শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭

ট্রাম্পের ব্যাপক সমালোচিত ঘটনার কারণে দল ছাড়লেন শীর্ষ রিপাবলিকান

ট্রাম্পের ব্যাপক সমালোচিত ঘটনার কারণে দল ছাড়লেন শীর্ষ রিপাবলিকান

শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: ডোনাল্ড ট্রাম্পযুক্তরাষ্ট্রের বহুল আলোচিত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে নিজ দল রিপাবলিকান শিবিরে হতাশা বাড়ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেয়া ও তার বিতর্কিত সব মন্তব্যের কারণে রিপাবলিকান দলের মধ্যে বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। জেব বুশের শীর্ষ উপদেষ্টা স্যালি ব্রাডশ তো এবার দলই ত্যাগ করলেন।

তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প একটা গোঁয়াড়, নারী বিদ্বেষী ও স্বকামী। তিনি নারীদের সম্মান দিতে জানেন না। তাই স্যালি এবার ভোট দেবেন হিলারি ক্লিনটনকে। বললেন, ফ্লোরিডায় যদি ভোটের ব্যবধান কম হয় তাহলে তিনি হিলারিকেই ভোট দেবেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন।

ট্রাম্প বসে থাকার লোক নন। ওবামাকে পাল্টা আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। ওবামাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের জঘন্যতম প্রেসিডেন্ট বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। বলেছেন, হিলারিই একজন অযোগ্য প্রার্থী। তিনি অসততা ও ভ্রান্ত বিদেশনীতির অনুসারী। হিলারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার কোনো যোগ্যতাই রাখেন না।

ট্রাম্প শিবিরে বিতর্ক আর ঝুট-ঝামেলা লেগেই আছে। এসবে ভালোই প্রচার-রসদ পেয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম।

ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়ার কিছু নগ্ন ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে হইহই হচ্ছে। দেশটির প্রয়াত মুসলিম সেনাসদস্য ক্যাপ্টেন হুমায়ুন খানের আত্মত্যাগকে উপহাস করে রিপাবলিকান-ডেমোক্রেটিক উভয় শিবির থেকে তোপের মুখে আছেন ট্রাম্প।

অন্য এক খবরে বলা হয়েছে স্যালি কিভাবে তার ভিতরকার সব ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেয়া ও ইরাক যুদ্ধে নিহত সেনা হুমায়ুন খানের পিতামাতাকে অবমাননা করে ট্রাম্পের দেয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এরই মধ্যে রিপাবলিকান দলের শীর্ষ নেতারা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন সিনেটর জন ম্যাককেইন (গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী), প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পল রায়ান ও সিনেটর মিচ ম্যাককনেল।

এছাড়া আরও অনেকে রয়েছে। তারা খিজির খান দম্পতিকে অবমাননার জন্য ট্রাম্পের সমালোচনা করলেও তার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেন নি। কিন্তু স্যালি প্রকাশ্যে সেই সাহস দেখিয়েছেন। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ভাই জেব বুশের ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন কয়েক দশক ধরে। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন লড়াইয়ে তিনি ছিলেন জেব বুশের সিনিয়র একজন উপদেষ্টা। কিন্তু ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে তার মতো সিনিয়র একজন রিপাবলিকান দল ত্যাগ করলেন। অন্য কোন দলেও তিনি যোগ দেন নি।

তিনি সিএনএনের সাংবাদিক জেমি গ্যাঞ্জেলকে দেয়া ইমেইল সাক্ষাৎকারে বলেন, রিপাবলিকান দল সঙ্কটকালে (ক্রসরোড) রয়েছে। মনোনয়ন দিয়েছে পুরো একজন স্বকামী, নারী বিদ্বেষী ও একজন গোঁয়াড়কে। এখন সময় এসেছে দেশকে রাজনৈদিক দলের উর্ধ্বে উঠে আসতে হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন না।

স্যালি ব্রাডশ বলেছেন, এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে একটি পরীক্ষা। আমি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নীতির ধারা আরও চার বছর দেখতে চাই না। কিন্তু আমি আমার সন্তানদের চোখের দিকে তাকাতে পারি না এবং তাদের বলতে পারি না যে, আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেব। তাদেরকে যেভাবে প্রতিবেশী সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে তার প্রেক্ষিতে আমি আমার সন্তানদের বলতে পারি না যে, তোমার প্রতিবেশীকে সম্পান কর এবং তারপর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দাও। আমি এটা করতে পারবো না।

উল্লেখ্য, এবার ফিলাডেলফিয়ায় ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন ইরাক যুদ্ধে নিহত মুসলিম মার্কিন ক্যাপ্টেন হুমায়ুন খানের পিতা খিজির খান ও মা গাজালা খান। খিজির খান ওই সম্মেলনে তার সন্তানের কথা তুলে ধরে তীব্র সমালোচনা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তার জবাবে অত্যন্ত কড়া ভাষায় তাদের সমালোচনা করেন ট্রাম্প।

তার এমন সমালোচনার জবাবে স্যালি ব্রাডশ বলেছেন, ওই পরিবারটির সম্মান খর্ব করায় আমার বুকের ভিতরটা ভেঙে গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন নারীকে অসম্মানিত করেছেন, যে নারী এমন এক ছেলের জন্ম দিয়েছেন- যিনি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। তাই স্বতন্ত্র ভোটার হওয়ার জন্য এ ঘটনাই আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। স্যালি ব্রাডশ বলেন, যে পরিবার তার প্রিয়জনকে এদেশের সেবায় হারিয়েছে, যে পরিবারের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে কাজ করে তাদেরকে সম্মান জানানো উচিত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে। যোদ্ধা ও তার পরিবারগুরো সম্মান পাওয়ার এ অধিকার অর্জন করেছেন। যিনি প্রেসিডেন্ট হতে চান তাকে এই ধ্যানধারণা বুঝতে হবে ও সম্মান জানাতে হবে। আমি দল থেকে সরে যাওয়ার কথা চিন্তা করছিলাম কয়েক মাস ধরে। আমি ট্রাম্পের ঘৃণামুলক বক্তব্য মানতে পারছিলাম না। তার মধ্যে রক্ষণশীল মূলনীতি ও দর্শনের পুরোপুরি ঘাতটি রয়েছে।

স্যালি ব্রাডশ বলেন, আমি সহজভাবে আমার সিদ্ধান্ত নিই নি। দলকে এই অবস্থায় আনতে আমিও কটোর পরিশ্রম করেছি। কিন্তু ট্রাম্প রিপাবলিকান দলকে নিয়ে গেছেন ভিন্ন এক পথে। এতে প্রচুর রিপাবলিকান শুধু দেখছেন

ট্রাম্প বলছেন, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁকে হারাতে কারচুপি হতে পারে। ট্রাম্পের যোগ্যতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নির্বাচনের এখনো তিন মাস বাকি। এর মধ্যেই নানা নাটকীয়তা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ট্রাম্পের উদ্ধত আচরণ ও বেফাঁস মন্তব্যে দিশেহারা রিপাবলিকান পার্টি। দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা প্রকাশ্যে ট্রাম্পের পক্ষে নেই। আবার দলে প্রতিষ্ঠিত নেতাদের জোট বেঁধে বিরোধিতাও দেখা যাচ্ছে না।

মার্কিন গণমাধ্যমে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে ট্রাম্পকে নিয়েই চলছে যত আলোচনা।

ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য অযোগ্য উল্লেখ করে রিপাবলিকান নেতাদের তাঁর ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করতে আহ্বান জানিয়েছেন ওবামা। তাঁর এই আহ্বানকে ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করছেন মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

ইতিহাসবিদ ডাগলস ব্রিংকলি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে নিকট অতীতে এমন ঘটনা একবারই ঘটেছিল।

গতকাল মঙ্গলবার ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে প্রচারের সময় আরেক কাণ্ড ঘটিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্যের সময় একটি শিশু কাঁদছিল। এ সময় ট্রাম্প বলেন, ‘আমি শিশুদের ভালোবাসি। শিশুটি সুন্দর। শিশুটির মা সুন্দর।’

ওই মন্তব্য করে ট্রাম্প অন্য প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মায়ের কোলে থাকা শিশুটি অবিরাম কাঁদছিল। কিছুক্ষণ পরে ট্রাম্প চরম বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আসলে আমি আগে উপহাস করছিলাম। শিশুটিকে এখনই সভা থেকে বের করে দেওয়া হোক।’

ট্রাম্পের এমন আচরণে সভায় উপস্থিত লোকজনের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

একই সভায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প পশ্চিমা নেতাদেরও সমালোচনা করেন।

ট্রাম্প নিজ দলের প্রভাবশালী দুই নেতা স্পিকার পল রায়ান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জন ম্যাককেইনের পুনর্নির্বাচনে কোনো সহযোগিতা করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

ট্রাম্পের মেয়ে ইহঙ্কা ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ওবামার বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর বাবা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যোগ্য মানুষ।

ইহঙ্কা ট্রাম্প বলেন, রাজনীতির মানুষ হিসেবে আমেরিকার প্রকৃত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন তাঁর বাবা।

বাছাইপর্বে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধরাশায়ী করার কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, হিলারিকে নির্বাচনে হারানো কোনো ব্যাপারই না।

আইওয়া অঙ্গরাজ্যে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, নির্বাচন-পদ্ধতিটা এমনিতেই গোলমেলে। আগামী নির্বাচনে কারচুপি করে তাঁকে হারানো হতে পারে।

ট্রাম্পের অভিযোগের অসারতা নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো মেতে উঠেছে। ট্রাম্পের অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন মার্কিন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

পিউ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ডেভিট বেকার বলেছেন, গত দুই দশকের নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নির্বাচন পরিচালনা কাজে নিয়োজিত লোকজন সর্বোচ্চ সততা ও পেশাদারি নিয়ে কাজ করেছেন।

ট্রাম্পের নানা বিতর্কিত বক্তব্য এবং গণমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে আলোচনার প্রভাব জাতীয় জনমত জরিপে পড়েছে। সিএনএন পরিচালিত সবশেষ জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি জনসমর্থনে এগিয়ে আছেন হিলারি।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প শিবিরে ক্রমশ হতাশা বাড়ছে। ট্রাম্পের ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের কারণে তাঁর প্রচারণা শিবিরের লোকজনই বিরক্ত।

উল্লেখ্য, স্যালি ব্রাডশ এর আগে ১৯৮৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের প্রচারণা দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। সর্বশেষ তিনি তারই পুত্র জেব বুশের উপদেষ্টা ছিলেন। তার মতো একজন রিপাবলিকানের দলত্যাগের মধ্য দিয়ে দলের ভিতরে ট্রাম্প বিরোধিতা প্রকট হয়ে উঠেছে। তিনি দলের ভিতর ছিলেন প্রভাবশালী ও সম্মানীত সদস্য।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024