বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯

বুরকিনি নিষিদ্ধ হচ্ছে ফ্রান্সের আরও তিন শহরে

বুরকিনি নিষিদ্ধ হচ্ছে ফ্রান্সের আরও তিন শহরে

র্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: ফ্রান্সের আরও তিনটি শহরে মুসলিম নারীদের পোশাক বুরকিনি নিষিদ্ধ হচ্ছে।

এ শহরগুলো হলো লুকেট, চ্যানেল টাউন এবং লি তোকুয়েত। এর আগে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কান, ভিলেনুয়েভ লুবেত এবং কারসিকার সিসকোতে। সব মিলিয়ে বুরকিনি নিষিদ্ধ হচ্ছে মোট ৬টি শহরে। ফ্রান্সের একটি অনলাইন মিডিয়া বার্তা সংস্থা এএফপি’কে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে।

উল্লেখ্য, বুরকিনি হলো এমন একটি পোশাক যা পরলে একজন নারীর পুরো শরীর ঢেকে থাকে। তার শুধু মুখ ও হাত দেখা যায়। এ পোশাক পরা নিয়ে কারসিকার সিসকোতে বড় ধরণের এক সংঘর্ষ হয়ে গেছে। তাতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে কর্তৃপক্ষ।

শহরগুলোতে, বিশেষ করে পর্যটন স্পট, সমুদ্র সৈকতে এ পোশাক নিষিদ্ধ করায় স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মুসলিমরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে চলছে গরম বিতর্ক। সেই বিতর্কের মাঝেই বুরকিনি নিষিদ্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস। বুরকিনি পরাওয়ালাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, এ পোশাক ফ্রান্স ও এ প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এ পোশাক।

যেসব শহরের মেয়র এ পোশাককে নিষিদ্ধ করছেন তিনি তাদেরকে সমর্থন করেন, যদি তারা জনগণের ভালোর জন্য এটা করে থাকেন। ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অবকাশ যাপন কেন্দ্র হলো লুকেট শহর। মঙ্গলবারই বুরকিনি নিষিদ্ধ করার পক্ষে একটি মিউনিসিপ্যালিটির ডিক্রিতে স্বাক্ষর করার কথা এ শহরের মেয়র মাইকেল পাই’য়ের। ওই নিষেধাজ্ঞায় সমুদ্র সৈকতগুলোতে বুরকিনি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এ ডিক্রি বলবৎ থাকবে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত।

ডিক্রিতে বলা হয়েছে, এ সময় পর্যন্ত ‘যদি কেউ যথাযথ পোশাক পরিধান না করেন নৈতিক আচরণের প্রতি সম্মান না দেখান, ধর্মীয় নিরপেক্ষতা না মানেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করেন, গোসল করার সময় নিরাপত্তা না মানেন’ তাহলে তাকে পাবলিক সমুদ্র সৈকতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। ‘এসব মূলনীতি অনুসরণ করে এমন পোশাক পরতে হবে সমুদ্রে গোসল করার সময়’।

অন্যদিকে পরপিগনান থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় শহর লুকেট। ওদিকে চ্যানেল টাউনের মেয়র ওইই-প্লাগ মঙ্গলবার বলেছেন, সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার সময় মাথা ঢেকে, হাতে গ্লোভস পরে, মুখ ও চোখ ঢাকা পোশাক পরে যান নারীরা। এমন দৃশ্য তিনি রোববার দেখেছেন।

এরপরই তিনিও সেখানে বুরকিনি নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেবেন। কাছেরই অবকাশ যাপন কেন্দ্র লি তোকুয়েতের মেয়র ও স্থানীয় এমপি ডানিয়েল ফাককুয়েলও বলেছেন, তিনিও কয়েক দিনের মধ্যে বুরকিনি নিষিদ্ধ করবেন। তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে লি তোকুয়েত সৈকতে কোন বুরকিনি নেই।

উল্লেখ্য, ফ্যান্সে গত ১৯ মাসে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ হামলা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই ইসলামপন্থি উগ্রবাদীরা ঘটিয়েছে। এর ফলে দেশটি দেশের ভিতর বেড়ে ওঠা ধর্মীয় উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এর ফলেই তাদের চোখ পড়েছে বুরকিনির দিকে। ফ্রান্স একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। সেখানে এমন ধর্মীয় পোশাক নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। ১৪ই জুলাই নিস শহরে তিউনিশিয়ার এক ট্রাক চালক জনতার ভিড়ে ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে হত্যা করে কমপক্ষে ৮৫ জনকে। এ হামলার দায় স্বীকার করে আইএস। ২৬শে জুলাই একটি চার্চে হত্যা করা হয একজন ধর্মযাজককে। দু’হামলাকারীর সঙ্গে আইএসের যোগসূত্র ছিল বলে দাবি করা হয়।

এর কয়েক দিন পরেই কান শহরের কোট ডিআজুর শহরে বুরকিনি নিষিদ্ধ হয়। আগস্টের শুরুতেই বুরকিনি নিষিদ্ধ হয় ভিলেনুভে-লুবেট অবকাশ যাপন কেন্দ্রে। ওদিকে রোববার বুরকিনিকে কেন্দ্র করে করসিকান শহর সিসকোতে সংঘর্ষ হয়। সেখানে উত্তর আফ্রিকার কয়েকটি পরিবার অবকাশ কাটাতে গিয়েছিল সৈকতে। নারীরা পরেছিলেন বুরকিনি। তাদের ছবি তুলতে যায় স্থানীয় কিছু যুবক। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পর্যটকদের ওপর হাতুড়ি ও তুরপুন নিয়ে হামলা চালায় তারা।

এতে অন্তঃসত্ত্বা এক নারী সহ আহত হন ৫ জন। তাদেরকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সিসকোতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফ্রান্সে প্রথম বুরকিনি নিষিদ্ধ করা হয়েছে কান শহরের কাছেই ম্যান্ডেলিউ লা নেপোলি’তে। ২০১৩ সালের জুলাইতে সেখানে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024