নিউজ ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার ১৭টি দেশে নিজেদের দূতাবাস ও কনস্যুলেটে রোববার বন্ধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। কেন রোববারকে হামলা বা হামলার হুমকির জন্য সন্ত্রাসীরা বেছে নিয়েছে তা নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন অনলাইন।
দুটি কারণ দেখিয়েছেন সিএনএনের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক পিটার বার্জেন ও বিশেষ প্রতিনিধি বাইলে কাহাল। একটি হচ্ছে রোববার লাইলাতুল কদর (বাংলাদেশে সোমবার) এবং সম্প্রতি ইরাক ও রোববার হামলার দিন ঠিক করার আরেকটি ফ্যাক্টর হিসেবে সিএনএনের সাংবাদিকদ্বয় বলেছেন, গত দুই সপ্তাহে ইরাকে ও লিবিয়া জেল ভেঙে হাজারের বেশি বন্দীকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, এদের অনেকে আল-কায়েদার সদস্য।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার ২৭ রমজান। মুসলমানদের জন্য এটি পবিত্র একটি দিন। মুসলমানদের কাছে শক্তির রাত (নাইট অব পাওয়ার) এটি। মনে করা হয়, এ রাতে পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াত আসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর কাছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ দিনটিতে শহীদ হওয়ার জন্য শুভ বলে বেছে নিতে পারে আল-কায়েদার সদস্যরা। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে এ দিনই আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন তার ইচ্ছা লিখেছিলেন কেননা ওই সময় আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে তোরা বোরায় সংঘর্ষের সময় মার্কিন বোমা হামলায় নিহত হওয়ার ভয় ছিল তার।
সিএনএন জানায়, ২০০০ সালে নাইট অব পাওয়ারে (ওই বছর ৩ জানুয়ারি পড়েছিল দিনটি) আল-কায়েদা জঙ্গিরা ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস দ্য সুলিভ্যান্সে আত্মঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল। ওই হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় কিন্তু একই গোষ্ঠী ১০ মাস পরে ইউএসএস কোল ১০ এ হামলা চালায়। ওই হামলায় ১৭ মার্কিন নৌসেনা নিহত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কনস্যুলেটকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আল-কায়েদা ও এর সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর। ১৯৯৮ সালে তাঞ্জানিয়া ও কেনিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলায় ২০০ বেশি জন নিহত হন। সবশেষ গত বছর ৯/১১ হামলার ১১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন কনস্যুলেটে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়।
মতামতধর্মী ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব কূটনীতিক স্থাপনায় আল-কায়েদার হামলা করার লক্ষ্যের তালিকার উপরের রাখে কেননা এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার প্রতীক এবং এগুলোর অবস্থান খুবই পরিচিত। রোববার যেসব দূতাবাস ও কনস্যুলেট বন্ধ রাখা হয়েছে সেগুলোর অনেকটি অতীতে আল-কায়েদার হামলার শিকার হয়েছে। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১২ মে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আল-কায়েদা সন্ত্রাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস গুড়িয়ে দেয়। ওই হামলায় নিহত হয় ৩৬ জন। এর দেড় বছর পর জেদ্দায় মার্কিন কনস্যুলেটের বাইরের দেয়াল ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা।
২০০৮ সালে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গিরা দুইবার হামলা করে। এসব হামলায় ২১ জন নিহত হয়। ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তালেবান গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্ক কাবুলে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায়। এতে ৫ আফগান পুলিশ ও ১১ বেসামরিক লোক নিহত হয়। কোন দূতাবাস সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্য তা মার্কিন প্রশাসন নির্দিষ্ট করে না বললেও সিএনের এ দুই সাংবাদিক বলেছেন, খুব সম্ভবত মিশরের রাজধানী কায়রোস্থ মার্কিন দূতাবাস হামলার লক্ষ্য। গত মে মাসে মিশর কর্তৃপক্ষ তিনজনকে দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে আটক করে।
Leave a Reply