীয় স্থাপনা ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে সরাতে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন উচ্চ আদালতের রায়ের নির্দেশনা মোতাবেক গণবিজ্ঞপ্তি জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসন থেকে ২০ জুলাই পাঠানো গণবিজ্ঞপ্তিটি গতকাল রোববার হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়। সোমবার জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে তারা তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানাবে। তবে কী অবহিত করা হবে বিষয়টি আগাম বলতে রাজি হয়নি কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত ১৫ মে তারাপুর চা-বাগান দখলমুক্ত করে জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখা প্রকৃত সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তের জিম্মায় দিয়েছিল।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ১৯১৫ সালের ২ জুলাই তারাপুর চা-বাগানের তৎকালীন মালিক বৈকুণ্ঠচন্দ্র গুপ্ত রাধাকৃষ্ণ জিউ দেবতার নামে বাগানটি উৎসর্গ করেন। তখন থেকেই ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা তারাপুর বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। বৈকুণ্ঠচন্দ্র গুপ্তের পর তাঁর ছেলে রাজেন্দ্র গুপ্ত এ দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত হন। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাগানটি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজেন্দ্র গুপ্ত ও তাঁর তিন ছেলে শহীদ হন। পরবর্তীকালে পঙ্কজ কুমার গুপ্ত মেডিকেল শিক্ষা গ্রহণে যুক্তরাজ্য চলে গেলে ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী।
গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বাগানটি প্রকৃত সেবায়েতকে বুঝিয়ে দেওয়া, বাগান দখল নিয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা সক্রিয় করাসহ ১৭টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের রায়ের পর গত ১৫ মে তারাপুর চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়া ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।
সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার উপকণ্ঠে তারাপুর চা-বাগান। প্রবেশমুখে রাগীব আলী ও তাঁর স্ত্রীর নামে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করা হয় ১৯৯৯ সালে। পরে নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট ভবন রয়েছে প্রায় সাত লাখ বর্গফুট জায়গায়। এর মধ্যে ১০ তলাবিশিষ্ট ভবন ২টি, ৫ তলাবিশিষ্ট ছাত্রাবাস ভবন ৪টি, ৬ তলাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন ১টি। মেডিকেল শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ১০০ ও নার্সিং শিক্ষার্থী ৫৫০। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ৭০০।
মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী মহাপরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, গণবিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা আজ সোমবার জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানাবেন। তবে এ অবহিতকরণ কী বিষয়ে থাকবে, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করে তিনি বলেন, ‘আমরা মানবিক দিক বিবেচনার কথা জানাব।’