শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: বিবিসির তুমুল জনপ্রিয় খাবার বিষয়ক অনুষ্ঠান দ্য গ্রেট বৃটিশ বেইক অফ এর ২০১৫ মৌসুমের বিজয়ী নাদিয়া হুসেনকে নিয়ে চলছে দুই পর্বের সিরিজ। বিবিসির এই সিরিজের নাম দ্য ক্রনিকলস অব নাদিয়া।
ইতিমধ্যে একটি অংশ প্রচারিতও হয়েছে। বাংলাদেশে পিতামাতার আদিভূমিতে বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই সিরিজের বড় অংশজুড়ে ছিল বাংলাদেশে আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে তার আবেগমাখা পুনর্মিলনের বিবরণ। পাশাপাশি তাদের জন্য কী খাবার তিনি বানিয়েছেন, তা-ও দেখানো হয়েছে।
বৃটেনের দ্য টেলিগ্রাফ লিখেছে, দ্য বেইক অফ তারকা দৃষ্টি কেঁড়েছেন হিজাব নিয়ে মন্তব্য করেও। কেন তিনি হিজাব পরেন, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ক্যামেরার সামনেই তিনি বলেন, আমি যখন ১৪ বছর তখন থেকে হিজাব পরে আসছি। অর্থাৎ ১৭ বছর ধরে। এমন নয় যে আমি ধর্মীয় পরিবার থেকে এসেছি।
বরং আমি আসলে এসেছি একেবারেই বিপরীত একটি পরিবার থেকে। হিজাব আসলে এমন কিছু যাতে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। নাদিয়া বলে যান, এটি হলো মুসলিম হওয়া ও ইসলাম চর্চার একটি লক্ষণ। শালীনতার লক্ষণ। চুল এমন জিনিস যাকে সুন্দর জিনিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আপনি এ সুন্দর জিনিস শুধু নির্দিষ্ট মানুষের জন্যই যতœ করে রেখে দেবেন।
বৃটিশ স্থানীয় সময় গত রাতে প্রচার হয় ক্রনিকলস অব নাদিয়া’র একটি পর্ব। এ পর্ব এমন সময় প্রচার হলো যখন এক মুসলিম নারীকে সমুদ্র সৈকতে বুরকিনি (পুরো শরীর ঢাকা সাতারের পোশাক) খুলে ফেলতে পুলিশ বাধ্য করায় বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের ওই আচরণ ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়েছে। অনেক মানুষ ওই পুলিশদেরকে ‘নারীবাদী-বিরোধী’ (অ্যান্টি-ফেমিনিস্ট) আখ্যা দিয়েছে।
টেলিগ্রাফের খবর, ক্রনিকলস অব নাদিয়া’র সম্প্রচারের পরই অনেকে টুইটারে প্রতিক্রিয়া জানান। যে পোশাককে ঘিরে অন্যত্র দেখা মিলে আতঙ্ক, অজ্ঞতা আর ইসলামভীতি, সেই পোশাক নিয়ে নাদিয়ার ‘পা মাটিতে রাখা’ (ডাউন-টু-আর্থ) সরলতা এবং ইতিবাচক মন্তব্যের প্রশংসা করেছেন অনেকে।
বৃটিশ স্ট্যান্ডঅফ কমেডিয়ান ডেভিড মরগ্যান লিখেছেন, দ্য ক্রনিকলস অব নাদিয়ায় ২০ সেকেন্ড নাদিয়া তার হিজাব নিয়ে কথা বলেছেন। এটুকুই বিষয়টি কারও বোঝার জন্য যথেষ্ট।
তিনি আরও লিখেছেন, এটি ছিল অসাধারণ। নাদিয়া দারুণ! খোঁচা মেরে এ কমেডিয়ান এ-ও লিখেছেন, এই সিরিজ ফরাসি টেলিভিশনে দেখানোর কোন সুযোগ আছে?
কেভিন ব্রাডি নামে একজন টুইটারে লিখেছেন, যে দিনটিতে আমরা দেখলাম ফরাসি পুলিশ নারীদের হয়রানি করছে, সেই দিনে হিজাব নিয়ে নাদিয়ার কথা বলা খুবই গুরত্বপূর্ণ মনে হলো। খুবই স্পষ্ট এবং অল্প কথায় সব বলা হয়ে গেছে।
অ্যানা মুরে নামে একজন লিখেছেন, আজকে ওই খবরগুলোর পর হিজাব নিয়ে নাদিয়ার মন্তব্য খুবই তীক্ষ্ম ও মর্মভেদী মনে হয়েছে। ক্রনিকলস অব নাদিয়া অবশ্যই দেখা উচিৎ।
অনেকে নাদিয়াকে নারী ক্ষমতায়নের উদাহরণ হিসেবে প্রশংসা করেছেন। কারণ, তিনি বলপূর্বক নয়, স্বেচ্ছায় এ হিজাব পরার জন্য বেছে নিয়েছেন। সারা ব্রাশ নামে একজন লিখেছেন, ক্রনিকলস অব নাদিয়া ভালোবাসতে শুরু করেছি।
ফ্রান্সের খবর শোনার পর, যখন একজন মুসলিম তরুণী নারী কথা বলেন কেন তিনি হিজাব বেছে নিয়েছেন, তখন ভালো লাগে।
ফ্রাঙ্কি সেস রিল্যাক্স নামে একজন বলেন, যদি কেউ ভেবে থাকেন হিজাব পরিধানের অর্থ নারীদের নির্যাতন, তাহলে এখনই ক্রনিকলস অব নাদিয়া দেখুন এবং শুনুন নাদিয়া ও তার কাজিন এ নিয়ে কী বলছেন।
নিজের ধর্মবিশ্বাস নাদিয়ার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু এ টিভি তারকা কেন হিজাব পরা শুরু করেছিলেন, তা বেশ মজার।
তিনি দ্য টাইমসের কাছে বলেছিলেন যে, তিনি প্রথম হিজাব পরার সিদ্ধান্ত নেন যখন তার পিতা তার বেশ বাজে হেয়ার কাট দিয়েছিলেন! নিজের কৈশরে তখন এ চুলের কাট নিয়ে ভীষণ বিরক্ত হন তিনি! আর চুল ঢাকতে শুরু করেন হিজাব পরে।