শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: ফ্রান্সে বুরকিনি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আদালতের রায়ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফানি দুজাররিক বলেছেন, আমরা আদালতের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু ফ্রান্সের ডানপন্থি রাজনীতিকরা আদালতের রায় সত্ত্বেও বুরকিনি নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার পক্ষে কথা বলেছেন।
এমন নেতার মধ্যে রয়েছেন উত্তরাঞ্চলের করসিকা এলাকার সিসকোর মেয়র অ্যাঙ্গে পিয়েরে ভিভোনি, ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি, ফ্রন্ট ন্যাশনাল দলের নেতা মেরি লি পেন, নিস শহরের ডেপুটি মেয়র ক্রিশ্চিয়ান এসত্রোসি, প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস সহ বিভিন্ন নেতা। তারা বুরকিনি নিষিদ্ধ করার পক্ষে জোরালো মত দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এতে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের একটি আদালত মুসলিম নারীদের বিশেষ পোশাক বুরকিনি নিষিদ্ধ করাকে ‘সিরিয়াসলি অ্যান্ড ক্লিয়ারলি ইলিগ্যাল’ বলে রায় দিয়েছেন। ওই রায়ে বলা হয়েছে বুরকিনি নিষিদ্ধ মারাত্মক ও সুস্পষ্টভাবে অবৈধ সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে জাতিসংঘ। তারা আদালতকে সমর্থন করেছে।
মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক বলেছেন, মানুষের মর্যাদা ও ব্যক্তিগত বিষয়কে সম্মান জানানোর বিষয়টি সুস্প ষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়েছে এ রায়ে। এর মাধ্যমে আমাদের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে। আদালতের রায় প্রকাশের পর তিনি বলেছেন, এ রায় মানুষের মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। নারীদের মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। বিশেষ করে (ফ্রান্সে যে ঘটনার কারণে এ পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে) যে কারণে এ পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার সঙ্গে এ পোশাক সম্পর্কে আমি যেসব ছবি দেখেছি তার কোন মিল নেই।
আর এ নিয়ে শুধু ফ্রান্সেই নয়, সারাবিশ্বে ক্ষোভ দেখা দেয়। ফ্রান্সের কয়েকটি শহরের মেয়র এ পোশাক নিষিদ্ধ করেন। এ নিয়ে করসিকার সিসকোতে গত সপ্তাহে তীব্র সংঘর্ষও হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি আদালতে ওঠে। বিচারক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন, পোশাকটি নিষিদ্ধ করা হলো মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
তাইরই প্রেক্ষিতে তারা বলেন, সাঁতারের এ পোশাকটি জন নিরাপত্তায় কোন ঝুঁকি সৃষ্টি করে এর স্বপক্ষে পর্যাপ্ত কারণ পাওয়া যায় নি। তবে ডানপন্থি রাজনীতিকরা মনে করেন এ পোশাকটি হলো এক ধরণের প্ররোচণা। এ নিয়ে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। আদালত এ পোশাক নিষিদ্ধ করায় ও সে সিদ্ধান্তে জাতিসংঘ সমর্থন দিলেও ফ্রান্সের ডানপন্থি রাজনীতিকরা বুরকিনি নিষিদ্ধ করার পক্ষেই। তারা প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন, নিষেধাজ্ঞা তারা অব্যাহত রাখবেনই।
সিসকো শহরের মেয়র অ্যাঙ্গে-পিয়েরে ভিভোনি বলেছেন, এ শহরে উত্তেজনা অত্যন্ত বেশি। আমি কোনভাবেই এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবো না। একই রকম প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি। তিনি আগামী বছর সেখানে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন এরই মধ্যে।
সারকোজি বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে দেশজুড়ে বুরকিনি নিষিদ্ধ করবেন। তিনিও বুরকিনিকে একটি উস্কানি হিসেবে দেখেন।
সারকোজি বলেন, ফ্রান্সের সৈকত ও সুইমিং পুলগুলোতে বুরকিনি অনুমোদন দেয়াকে আমিও প্রত্যাখ্যান করি। এই প্রজাতন্ত্রজুড়ে এ পোশাককে নিষিদ্ধ করার জন্য অবশ্যই আইন করতে হবে। কারণ, আমাদের পরিচয় এখন হুমকির মুখে। এরই মধ্যে আমরা অভিবাসন বিষয়ে এমন নীতি গ্রহণ করেছি, যার কোন অর্থই হয় না। ফ্রন্ট ন্যাশনাল দলের নেতা মেরি লি পেন বুরকিনির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেছেন, বুরকিনি নিষিদ্ধের লড়াই শেষ হয়ে যায় নি। এখন জাতীয় পর্যায়ে একটি প্রস্তাব আনা উচিত। কেন্দ্রীয় সরকারকে তা করতে হবে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব। নিস শহরের ডেপুটি মেয়র ক্রিশ্চিয়ান এসত্রোসি তার কথার প্রতিধ্বনি তুলেছেন।
তিনি টুইটারে লিখেছেন, আমাদের একটি আইন করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস মুসলিম নারীদের সাঁতারের এ পোশাককে বর্ণনা করেছেন ‘নারীদের দাসত্বে আটকে রাখা’ হিসেবে।
ওদিকে আইএফপপের একটি জরিপ অনুযায়ী, ফ্রান্সের শতকরা ৬৪ ভাগ মানুষ বুরকিনি নিষিদ্ধের পক্ষে।
উল্লেখ্য, বুরকিনি হলো মুসলিম নারীদের সাঁতারের এমন একটি পোশাক যাতে সারা শরীর ঢাকা থাকে। মুখমন্ডল, হাত ও পা শুধু বাইরে থাকে। তবে এ পোশাকের সঙ্গে বোরকার কোন মিল নেই। ফ্রান্সে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত সহ কতগুলো শহরে এ পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়।