শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪

আগে নাগরিকত্ব পরে তিস্তা চুক্তি

আগে নাগরিকত্ব পরে তিস্তা চুক্তি

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: তিস্তা চুক্তি সম্পাদন ও হিন্দুসহ সংখ্যালঘু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব বিষয়ে এবারে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি চিঠি লিখল ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে। তাই তিস্তা প্রক্রিয়া আবারও কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।

দিও এই দুটি বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তি বা অনাপত্তি কোনোটিই জানা যাচ্ছে না। এবারে দরকষাকষির মুখ্য ভূমিকায় নেমেছে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার নেতারা। তারা তিস্তার পানিচুক্তির আগে হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদানের ইস্যুটি ফয়সালা চাইছেন।

চলতি সপ্তাহে ভারতীয় দৈনিক ইকনোমিক টাইমস ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট বলেছে, আগে নাগরিকত্ব, পরে তিস্তা। তবে অনেকের আশঙ্কা, হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি ব্যাপক হারে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বহিষ্কারের বিষয়টি কোনো কারণে সামনে আসে তাহলে তিস্তা চুক্তি আরো পেছাতে পারে।

এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতারা ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলেছেন, তাদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা না করে যেন তিস্তা চুক্তি না করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির বাংলাদেশ বিষয়ক গবেষক এবং দলের প্রবীণ নেতা প্রফেসর মোহিত রায় ইকনোমিক টাইমসকে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থরক্ষা প্রশ্নের মুখে। এর একটি হচ্ছে, তিস্তার পানিবণ্টন, অন্যটি উদ্বাস্তু বিষয়ক।

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির উদ্বাস্তু বিষয়ক সেল গত ২৫ মে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিংকে লেখা চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামে বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের বিষয়ে অবহিত করেছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, আসামের বিজেপির সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সর্বনান্দ সান্যাল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি আসামকে ‘বাংলাদেশী’মুক্ত করবেন। অথচ তিনি বাংলাদেশী হিন্দু উদ্বাস্তুদের ভাগ্য কি হবে সে বিষয়ে নীরবতা পালন করছেন। আসাম গণপরিষদ বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু উদ্বাস্তুদের বিষয়ে আবাসিক মর্যাদাদানের বিরোধিতা করছে।

ওই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি এই ইস্যুটি সামনে আনছে। কারণ, এ বিষয়ের সিদ্ধান্তের ওপর পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়া লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তাই এ বিষয়ে পার্লামেন্টে যে বিল আনা হচ্ছে তার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। আমাদের এটা দেখা উচিত হবে যে, উদ্বাস্তুদের স্বার্থ সন্তোষজনকভাবে নিশ্চিত হয়েছে।

বিজেপির রাজ্য শাখার সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, তারা এ বিষয়ে কিছু সুপারিশ কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছেন। এবং আশা প্রকাশ করেন যে, বিষয়গুলো প্রস্তাবিত বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মিস্টার ঘোষ উল্লেখ করেন যে, আমরা হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দিতে বলেছি।

সরকারের উচিত হবে উদ্বস্তুদের সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় রেকর্ডভুক্ত করা, যার মধ্যে থাকবে উদ্বাস্তুদের পূর্ববৃত্তান্ত এবং বাংলাদেশের বসবাস করার কারণ। এবং এই নতুন আইন বাস্তবায়নের পর সরকারের উচিত হবে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের বহিষ্কার করতে উদ্যোগী হওয়া।

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপির সিনিয়র নেতা স্বিদ্ধার্থ নাথ সিং ইকোনিমক টাইমসকে বলেছেন, প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিল প্রসঙ্গে আমরা সকল স্টেকহোল্ডারবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। আমরা আশা প্রকাশ করছি যে, এ বিল চলতি অধিবেশনে পাস হবে। কিন্তু তিস্তা ইস্যুর সমাধান হতে আরো কিছু বেশি সময় লাগবে।

উল্লেখ্য যে, গত ১৯ জুলাই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্টে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা উদ্বাস্তুদের সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার সংসদে একটি বিল আনা হয়েছে। এই বিলের আওতায় হিন্দু, শিখ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়ে সরকার বিবেচনা করতে পারবে। কিন্তু সেজন্য আবেদনকারীদের প্রয়োজনীয় দলিলপত্র সরবরাহের দরকার পড়বে না।

পার্লামেন্টে ওই বিল পেশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, বর্তমান আইনের আওতায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত যেসব পাকিস্তানি, বাংলাদেশী ও আফগানীরা নাগরিকত্বের দরখাস্ত করেছেন, তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে ১২ বছরের বাসিন্দা হতে হয়।

এর ফলে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য যেসব সুবিধা রয়েছে তার অনেক কিছুই এই আবেদনকারীরা ভোগ করতে পারেন না।

অথচ তারা ভারতে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারেন। তাই ওই তিনটি দেশের সংখ্যালঘুরা ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভ করার যোগ্যতা বিদ্যমান আইনের ১২ বছরের পরিবর্তে ৫ বছর কমিয়ে ৭ বছরে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বিজেপি উল্লেখ করেছিল, নির্যাতিত হিন্দুদের জন্য ভারত একটি প্রকৃতিক দেশ, যাদেরকে আশ্রয়দানের জন্য স্বাগত জানানো হবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার নির্বাচনী বক্তৃতায় নির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে তফাৎ দেখিয়ে বলেছেন, হিন্দুদের আশ্রয় দিতে হবে।

ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, তিনি সরকার গঠনের পর থেকে সংখ্যালঘুদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা ইস্যু, আবাসন ব্যবস্থা, প্যান এবং আধার কার্ড প্রদান, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাংকে হিসাব খোলা, ভিসা ফি হ্রাসের মতো নানাবিধ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024