সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১১:২৬

মিয়ানমার সেনাদের ভয়াবহ নির্মমতার বর্ণনা: যারা কালেমা পড়েছে তারা মিয়ানমারে থাকতে পারবে না

মিয়ানমার সেনাদের ভয়াবহ নির্মমতার বর্ণনা: যারা কালেমা পড়েছে তারা মিয়ানমারে থাকতে পারবে না

শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূলে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী। জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের গ্রাম। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ২৯ আগস্ট (মঙ্গলবার) এই সম্পর্কিত স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করেছে।

সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ছবিতে রাখাইন রাজ্যের অন্তত ১০টি স্থানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের দাবি, নতুন করে ৮ শতাধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করেছেন, সেসব গ্রামে সেনাবাহিনী প্রবেশ করে নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে। বহু ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। নারী, পুরুষ ও শিশুদের কেউ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলির হাত থেকে বাঁচছেন না।

খোদ মিয়ানমার সরকারই জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি আক্রমণের পর শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া জঙ্গি বিরোধী অভিযানে প্রায় ১০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

তাদের দাবি, সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় চরমপন্থীরাই রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। কিন্তু পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, মূলত সরকারি বাহিনীই সেসব গ্রামে আগুন লাগিয়েছে এবং বিনা বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে।

এদিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ছাড়াও সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনীর একের পর এক ভয়াবহ মানসিক নির্যাতনের তথ্য জানাচ্ছেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা অনেক কিশোর গণমাধ্যমকর্মীর কাছে মিয়ানমারের সেনাদের নির্মমতার কথা বর্ণনা করেছে।

জুনে হলমা পরর ওন, এড়ে থাইন্নফারিবি (যারা কালেমা পড়েছে তারা মিয়ানমারে থাকতে পারবে না)- রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ অন্য গোষ্ঠীদের ভয়াবহ নির্যাতনের কথা এভাবেই বর্ণনা করল আতাউল্লাহ নামের এই কিশোর।

তার ভাষায়, জুনে আরারে নির্যাতন গরের ওন অইলদে কাফের, মগ, রুঠাইন ও ফুলিশ (যারা আমাদের উপর নির্যাতন করছে তারা কাফের, মগ, রাখাইন ও পুলিশ।

বয়স বড়জোর ১৬। এই কিশোর বৃহস্পতিবার গভীররাত থেকে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে।

সেই রাতে আতাউল্লার মতো অনেক কিশোর সেনাবাহিনীর গুলি থেকে বেঁচে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নেয়, যেখানে কয়েক বছর ধরেই বসবাস করছে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। অতীতে এসব রোহিঙ্গাও মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর জুলুম-অত্যাচার ও গণহত্যা থেকে বেঁচে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।

দুদেশের পক্ষ থেকে তাদের ওপর অদ্ভূত চাপের কথা জানায় আতাউল্লাহ নামে এক কিশোর। এই কিশোর বলে, ‘(মঙ্গলবার) সকাল থেকে এখান থেকে আমাদেরকে কাঁটাতারের দিকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরা (বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ) বলছে- তোমরা রোহিঙ্গা। জিহাদ এখানে না, চলে যাও। কাটাতারের বেড়া ঘেঁষে থাকো।’

জাতিসত্তা নির্মূলে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর এমন হত্যাযজ্ঞে ফুঁসে উঠেছে সেখানকার অনেক তরুণ, কিশোর। প্রতিবাদের ডাকও দিয়েছে তারা।

আতাউল্লাহর মতো বাস্তচ্যুত কিশোরের কণ্ঠেও ফুটে উঠেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের স্পষ্ট অবস্থান। সে বলে, আরার আতত যদি অস্ত্র থাহিত, তাইলে আরাও লড়াই গইরতাম। কিন্তু, আরার আতত এহন অস্ত্র নাই। এতর লাই আরা কিছু গরির ন ফারির (আমাদের হাতে যদি অস্ত্র থাকত তাহলে আমরাও লড়াই করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের হাতে অস্ত্র নাই। এজন্য আমরা লড়াই করতে পারছি না)।

শুক্রবার থেকে জলপাইতলী সীমান্তের অস্থায়ী ছাউনিতে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে আতাউল্লাহদের বেশিরভাগই চলে গেছে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের কাঁটাতার বরাবর নো-ম্যান্স ল্যান্ডে।

এই কাঁটাতারের বেড়ার ওপারেই রোববার মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সশস্ত্র মহড়া দিয়েছিল। এমনকি ঘনঘন হেলিকপ্টার নিয়ে মহড়া দিয়ে নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠীকে তারা করে তুলেছে আরও আতঙ্কিত।

আতাউল্লাহ জানায়, শুক্রবার থেকে চিড়া-মুড়ি খেয়ে আছে তারা। জানাল, স্থানীয়রা যা দেয়, তাই ভাগ করে খাচ্ছে সবাই। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তার দুই ভাই ও এক চাচাত ভাইকে হত্যা করেছে বলেও জানায় সে।

ছোট দুই ভাইকে নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে এসেছেন মো. রফিক (২২) নামে আরেক যুবক। তিনি জানান, তার এক ভাই এখনো নিখোঁজ। ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞে বেশিরভাগ পরিবারই কোনো না কোনো সদস্যকে হারিয়েছে। এমনই একজন নুর ইসলাম (৪৫)। তার দুই মামাকে গুলির পর জবাই করে হত্যা করেছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025