নিউজ ডেস্ক: টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের পতনের পেছনে যে চার ব্যক্তি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন তারা এখন দেউলিয়া হওয়ার মুখোমুখি। সানডে টাইম অবলম্বনে এই খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের অন্যতম জনপ্রিয় সাপ্তাহিকী জনমত।
খবরে বলা হয় ইতোমধ্যেই মামলায় পরাজিত লুৎফুর রহমান নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন। এবার মামলার বাদিরা দেউলিয়া হতে যাচ্ছেন। খোদ তাদের আইনজীবি মামলার খরচ না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
ডেবি সিমন, এন্ডি আরলাম, আজমল হোসেন ও এঞ্জেলা মোফাটকে সলিসিটর রিচার্ড স্লেড এ্যান্ড কোম্পানী ২লাখ ১০ হাজার পাউন্ডের বিল দিয়েছেন। এই বিল পরিশোধের জন্য কোম্পানী চারজনকে নোটিশ দিয়েছে। সানডে টাইমস পত্রিকার এক রিপোর্টে এ বিষয়টি জানাগেছে।
ডেবি সিমন সানডে টাইমকে বলেন, লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা লড়ে তিনি এখন আর্থিক ধ্বংসের মুখোমুখি। তিনি এই লড়াই শুরু না করলেই ভাল করতেন। সিমন বলেন, মামলায় হারলে আমরা আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হবো সেটা জানতাম। কিন্তু আমরা মামলায় জয়ী হওয়া সত্ত্বেও এই সংকটে পড়েছি।
আজমল হোসেন সানডে টাইমসকে বলেন, কমিউনিটির বিজয় হয়েছে, তারা সুফল পেয়েছেন কিন্তু আমাদের কোন লাভ হয়নি। এটা ছিল একটি দু:স্বপ্ন, আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সিদ্ধান্ত এটি।
মামলা চলাকালিন এই চার ব্যক্তি সলিসিটরকে কোন ফিস দিতে পারেন নি। তারা একমাত্র পেশাদার সহায়তা পেয়েছেন একজন জুনিয়র ব্যারিস্টার ফ্রান্সিস হোর এর কাছে থেকে। ফ্রান্সিস হোর কাজের প্রশংসাও করেন বিচারক।
মামলা শেষ হওয়ার পরে চার ব্যক্তি ফ্রান্সিস হোর এর বিল পরিশোধের জন্যে লুৎফুর রহমানের কাছ থেকে মামলার খরচ আদায়ে তারা রিচার্ড স্লেড এ্যান্ড কোম্পানীকে নিয়োগ করেন। তারা অভিযোগ করেন রিচার্ড স্লেড এ্যান্ড কোম্পানী তাদের ৩২০ পাউন্ড ঘন্টা হিসাবে অনেক বেশি চার্জ করেন। ডেবি সিমন বলেন, লুৎফুর রহমানের সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু সম্পত্তির দাম থেকে এর আইনি খরচ পড়েছে অনেক বেশি। তাই আমাদের অবস্থা এখন পূর্বের চেয়েও খারাপ।
স্লেড সলিসিটরের উচ্চমূল্যের কারণে তারা তাকে বাদ দিলে চুক্তি অনুযায়ী সলিসিটর কোম্পানী তাৎক্ষনিকভাবে তাদের বিল পরিশোধের জন্য চাপ দিয়েছে।
রিচার্ড স্লেড এ্যান্ড কোম্পানী ২১০,৫৭০ পাউন্ডের বিল পাঠিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধের জন্য চাপ দিয়েছে। অন্যতায় তারা তা উদ্ধারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নোটিশও দিয়েছে।
ডেবি সিমন এবং অন্যান্যরা এই বিল কমানোর জন্যে নিগোশিয়েট করতে এডমন্ড মার্শাল ম্যাক মোহন নামের আরেকটি সলিসিটর কোম্পানী নিয়োগ করেছে। সিমন সানডে টাইমসকে বলেছেন তা সত্ত্বেও তারা ৬ অংকের একটি বিল পরিশোধের মুখোমুখি রয়েছেন।
এদিকে টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগস, সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে পিটিশনকারী চার ব্যক্তির এই দু:সমেয় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, কমিউনিটির স্বার্থের কথা চিন্তা করেই এই চার ব্যক্তি বড় ধরণের চ্যালেঞ্জে নিয়েছিলেন। আইনের মাধ্যমে তারা যাতে দেউলিয়া হবার হাত থেকে রক্ষা পান এই আবেদন রেখে জন বিগস বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তারা প্রশংসা পাবার যোগ্য, দেউলিয়া হবার নয়।
উল্লেখ্য টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, ইমামদের দিয়ে ভোটে প্রভাব বিস্তার, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষের অপপ্রচার এবং সরকারি অর্থ দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৫ সালে ২৩ এপ্রিল নির্বাচনী আদালত লুতফুর রহমানের মেয়ল পদ শুন্য ঘোষণা করে পুননির্বাচনের আদেশ দেয়।
সেইসঙ্গে পাঁচ বছর লুৎফুর রহমানের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার উপর দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। বিচারক রিচার্ড মাওরি ওই রায়ে চার বাদির মামলার খরচ হিসাবে আড়াই লাখ পাউন্ড তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধের নির্দেশ দেন।