শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:২৬

মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে ভারতে ফেলানীর বাবা

মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে ভারতে ফেলানীর বাবা

 

 

 

 

 

 

 

 

মিজানুর রহমান: ফেলানীর হত্যাকারী বিএসএফ সদস্যদের ফাঁসির দাবি নিয়ে ভারতে যাচ্ছেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু। সীমান্ত হত্যার শিকার ফেলানীর খুনিদের শাস্তি হবে-এই আশায় বুক বেধেছেন তার স্বজনরা। প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীরাও বিচার শুরু হবার খবর শুনে খুশি। সবার দাবি সাড়া জাগানো এই নৃশংস খুনের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হোক। ক্ষতিপুরন পাক নিহতের পরিবার।

কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী হত্যাকান্ডের বিচার শুরু হচ্ছে প্রায় আড়াই বছর পর। আগামীকাল ১৩ আগষ্ট ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের উদ্যোগে গঠিত একটি বিশেষ আদালতে এই বিচার কার্যক্রম শুরু হবে। মামলায় স্বাক্ষ্য দিতে এবং শুনানীতে অংশ নিতে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম, মামা আব্দুল হানিফ, কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন, বিজিবির ৪৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল জিয়াউল হক খালেদ ভারতে যাচ্ছেন। আগামী ১৮ আগষ্ট তাদের ভারতে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারী কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী ভারত থেকে বাবার সাথে বাংলাদেশে আসার সময় বিএসএফের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন। তার লাশ কাঁটাতারে ঝুলে ছিল দীর্ঘ ৫ ঘন্টা। এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে বিএসএফ দায়ী সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। দীর্ঘ আড়াই বছর পর বিচার শুরু হচ্ছে সেই মামলার।

সোমবার দুপুরে ফেলানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পেছনে ছোট একটি সুপারি বাগানের শেষপ্রান্তে ফেলানীর কবরটি ঝোপজঙ্গলে পূর্ণ। কবরের বেড়া ভেঙে গেছে। গাদা ফুলের দ’ু একটি গাছ পরিচর্যাহীনভাবে টিকে আছে। কবরটি পাকা দেখতে তার বাবা মায়ের কত ইচ্ছে। কিন্তু পূরণ হয়নি। মামলায় স্বাক্ষ্য দিতে ভারত যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। তিনি দীর্ঘ আড়াই বছর পর বিচার শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘লোকজন সবাই দেখছে; আমিও দেখছি-ওরা মেয়েডারে কিভাবে গুলি কইর‌্যা মারছে। যা ঘটনা হইছে, আমি স্বাক্ষী দেওয়ার জন্যি যাব। যারা মেয়েডারে মারছে, তাদের যানি ফাঁসি হয়, আর আমি যানি সুষ্ট বিচার পাই’।

পাথর সমান কষ্ট বুকে ধরে ৫ সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে কোনমতে দিন কাটাচ্ছেন ফেলানীর মা। ফেলানী নিহত হবার পর প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশে তৎকালিন স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর (অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন) দেয়া ৩ লাখ টাকার মধ্যে ঘরবাড়ি মেরামত করে বসবাস উপযোগী করার পর ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বাড়িতে ও নাখারজান বাজারে দুটি ছোট আকারের মুদি দোকান চালু করে। বিকালে নাখারজানের দোকানে বসেন ফেলানীর বাবা। আর মা দিনভর সংসারের কাজের ফাঁকে বাড়ি লাগোয়া দোকানে বসে বেচা বিক্রি করেন। দু’টি দোকান মিলে দৈনিক আয় ১৫০-২০০ টাকা। তা দিয়ে সংসারের খরচ মেট না কষ্ট কর হয়েছে। তার উপর বাকি পড়েছে বিস্তর। তাই পুঁজির ঘাটতি হতে হতে অবশিষ্ট দেড় লাখ টাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসা চালিয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ জীবন চলছেনা বড় এই পরিবারটির।

ফেলানীর ছোট ভাই বোনদের মধ্যে মালেকা সপ্তম শ্রেণীতে, জাহানুদ্দিন ষষ্ঠ শ্রেণীতে, আরফান চতুর্থ শ্রেণীতে, আক্কাস তৃতীয় শ্রেণীতে ও কাজলি কওমি মাদ্রাসায় পড়ে। তাদের লেখাপড়ার পেছনে মাসিক ব্যয় প্রায় দুই হাজার টাকা। এ অবস্থায় ফেলানী হত্যার বিচার চাওয়ার পাশাপাশি দ’ু দেশের সরকারকে তার পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার দাবি ফেলানীর মায়ের। ফেলানীর মা জাহানারা বলেন, ‘ ৫টা বাচ্চার লেখাপড়া করাতে লাগে, প্রারাইভেটের টাকা লাগে, খাওয়া দিতে লাগে, কাপড় চোপড় লাগে; আমরাতো আর পারতেছিনা। চিন্তায় আমাগো ঘুম আসেনা। দিন যায়- রাত যায় আমরা কোন কুল পাইতেছিনা। সরকারের লোকজন দেখভাল করেনা, খবরও নেয়না’।

ফেলানীর হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তি দাবি করে তার মা বলেন, ‘বাচ্চাটারে নিয়া খুব আশা করছিলাম। ওরে ভালভাবে বিয়া দিব। বিএসএফ তা করতে দেয় নাই। মেয়ের মরা মুখটাও দেখতে পাই নাই। এহন বিচার হইলে অনেক শান্তি পামু’। অপরদিকে ভারতে যাবেন ফেলানীর মামা আব্দুল হানিফ। তিনিই ফেলানীর লাশ নিয়ে প্রথম এসেছিলেন তার বাড়িতে। হানিফ বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর আমি ছুটে যাই। মেয়েডারে কাঁটাতারে যেভাবে ঝুলতে দেখছি, চোখের সামনে এহনও ভাসে। আমি আদালতে সব ঘটনা খুলে কমু।

শুনানীতে অংশ নিবেন কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন। তিনি যাবেন বাংলাদেশের হয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করার জন্য। আসামীদের সর্বোচ শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে জোড়ালো ভূমিকা রাখার সংকল্পবদ্ধ তিনি।

তার মতে, প্রায় ৪৩ বছর পর এ ধরনের হত্যাকান্ডের বিচাওে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে দু’ দেশের সীমান্তরক্ষীরা আর গুলির চিন্তা করবেনা। তার প্রত্যাশা দোষীদের শাস্তি হলে দ’ু দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় তা মাইল ফলক হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘ফেলানীর হত্যার বিচারের ব্যাপারে ভারত কোন দায় এড়াতে পারেনা। কারন শিশু ফেলানীর কাছে অস্ত্র ছিলনা, মাদক ছিলনা, বিএসএফের জীবনহানীরও কারণ সে হয়নি। কাজেই বিএসএফ সদস্যরা মেয়েটিকে ধরে আইনে সোপর্দ করতে পারতো। হত্যা করাটা কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য হবে না। শিশু ফেলানীকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা ছিল মানবাধিকারের চরমতম লংঘন। এই হত্যাকান্ডের ভেতর দিয়ে সভ্য রাষ্ট্র হিসেবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ব্যাপারে ভারতের ইতিবাচক মনোভাব কলংকিত হয়েছে। আসামীদের সর্বোচ শাস্তি হলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভারতের কলংকমোচন হবে’।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024