শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে কোনও রোহিঙ্গা নেই। সীমান্তের কিছু কিছু পয়েন্ট দিয়ে গুটি কয়েক রোহিঙ্গাকে আসতে দেখা গেলেও গত সপ্তাহের মতো স্রোত চোখে পড়েনি।
এক সপ্তাহ আগেও নো-ম্যানস ল্যান্ডে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছিল। রবিবার বিকালে ও সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে সীমান্তের ঘুমধুম, তুমব্রু, জলপাইতলী, আঁশবাগান, রেজু আমতলী, উখিয়ার বালুখালী, ধামনখালী, রহমতেরবিল, পালংখালী, আঞ্জুমানাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি সীমান্ত এলাকা সরেজমিন ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকার বাসিন্দা নুরুল আবছার বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোয় গত কয়েকদিন ধরে বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা তুমব্রু ও জলপাইতলী সীমান্তে অবস্থান নিয়েছিল। হয়তো রাখাইন রাজ্যে আর কোনও লোক না থাকায় এখন আসা বন্ধ হয়ে গেছে। গত চারদিন ধরে কোনও রোহিঙ্গাকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে দেখিনি।’
তুমব্রু সীমান্তে বসবাসকারী শফিউল আলম বলেন,‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান নেওয়া সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ক্যাম্পের দিকে চলে গেছে। আর কোনও রোহিঙ্গা আসতে দেখা যায়নি। তবে কিছু কিছু রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও সোজা ক্যাম্পেই চলে যাচ্ছে বিনা বাধায়। এমনকি বিজিবি’র সদস্যদেরও তেমন বাধা দিতে দেখিনি।’
রাখাইন রাজ্যের সব বাজার থেকে সোমবার সকালে কুতুপালং ক্যাম্পে পৌঁছেছেন চার সন্তানের জননী মরিয়ম খাতুন (৪৫)। তার স্বামী নুরুল আমিনকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে গেছে। এ সময় তিনি সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে থাকার কোনও জায়গা না থাকায় আপাতত রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন।
উখিয়ার রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে আজ সকালে বাংলাদেশে আসেন আব্দুল মাজেদ ও ফাতেমা বেগম। তারা জানান, রাখাইন রাজ্যে এই পর্যন্ত কোনও লোককে দেখা যায়নি। সব বাড়ি খালি পড়ে রয়েছে। অধিকাংশ আগুনে পুড়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সে দেশের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। এতে ১২ পুলিশ সদস্যসহ বহু রোহিঙ্গা হতাহত হয়। এ ঘটনায় রাখাইন রাজ্যে অভিযানের নামে সাধারণ মানুষ ওপর হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুনসহ নানা নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। এ কারণে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের কথা বলা হলেও স্থানীয় সূত্র মতে, এই সংখ্যা আরও বেশি। এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবরের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একইভাবে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা।