কাউসার মুমিন, নিউ ইয়র্ক: অবশেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে প্রেসিডেন্ট ওবামার মনোনয়ন পাচ্ছেন সিনেটর জন কেরি। ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার মনোনয়নের বিষয়টি এখন একেবারেই নিশ্চিত এবং এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ‘সিনেট কমিটি অন ফরেন রিলেশনস’-এর মেজরিটি লিডার অফিসের একটি সূত্র এ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছেন। ডেমোক্রেট সংখ্যাগরিষ্ট বর্তমান সিনেটের ‘কনফার্মেশন হিয়ারিং’-এ সিনেটর জন কেরির নিশ্চিত জিতে আসার সম্ভাবনা থাকায় নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে তার দায়িত্ব পালনের বিষয়টি এখন সুনিশ্চিত।
তাছাড়া রিপাবলিকান দলীয় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন সিনেটর ইতিমধ্যেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সিনেটর কেরিকে স্বাগত জানিয়েছেন, যা সিনেট হিয়ারিং-এ জন কেরির দ্রুত মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে বিষয়টি হোয়াইট হাউস এখনও নিশ্চিত করেনি। কিন্তু এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুখপাত্রের অফিস থেকে নিশ্চিতভাবে কিছু না জানানো হলেও বিষয়টি নাকচ করা হয়নি। এদিকে এবিসি নিউজের হোয়াইট হাউস টিমের একটি সূত্র জানিয়েছে, ডিফেন্স সেক্রেটারি পদে প্রাক্তন রিপাবলিকান সিনেটর চ্যাক হ্যাগেল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী (সেক্রেটারি অব স্টেট) পদে সিনেটর জন কেরির মনোনয়নের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা, ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-এর সঙ্গে পরামর্শ করেছেন এবং এ দু’টো পদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন বলে নিশ্চিত খবর পাওয়া গেছে। এমনকি এ দু’টো পদে পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউস-এর প্রয়োজনীয় ভেটিং প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করে হোয়াইট হাউস-এর পক্ষে এখনই মনোনয়নের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো সম্ভব হচ্ছে না।
পাকস্থলির ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে অসুস্থ এবং নিজ বাসভবনে চিকিৎসাধীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন পুরোপুরি সেরে না ওঠা পর্যন্ত এ ঘোষণা বিলম্বিত হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য কেবিনেট পোস্টের মনোনয়ন এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় এবং সামপ্রতিক স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে শুটিং ট্রাজেডির পর দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করে নতুন কেবিনেটের বিভিন্ন পদের মনোনয়নগুলোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আরও কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত ডেমক্রেট দলীয় সিনেটর জন কেরি ২০০৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বুশের কাছে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন। বর্তমানে মার্কিন কংগ্রেসের সিনেট কমিটি অন ফরেন রিলেশনস-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি এবং বিগত ১৯ বছর ধরে তিনি এ কমিটির সদস্য। বলা হয়ে থাকে, প্রায় এক যুগ ধরে সিনেটর কেরি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের রিহার্সেল করে যাচ্ছেন এবং ওবামার প্রথম মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে হিলারি ক্লিন্টন দায়িত্ব নিতে না চাইলে সিনেটর কেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার কথা চূড়ান্ত ছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে প্রেসিডেন্ট ওবামার একান্ত পছন্দের প্রার্থী ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি সুসান রাইস। কিন্তু রিপাবলিকানরা প্রথম থেকেই তাকে অতিমাত্রায় ওবামাপন্থি বলে তার মধ্যে ওবামা তোষণ ব্যতীত আর কোন রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণাবলি নেই বলে অভিযোগ করতে থাকে। এরপর এ বছর লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন দূতাবাসে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে এক বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে রিপাবলিকান দলীয় সিনেটরদের প্রবল বিরোধিতার মুখে শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বিবেচনা থেকে তাঁর নাম বাদ দিতে প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছে আবেদন করেন সুসান রাইস এবং প্রেসিডেন্ট তা গ্রহণও করেন। ওই আবেদনে সুসান রাইস বেনগাজির মার্কিন দূতাবাসে হামলা সম্পর্কিত তার মন্তব্য এবং এ বিষয়ে বর্তমান প্রশাসনের ভূমিকাকে আবারও সমর্থন করে ‘সিনেটে মনোনীত হওয়ার সম্ভাব্য অহেতুক দীর্ঘসূত্রতা এড়ানো’র জন্যই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন।
Leave a Reply