শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৩:৫৯

শেয়ার বাজার কারসাজির প্রতিবেদনে ক্রিকেটার সাকিবের নাম

শেয়ার বাজার কারসাজির প্রতিবেদনে ক্রিকেটার সাকিবের নাম

শীর্ষবিন্দু নিউজ, ঢাকা / ৩৪৯
প্রকাশ কাল: মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

শেয়ার বাজারে বিভিন্ন সময়ে কারসাজি হলেও রাঘব বোয়ালরা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকেন। কিন্তু এবার শেয়ারের ব্যাপক কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

সংস্থাটির এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে কীভাবে কারসাজি হয়েছে, কারসাজির সঙ্গে জড়িত চক্রের তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। এতে নাম এসেছে মোনার্ক হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাদিয়া হাসানের; যে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।

এই ঘটনায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কারসাজির আলোচিত ‘নায়ক’ আবুল খায়ের হিরোসহ চক্রের অন্য সবাইকে সাড়ে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। জরিমানার অর্থ আদায়ে বিএসইসি থেকে আদেশও জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির জন্য ও বাকি ৫৫ লাখ টাকা বিডিকমের শেয়ার কারসাজির জন্য জরিমানা করা হয়।

ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর ৫৯ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে এবং চলতি বছরের ৭ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ।

প্রতিবেদন বলা হয়, ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে ব্যাপক কারসাজি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা তুলে নিয়েছিলেন এই সময়ের আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের। দেশের শেয়ার বাজারে হিরো নামে বেশি পরিচিত এই বিনিয়োগকারী ও তার স্বজন-সহযোগীরা গত বছরের নভেম্বরে মাত্র ১৫ দিনের কারসাজিতে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেনে ১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা মুনাফা তুলে নেন।

নিজেদের মধ্যে শেয়ার কেনাবেচা করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে এই মুনাফা তুলে নেন তারা। আর কারসাজির জন্য হিরো তার নিজের, বাবার, স্ত্রীর ও বোনের এবং বন্ধুবান্ধব ও অনুসারীদের মোট ১৪টি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন।

ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দামে বড় ধরনের উত্থানের সময় ব্যাংকটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কেনাবেচার সঙ্গে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিল বলে ডিএসইর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। জড়িতদের মধ্যে রয়েছে আবুল খায়ের হিরো, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, বোন কনিকা আফরোজ; তার সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান ক্যান্ডেলস্টোন ইনভেস্টমেন্টস পার্টনার্স; বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান; শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস, ফরচুন শুজ ও সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস; আবু নাসের দুলাল, খোরশেদ আলম এবং সানোয়ার খান। এর মধ্যে আবুল খায়ের হিরো, আবুল কালাম মাতবর, খোরশেদ আলমের একাধিক বিও হিসাব ব্যবহার করা হয়।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত বছরের ১৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির শীর্ষে ছিলেন কাজী সাদিয়া হাসান। তিনি ৩ কোটি ৯৮ লাখ ২৯ হাজার ৯৩৬টি শেয়ার কিনেছেন এবং তদন্তের সময় ব্যাংকটির ২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৬ হাজার ১১০টি শেয়ার বিক্রি করেছেন। যা এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকটির মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন ও বিএসইসির জরিমানার আদেশ থেকে জানা যায়, গত বছরের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বরের ওই ১৫ দিনে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম সাড়ে ৭ টাকা বা ৬০ শতাংশ বেড়ে যায়। তাতে হিরো, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, বোন কনিকা আফরোজ এবং তার সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান ক্যান্ডেলস্টোন ইনভেস্টমেন্টস পার্টনার্সসহ একাধিক অনুসারী ও সহযোগীর ১৪টি বিও হিসাবে প্রায় ১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা মুনাফা হয়। একই সময়ে ১৪টি বিও হিসাবে অনাদায়ী (আনরিয়ালাইজড) মুনাফার পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

এ ছাড়া চলতি বছরের ৭ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত সময়ে বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম ২৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩৪ টাকা ৩০ পয়সা হয়েছে। শতাংশের হিসাবে ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার দর। ডিআইটি কো-অপারেটিভ, যেটি এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ক্লায়েন্ট কোড এস ২১১৬ এবং বিও আইডি ১৬০৪৫৩০০৬৫৭৫৭৮১-সহ আলোচ্য সময়ের মধ্যে বিডিকম অনলাইনের পাঁচ জন শীর্ষ ক্রেতা ছিলেন।

এই দুটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ধারা ১৭ অনুসারে, জরিমানা করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এ প্রসঙ্গে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বাজারের শৃঙ্খলা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে কারসাজির তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে আইন মেনে তা নিষ্পত্তি করা হয়। এ ধরনের ব্যবস্থা ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।

জানা গেছে, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, জেনেক্স ইনফোসিস, ফরচুন শুজ ও সোনালী পেপারের নামে শেয়ার কেনাবেচার কাজটি তদারকি করেছিলেন হিরো। ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ২০ টাকা ১০ পয়সা হয়েছে, শতাংশের হিসাবে বেড়েছে ৫৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।

তদন্তে ডিএসই দেখা যায়, আবুল খায়ের হিরোর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান (ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের ক্লায়েন্ট কোড # ৩৮৯৮) এ সময়ের মধ্যে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের শীর্ষ ক্রেতা ছিলেন। তিনি হিরোর স্ত্রী এবং মোনার্ক হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এ ছাড়াও মো. আবুল খায়ের হিরো সেই সময় (অগ্রণী ইক্যুয়িটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ক্লায়েন্ট কোড # এবিএম ৬৪৫) থেকে ব্যাংকটির দ্বিতীয় শীর্ষ ক্রেতা ছিলেন। এ ছাড়াও হিরোর বাবা আবুল কালাম মাতবর (ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের ক্লায়েন্ট কোড ৯১৬৬) এবং হিরোর বোন কনিকা আফরোজ ওয়ান ব্যাংকের প্রধান ক্রেতা ছিলেন।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024