শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: আগামী ১৪ই অক্টোবর এক ঝটিকা সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট ঢাকা আসছেন। দিনের হিসাবে সফরটি দু’দিনের হলেও ২৪ ঘণ্টার কম সময় বাংলাদেশে কাটাবেন তিনি।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বহুল প্রতীক্ষিত বাংলাদেশ সফরে বিলিয়ন ডলারের অন্তত ডজনখানেক চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা। সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তারা এমনটাই আভাস দিয়েছেন।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাবেন চীনের প্রেসিডেন্ট। সেখানে ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিটে অংশ নেবেন তিনি। আগামী ১৫ ও ১৬ই অক্টোবর ভারতের গোয়ায় ওই সামিট হবে। গুরুত্বপূর্ণ ওই আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যোগ দেবেন। চীনা প্রেসিডেন্টের ব্যস্ততার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই বাংলাদেশে তার সফরের কর্মসূচি চূড়ান্ত করছে ঢাকা ও বেইজিং।
সফরকালে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠক হবে তার। এ সময় যে সব মেগা প্রকল্পের চুক্তি, সমঝোতা বা অর্থায়নের ঘোষণা আসতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ ও উপকূল রক্ষা বাঁধ, আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেল লাইন নির্মাণ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রিপেইড মিটার প্রকল্প, মংলা বন্দর সমপ্রসারণ প্রকল্প, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উন্নয়ন, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে ফোর লেনে উন্নীতকরণ এবং কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী স্যাটেলাইট টাউন গড়ে তোলার প্রকল্প।
এছাড়া, কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী এলাকায় (টানেলের কাছাকাছি) চীনের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বড় বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকালে কর্ণফুলী নদীর নিচে দেশটির অর্থায়নে নির্মিতব্য বাংলাদেশের প্রথম টানেলের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। হাই প্রোফাইল ওই সফরে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দরে চীনা বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। ভারত, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশ ওই মেগা প্রকল্পে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে।
একক কোনো দেশ নয়, বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করে গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে আলোচনা রয়েছে। সেখানে চীনও যুক্ত হতে পারে। প্রেসিডেন্টের সফর নিয়ে আলোচনায় গত ১৫ দিনে দু’দফা পররাষ্ট্র দপ্তরে গেছেন দেশটির ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং। ঈদের আগে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন তিনি।
আর গত মঙ্গলবার বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) খোরশেদ আলমের সঙ্গে। দু’টি বৈঠকের পরই ‘সফর সফল করতে উভয় দেশ কাজ করছে’ বলে মানবজমিনকে জানান সচিবদ্বয়। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত ব্লু ইকোনমিতে সহযোগিতার বিষয়ে চীনের একটি প্রস্তাব নিয়ে গত দেড় বছর ধরে আলোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়েও তার সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের কথা হয়েছে বলে গত মঙ্গলবার জানান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে যান। সেসময় চীনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের তরফেও প্রেসিডেন্ট শিং জিন পিং বরাবর আনুষ্ঠানিক আনুষ্ঠানিক পত্র পাঠানো হয়। এসব আমন্ত্রণের জবাবে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের কথা জানিয়েছিলেন শি জিন পিং।