মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭

বিশ্ব মহাদুর্যোগ: জাতীয় ও বিশ্বনেতাদের উচিৎ গভীর অনুশোচনা ও আত্ম-সমালোচনা করা

বিশ্ব মহাদুর্যোগ: জাতীয় ও বিশ্বনেতাদের উচিৎ গভীর অনুশোচনা ও আত্ম-সমালোচনা করা

করোনা ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী মহামারীর প্রাক্কালে বিশ্বনেতাদের এবং বিভিন্ন দেশ ও জাতির কর্নধারদের সত্যিকার অর্থে সউল সার্চিং (soul searching) ও আত্ম-সমালোচনা (self-reflection) করা দরকার। সুপার পাওয়ারদের কাছে এমন মারাত্বক ধরনের মরনাস্ত্র আছে যা দিয়ে এই পৃথিবীকে কয়েক বার ধ্বংস করা যাবে! বিজ্ঞানীরা এমনটা কয়েকবার দাবীও করেছেন। অথচ করোনা নামের অদৃশ্য ভাইরাস যার সাইজ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ধানের/চালের চেয়ে প্রায় ৫৫,০০০ গুন ছোট ও যা মানুষের চোখে দেখা যায় না এবং যার স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যায় না তার কাছে তাবৎ পৃথিবী আজ একেবারেই অসহায়! চিন্তাশীল, প্রকৃত জ্ঞানী ও বিচক্ষনশীলদের জন্য এতে আছে অনেক ইঙ্গিত ও ঈশারা। বিশ্বনেতাদের এবং বিভিন্ন দেশ ও জাতির কর্নধারদের এগুলো বুঝার কি হিম্মত বা প্রজ্ঞা আছে?

অত্যাচার (জুলুম) আর অবিচার (injustice) সাংঘাতিক ও মারাত্মক দুটি জিনিস। অথচ এগুলো বিভিন্ন দেশে দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে অহরহ ঘটছে। এগুলোর চরম আকারে ঘটলে মহান মা’বুদের আরশ কেঁপে উঠে! এ দুটিতে মানুষরা বিশেষ করে ক্ষমতাশালীরা যখন চরম সীমা লঙ্ঘন করে এবং এ ধরায় মজলুমদের/চরম অবিচারের শিকারদের পরিত্রান ও সুবিচার পাবার সম্ভাবনা যখন একেবারেই শেষ হয়ে যায় তখন ‘ডিভাইন ইন্টারভেনশন বিকামস ইমিনেন্ট’ অর্থাৎ “পরাক্রমশালীর হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়ে উঠে”। আমরা কি তা বুঝি? বিশেষ করে, ক্ষমতাশালীরা কি তা হৃদয়াঙ্গম করতে পারেন?

বিশ্ব আজ এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এমন দৃশ্য ছয় মাস আগেও কেউ (না কোন দেশ, না পুরো বিশ্ব) কল্পনাই করতে পারেনি। বিশ্বে দেড় লক্ষাধিক মানুষ ইতোমধ্যেই মৃত্যূবরন করেছেন এবং প্রায় পচিশ লাখের মত আক্রান্ত। এটা হচ্ছে সরকারী বা রেকর্ডেড হিসাব। কিন্তু সত্যিকার বা প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশী হতে যে বাধ্য তা সহজেই অনুমেয়। এই মারাত্মক ও অকল্পনীয় অবস্থার শেষ কোথায় তা মহান প্রভু ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। তাছাড়া বিশ্বের অর্থনীতির অবস্থা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা অকল্পনীয়। কয়েকদিন আগে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি রিপোর্ট করেছে যে বৃটিশ অর্থনীতি তিন শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। সবেতো শুরু! তিন মাস ও ছয় মাস পর কোথায় যাবে বৃটিশ অর্থনীতি বা বিশ্বের অর্থনীতি তা কল্পনাতীত। বিশ্বব্যাপী চলমান মহামারী ও চরম ক্রান্তিকালের পর নি:সন্দেহে বিশ্ব আর আগের অবস্থায় রইবে না। নতুন এক বিশ্বব্যবস্থার সৃষ্টি হবে যা আমাদের ধারনার বাহিরে।

চীনে ৩২০০ লোক মারা গেছে এবং তারা সব নিয়ন্ত্রন করে ফেলছে বলে নিউজ শুনি। আসলে চীনকে কতটুকু বিশ্বাস করা যায়? সত্যিই কত লোক করোনাভাইরাসে মারা গেছে এবং কত লোকইবা সে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তার সঠিক হিসাব কি আদৌ পাওয়া গেছে বা কখনও পাওয়া যাবে? এইতো কয়েক দিন আগে চীন হঠাৎ ঘোষনা দিল আরও ১২৯০ জন লোক চীনে করোনা ভাইরাসে মারা গেছে! কমিউনিস্ট রাস্ট্র চীনে মিডিয়া কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, সরকারের ইচ্ছার বাহিরে সেখানে সংবাদ ছাপানোর কথা চিন্তাই করা যায় না। সরকার চরম কর্তৃত্বপরায়ন (রুথলেস), তার নিজ দেশের নাগরিকদের সাথে তারা যে ব্যবহার করে তা দেখলে গাঁ শিউরে উঠে। বাহিরের কোন নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। এমতাবস্থায় চীনের কথা কতটুকু বিশ্বাসযাগ্য? গত কদিন আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসে বিভিন্ন তথ্যসূত্র ও অনুসন্ধানী রিপোর্টের বরাত দিয়ে সংবাদ ছেপেছে যে চীনে অন্তত: পন্চাশ হাজার লোক মৃতূবরন করেছে এবং তাদের সব মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে! করোনা ভাইরাস নিয়ে চীনের দ্বায় ও ভূমিকা নিয়ে জাতিসংঘের অধীনে গঠিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন দিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।

ভাবতে পারেন, তাবৎ বিশ্ব কত অমানবিক ছিল! মানুষ হয়েও জাতি ও বিশ্বের কর্নধাররা মানুষ জাতির স্বাস্হ্য খাতের চেয়ে মানুষ জাতিকে মারার খাতে বাজেটের বরাদ্দ দিয়েছে বেশী এবং তা দিন দিন বৃদ্ধি করছিল। গত এক দশকে যুদ্ধ, বোমা ও গুলির পিচনে যত ব্যয় হয়েছে ঐ অর্থগুলো যদি হাসপাতাল নির্মান, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয় ও মানুষের স্বাস্হ্য সেবায় ব্যয় হতো পৃথিবীর চেহারাটা পাল্টে যেত। প্রকৃতির সাধারন নিয়মের সাথে বিশ্ব কি না আচরণ করছে! করেছে পরাশক্তিগুলো ধরাকে সরা জ্ঞান। নৈতিক অবক্ষয়ের কোন পর্যায়ে বিশ্ব অবস্থান করছে তার উদাহরণ দিতে গেলে বিবেকবানদের চোখে আঙ্গুল উঠবে – কেঁপেছে স্রষ্টার আরশ!

বর্তমান বিশ্বের অভাবনীয় মহামারী ও দুর্যোগ থেকে আমাদের সবার অনেক কিছু শিখার, অনুতপ্ত হওয়ার ও হৃদয়াঙ্গম করার আছে। প্রয়োজন আছে জাতীয় ও বিশ্বনেতাদের গভীর আত্ম-সমালোচনা ও অনুশোচনা করার। আসুন আমরা আমাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে সউল সার্চিং (soul searching) ও আত্ম-সমালোচনা (self-reflection) করি। অতীত ভুলের জন্য মহান স্রষ্টার কাছে ক্ষমা চাই। তার সাথে সাথে বেঁচে থাকলে আমরা এমন একটি পৃথিবী গড়ার প্রত্যয় নেই এবং সংকল্প করি যার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভিত্তি হবে সুবিচার, নৈতিকতা ও একে-অন্যের প্রতি (পারস্পরিক) কল্যানকামিতার সর্বোচ্চ মাত্রা।

লেখক: ব্যারিস্টার নাজির আহমদ, বিলেতে প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী, বিশ্লেষক, কমিউনিটির সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ও লন্ডনের নিউহ্যাম কাউন্সিলের ডেপুটি স্পিকার।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024