শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন-জট সাম্প্রতিক সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পাঁচ লক্ষাধিক আশ্রয় আবেদনের কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বিচারকসংকটের কারণে বছরের পর বছর গড়ালেও অভিবাসনের আবেদনের কোনো নড়চড় হচ্ছে না। দ্রুত সিদ্ধান্তের অভাবে আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, গত মাস পর্যন্ত এ দেশে আশ্রয়ের আবেদনকারীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত বেশিসংখ্যক রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন দেখা যায়নি। আমেরিকার নিয়মিত পারিবারিক বা অন্যান্য কর্মসূচিতে অভিবাসনের হিসাবের বাইরে এসব আশ্রয় আবেদন।
নিয়মিত অভিবাসনের জন্য প্রশাসনিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। রাজনৈতিক আশ্রয় বা শরণার্থীদের জন্য প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
আশ্রয় আবেদনের পর অভিবাসন বিভাগের বিচারকের কাছে আবেদনের যথার্থতা প্রমাণ করতে হয়। বিভিন্নভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করে যারা এখানে থেকে যাওয়ার জন্য আবেদন করে, তাদের আবেদন গ্রহণ করে অভিবাসন আদালতের বিচারকের ডাকের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়।
সীমান্তপথে আসা বহু অভিবাসীকে ডিটেনশন কেন্দ্রে আটক রাখা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়।
অনেক অভিবাসী ব্যয়বহুল জামিনের অর্থই জোগাড় করতে পারে না। যারা ভ্রমণ বা অন্য কোনোভাবে প্রবেশ করে আশ্রয়ের আবেদন করে, তাদের চূড়ান্ত শুনানি না হওয়া পর্যন্ত কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্থায়ী কর্ম-অনুমতি দেওয়া হয়। আবেদন চূড়ান্তভাবে মঞ্জুর হলে স্বদেশে রেখে আসা পরিবার (স্বামী/স্ত্রী/অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান) আমেরিকায় নিয়ে আসার সুযোগ দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিভাগে জমে ওঠা আবেদন সামাল দেওয়ার জন্য গত মাসে নতুন ১৫ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মোট অভিবাসন বিচারকের সংখ্যা ২৭৩। মোট ৩৭৪ জন অভিবাসন বিচারক নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে। যদিও বর্তমানে জটে পড়া আবেদন দ্রুত শেষ করার জন্য কমপক্ষে ৫২৪ জন বিচারকের প্রয়োজন।
কংগ্রেসে অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ার কারণে অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হিউম্যান রাইটস ফার্স্ট নামের মানবাধিকার সংগঠন জরুরি অর্থ বরাদ্দের জন্য মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
হিউম্যান ফার্স্ট বলেছে, অভিবাসন-জটে আটকে পড়া আবেদনের সুরাহা করা না হলে জট বাঁধতে থাকবে। ২০২২ সালে এ জট ১০ লাখে পৌঁছাবে।
সেন্টার ফর ইমিগ্রেশনের তথ্যমতে, বর্তমান হারে অভিবাসনের আশ্রয় আবেদনের প্রক্রিয়া চলতে থাকলে আবেদনকারীকে শুনানির জন্য কমপক্ষে দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীদের জন্য আরও উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রিপাবলিকান দলের প্রার্থীর অবস্থান স্পষ্টতই অভিবাসনবিরোধী। লাখ লাখ আশ্রয় আবেদনকারী মনে করে, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তাদের আমেরিকায় আবাসনের আবেদন সহজে গৃহীত হবে না। এর মধ্যে পরিবার-বিচ্ছিন্ন বহু আবেদনকারী অপেক্ষা করছে স্বদেশ থেকে পরিবার নিয়ে আসার জন্য।
অন্যান্য দেশ ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীদের কয়েক হাজার আবেদন জটে আটকা পড়েছে। এসব লোকজন আবেদনের কোনো সুরাহা না হলে দেশেও যেতে পারছে না। পরিবার বিচ্ছিন্নতাসহ আমেরিকায় কাজকর্ম প্রাপ্তি, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ, আবাসন, চিকিৎসাসুবিধাসহ নানা কারণে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় এসব অভিবাসীকে।
মেক্সিকোসহ দক্ষিণ আমেরিকার দেশ থেকে সীমান্তপথ দিয়ে আসা হাজার হাজার অভিবাসীকে সীমান্তের ডিটেনশন কেন্দ্রে কাটাতে হচ্ছে মাসের পর মাস।
সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা এমন ৪০ জন বাংলাদেশিকে প্রথমে ডিটেনশন কেন্দ্রে রাখা হয়। পরে তাদের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফার্স্ট তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছে, আমেরিকার আশ্রয় আবেদন ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে।
আইনজীবীর সহযোগিতা ছাড়া আশ্রয় আবেদন প্রমাণ করা দুরূহ। আইনজীবীদের সহায়তা নিতে খরচও হয় অনেক। অনেকের পক্ষে এই খরচ বহন করা সম্ভব হয় না।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত বুধবার ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে অভিবাসীদের মধ্যে ফের আশার আলো দেখা দিয়েছে।
ওবামা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পদে হিলারি নির্বাচিত হলে আমেরিকার নিয়মতান্ত্রিক অভিবাসন-পদ্ধতি অব্যাহত থাকবে।
এখন নির্বাচনের ফলাফল কী দাঁড়ায়, তা নিয়ে অভিবাসীদের মধ্য চলছে নানা আলোচনা।