রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৬

ইলিশ খেতে চাঁদপুরে

মুস্তাফিজ মামুন: মৌসুমের শেষের দিকে এসে ঝাঁকঝাঁক ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। পদ্মা-মেঘনা জুড়ে জেলেদের তাই ইলিশ ধরায় ব্যস্ততা। ঢাকা থেকে খুব সকালে গিয়ে দিনে দিনেই ঘুরে আসতে পারেন ইলিশের রাজ্য চাঁদপুর থেকে।

ঢাকার সদরঘাট থেকে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বেশ কিছু লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সুবিধামতো যে কোনো একটিতে চড়ে বসতে পারেন।

বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে একসময়ে শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরীকে পাশ কাটিয়ে লঞ্চ এসে পড়বে মেঘনায়। এখান থেকে নদীর দৃশ্যটাও বদলাতে শুরু করে।

বিস্তীর্ণ মেঘনার বুকে ছোট ছোট জেলে নৌকা। ঢেউয়ের তালে দুলে দুলে কেউ জাল টানছে, কেউ আবার টানার জন্য অপেক্ষায়। কেউ আবার শক্ত হাতে ধরে আছেন হাল। রুপালি ইলিশ জালে আটকাতে পেরে কারও কারও মুখে আনন্দের হাসি। কোনো একটি নৌকার দিকে একটু সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলে সদ্য পানি থেকে তোলা জীবন্ত ইলিশের ছটফটানিও চোখে পড়বে।

ঢাকা থেকে লঞ্চে চাঁদপুর পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। সদরঘাট থেকে ছেড়ে মেঘনা নদী পৌঁছুতে সময় লাগে ঘণ্টা দুইয়ের মতো। এখান থেকে চাঁদপুর পৌঁছানো পর্যন্ত বাকি ২ ঘণ্টা সময়ের পুরোটাই দেখা যাবে ইলিশ ধরার দৃশ্য। রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরির মধ্যে চলতে থাকে জেলেদের ইলিশ ধরা।

পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়ার মোহনায় এখন প্রবল স্রোত। চাঁদপুর-লঞ্চঘাট তাই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে শহরের মাদ্রাসা ঘাটে। এই জায়গায় নেমে প্রথমেই বড় স্টেশনে যেতে পারেন। চাঁদপুরে সবচেয়ে বড় ইলিশের মোকাম এটি। এছাড়াও বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জেলেরা ইলিশ নিয়ে আসেন এখানে।

বাজার ঘুরে ইচ্ছে হলে পছন্দের ইলিশ কিনেও নিতে পারেন। সঙ্গে নিয়ে আসার জন্য বরফ দিয়ে ইলিশ প্যাকেট করারও ব্যবস্থা আছে এ বাজারে।

আশপাশে ছোট ছোট কিছু রেস্তোরাঁ আছে। এখানে খেয়ে নিতে পারেন তাজা ইলিশ ভাজা।

খাওয়া শেষ করে যেতে পারেন হরিণা ফেরিঘাটে। শহর থেকে জায়গাটির দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। হরিণায় পদ্মার ওপারে শরীয়তপুর। এখানে আছে ইলিশের আরেকটি মোকাম। আকারে একটু ছোট। এখানে সব ইলিশই আসে পদ্মা থেকে। এখানেও খুব কাছ থেকে পদ্মায় জেলেদের ইলিশ ধরা দেখতে পাবেন।

হরিণা থেকে ফিরে পড়ন্ত বিকেলে আসতে পারেন শহরের পশ্চিমপাশে। বড় স্টেশন মোলহেড এলাকায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়ার সৌন্দর্য। এখানকার শহর রক্ষা বাঁধে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় সন্ধ্যা নামার মনোরম দৃশ্য। সম্প্রতি এখানে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য ‘রক্তধারা’।

চাঁদপুরের সবজায়গায় বেড়াতে হলে ফিরতে হবে রাতের লঞ্চে। যেগুলো ছাড়তে শুরু করে রাত ৯টা থেকে। আর শুধু বাজার বেড়িয়ে ফিরতে চাইলে বিকেলের লঞ্চেই উঠতে পারেন।

প্রয়োজনীয় তথ্য

চাঁদপুর বড় স্টেশন মোকামের বেশিরভাগ ইলিশই চাঁদপুরের নয়। এখানে বরিশাল, ভোলা কিংবা সামুদ্রিক ইলিশই বেশি। চাঁদপুরের ইলিশ চেনার সবচেয়ে সহজ একটি উপায় আছে। এখানকার ইলিশ একেবারে রুপালি রং। আর অন্যান্য জায়গার ইলিশে রুপালি রংয়ের সঙ্গে লালচে আভা আছে। চিনতে না পারলে এখানকার ব্যবসায়ীরা সব ইলিশই চাঁদপুরের বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করে।

নোনাপানির ইলিশে রুপালি রংয়ের সঙ্গে লালচে আভা থাকে। মিষ্টিপানি বা নদীর ইলিশের রং চকচকে রুপালি হয়।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা-চাঁদপুর রুটে প্রতিদিন চলাচল করে এমভি তাকওয়া, এমভি সোনারতরী, এমভি মেঘনা রাণী, এমভি বোগদাদীয়া, এমভি ঈগল, এমভি আল বোরাক, এমভি তুতুল, এমভি রফরফ প্রভৃতি।

এসব লঞ্চে ঢাকা-চাঁদপুর অথবা চাঁদপুর-ঢাকার ভাড়া প্রথম শ্রেণির একক কেবিন ৩০০-৫৫০ টাকা। প্রথম শ্রেণির দ্বৈত কেবিন ৬শ’-১ হাজার টাকা। তৃতীয় শ্রেণির ভাড়া জনপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা।

 

ছবি : মুস্তাফিজ মামুন




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025