আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘সূরা আল বাকারাহ ’। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ‘ইসলাম বিভাগ প্রধান’ ইমাম মাওলানা নুরুর রাহমান।
সূরাতুল বাকারা নামকরণ: বাকারাতুন শব্দটি একবচন , বহুবচনে বাকারা। আর বাকারা অর্থ হলো গাভী।
সূরা বাকারার ৬৭ নং আয়াত থেকে ৭১ নংআয়াত পর্যন্ত বনি ইসরাইলের প্রতি একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি গাভী জবাই করার আদেশ এবংতাদের অবাধ্যতা সম্পর্কিত ঘটনা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ৬৭নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন: وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِۦٓ إِنَّ ٱللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تَذْبَحُوا۟ بَقَرَةً قَالُوٓا۟ أَتَتَّخِذُنَا هُزُوًا قَالَ أَعُوذُ بِٱللَّهِ أَنْ أَكُونَ مِنَ ٱلْجَٰهِلِينَ
অনুবাদ:- যখন মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেন, আল্লাহ তোমাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেন।
তারা বলল, তুমিকি আমাদের সাথে উপহাস করছ? মূসা (আঃ) বললেন,
মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
অত্র আয়াতে উল্লেখিত بَقَرَةً শব্দ অবিলম্বে সুরাতুল بَقَرَةً নামে নামকরণ করা হয়েছে। রাসূল সাঃ মহান আল্লাহর নির্দেশে পবিত্রকুরআনুল কারীমের সকল সূরার জন্য আলাদা আলাদা সূরার নাম নির্ধারণ করেছেন
সূরাতুল বাকারার বিষয়বস্তু: সুরাতুল বাকারা কোরআন মাজিদের সবচেয়ে বড় সূরা। এতে ২৬৬ টি আয়াত ও চল্লিশটি রুকু রয়েছে। এছাড়া শরীয়তেররীতিনীতি এবং আদেশ-নিষেধ এত বেশি বর্ণিত হয়েছে ,যে অন্য কোন সূরাতে এতবেশি বর্ণিত হয়নি। (মারেফুল কোরআন)
সূরার শুরুতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, এটি এমন একটি কিতাব যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। কিতাবখানা খোদাভীরুদের জন্যেপথপ্রদর্শক।
এরপর মুমিনের গুণাবলী কাফের ও মুনাফিকদের পরিচিত বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর বর্ণিত হয়েছে মানবজাতিরজীবন-মৃত্যুর দর্শন, ভুবমন্ডল ও নভোমন্ডল সৃষ্টিতত্ত্ব, হযরত আদম আলাই সালাম ও হাওয়া আ: এর জন্ম বৃত্তান্ত, তাদেরজান্নাতে অবস্থান, তাদের পৃথিবীতে অবতরণ।
মহান আল্লাহ বনি ইস্রাঈলদের প্রতি তার বিভিন্ন অনুগ্রহ ও নেয়ামত দান এবংতাদের আদেশ অমান্য করার ভয়াবহ পরিণাম উল্লেখ করেছেন। আহলে-কিতাব ইহুদী ও নাসারাদের নিজ নিজ ধর্মেরবিরুদ্ধাচরণ। এবং তাদের নবী ও রাসূল হযরত মুসা আলাই সালাম এর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। সুরাটির মধ্যে বনি ইসরাইলের এক গরু কোরবানির বিস্তারিত ইতিহাস রয়েছে।
ফেরাউন কর্তৃক বনি ইসরাইলের উপর অত্যাচার থেকে তাদের মুক্তি এবং নীলদরিয়া ফেরাউনের মৃত্যুর বিবরণ এতে বর্ণিত হয়েছে। তিহ ময়দানে বনি ইসরাইলের খাদ্যের জন্য মান্না ও সালওয়া ব্যবস্থা করেনএবং পাথরের গায়ে লাঠি দ্বারা আঘাত করে পানির ব্যবস্থার বিবরণ উল্লেখ হয়েছে। শনিবারের বিধান লংঘনের জন্যইসরাইলের এক দল বানর হয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও আরও অনেক বহু ঘটনা উল্লেখ করেছেন এ সুরাতুলবাকারায়।
সূরা বাকারা লক্ষ্যে: এছাড়া সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সূরা বাকারায় নাযিল হয় জিহাদ সম্পর্কিত অনেক আয়াত এবং মহান আল্লাহ নারীদের মুক্তিরপথ হিসেবে তথা নারী-পুরুষ সকলের শান্তি ও সমঝোতার উদ্দেশ্যে নাযিল করেন বিবাহ, তালাক, খোলা , ইলা , রাজয়াতের বিধানসমূহ। এছাড়াও মুসলিম জাতি কিভাবে তাদের সম্পদ পরিচালনা করবেন অর্থাৎ ক্রয়-বিক্রয়, সুদ, বন্ধ, ঋণ আদান-প্রদান, এতীমদের ধনসম্পদের রক্ষনাবেক্ষন ইত্যাদি সম্পর্কিত বিধান সমূহ নাযিল করেন। এই সূরায় নাযিল করেন মদ্যপান, খুনখারাপি, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ইত্যাদি অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করে বিধান নাযিল হয়েছে।
পবিত্র কুরআনের দ্বিতীয় সূরাটি হলো আল- বাকারা। এটি মাদানি সূরা। যেই সূরাগুলো হিজরতের পর নাজিল হয় সেগুলোহলো মাদানি সূরা। বাকারার আয়াত সংখ্যা ২৮৬। যার বাংলা অর্থ গাভী।
এই সূরাটি একটি বৃত্তকার বিন্যাসে গঠন করা হয়েছে পুরো সূরার গঠন বিন্যাসের ওপর ভিত্তি করে ৯ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে প্রথম অংশে আলোচনা করা হয়েছে।
বিশ্বাস ও অবিশ্বাস নিয়ে একই আলোচনা প্রতিফলন দেখা যায় নবম অংশে।
দ্বিতীয় অংশে আলোচনা করা হয়েছে সৃষ্টির রহস্য ও জ্ঞান নিয়ে, যার প্রতিফলন ঘটেছে সূরার অষ্টম অংশে।
তৃতীয় অংশে আলোচনা করা হয়েছে বনি ইসরাইলকে দেয়া সেই আইন যার প্রতিফলন দেখা যায় সপ্তম অংশে মুসলিমদেরকে দেয়া আইন নিয়ে।
চতুর্থ অংশে আলোচনা করা হয়েছে ইবরাহিম আ:কে দেয়া সেই পরীক্ষাগুলো নিয়ে যার প্রতিফলন ঘটেছে ষষ্ঠ অংশে মুসলিমদেরপরীক্ষা। মাঝের অংশ
অর্থাৎ পঞ্চম অংশটি হলো পুরো সূরার মূল অংশ, সালাতের কিবলার দিক পরিবর্তন।
‘এমনিভাবেআমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী সম্প্রদায় করছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমণ্ডলীর জন্য
আপনি যে কিবলার ওপর ছিলেন তাকে আমি এ জন্যই কিবলা করেছিলাম যাতে এই কথা প্রতীয়মান হয় যে,
কে এই রাসূলের অনুসারী থাকে? আর কেপিছুটান দেয়?’
এই কিবলা পরিবর্তন ছিল জেরুসালেম থেকে মক্কার দিকে। যা ছিল বিশ্বাসীদের জন্য এক বিরাট পরীক্ষা। এই ঘুরে দাঁড়ানোর
উল্লেখ আমরা দেখতে পাই সূরার ঠিক মধ্যম অংশে ১৪৩তম আয়াতে।
আরো উল্লেখ্য, এই আয়াতেই আছে মধ্যমপন্থী শব্দটি।এই ৯টি অংশ একসাথে বিশাল বৃত্তের বিন্যাস গঠন করে।
এই বৃত্তাকার বিন্যাসটি হলো একটি পূর্ণাঙ্গ বৃত্ত। যার মূল অর্থ আছেএর কেন্দ্রে।
এই বিন্যাসটিকে আবার আয়নার প্রতিফলনও ভাবতে পারি। যেখানে আয়নাটি আছে বৃত্তের ঠিক মাঝে। যেখানেপ্রথম পাশে যা বলা হয়েছে তা দ্বিতীয় পাশে প্রতিফলিত হয়েছে।
এই সূরার একটি মূল্যবান আয়াত রয়েছে ২৫৫তম আয়াতে।
যারঅপর নাম আয়াতুল কুরসি। পুরো সূরার ন্যায় এই আয়াতটিকেও ৯ ভাগে ভাগ করা যায় বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে। এই আয়াতের প্রথম ও নবম অংশেআছে আল্লাহর গুণবাচক নাম।
দ্বিতীয় ও অষ্টম অংশে বলা হয়েছে আল্লাহ কখনো ক্লান্ত হন না। তৃতীয় ও সপ্তম অংশে বলাহয়েছে আসমান ও জমিন সবই আল্লাহর অধীন। চতুর্থ এবং ষষ্ঠ অংশে আছে।
আল্লাহ আমাদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখেন, আর আমরা তার কাছে পুরো মুখাপেক্ষী।
লক্ষ করলেই দেখতে পাবেন, আগে ও পরে এই শব্দ দুটি, যা আরো একবার বৃত্তাকার বিন্যাসের নির্দেশনা দিচ্ছে। এই সূরাটি খুবইবিস্ময়কর সূক্ষ্ম ও গভীরভাবে বৃত্তাকার বিন্যাসে গঠিত হয়েছে।
সূরা বাকারাহ নামকরণ কেন গাভী নামকরণ?
মুসনাদ ইবনে আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে, বনি ইসরাঈলের মধ্যে একজন ধনী লোক ছিলেন, যার কোনো সন্তান ছিল না। তার উত্তরাধিকারী ছিল তার এক ভ্রাতুষ্পুত্র।
তাড়াতাড়ি সম্পত্তি পাওয়ার আশায় সে তার চাচাকে হত্যা করে ফেলে এবং রাতে তাদেরগ্রামের এক লোকের দরজার ওপরে রেখে আসে।
সকালে গিয়ে ওই লোকটির ওপর হত্যার অপবাদ দেয়।
অবশেষে এর দলেরএবং ওর দলের লোকদের মধ্যে মারামারি ও খুনাখুনি হওয়ার উপক্রম হয়।
এমন সময় তাদের জ্ঞানী লোকেরা তাদেরকে বলেনতোমাদের মধ্যে আল্লাহর নবী মূসা আ: বিদ্যমান থাকতে তোমরা একে অপরকে হত্যা করবে কেন? সুতরাং তারা মূসা আ:-এরকাছে এসে ঘটনাটি বর্ণনা করে।
তখন তিনি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তাদেরকে বলেন ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশকরেছেন যে, তোমরা একটি গরু ‘জবাই’ করো।’ এ কথা শুনে তারা বলল,
‘তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছ?’ তখন মূসাআ: বললেন ‘আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন আমি মূর্খদের অন্তর্গত না হই।’
তখন যদি তারা যেকোনো একটি গরু জবাই করত তাহলেই যথেষ্ট হতো। কিন্তু তারা কাঠিন্য অবলম্বন করল, তখন আল্লাহতায়ালাও তাদের ওপর তা কঠিন করে দিলেন। তারপর তারা ওইরূপ গরু একটি লোকের কাছে পেলো।
যা তার কাছে ছাড়া অন্যকারো কাছে ছিল না। লোকটি বলল, আল্লাহ তায়ালার শপথ! এই গরুর চামড়া পূর্ণ স্বর্ণের কম মূল্যে আমি বিক্রি করব না।সুতরাং তারা ওই মূল্যেই তা কিনে নেয় এবং জবাই করে।
তারপর তারা ওই জবাইকৃত গরুর একখণ্ড গোশত দিয়ে ওই মৃত ব্যক্তিরওপর আঘাত করে। তখন মৃত লোকটি দাঁড়িয়ে যায়। লোকগুলো তাকে জিজ্ঞাসা করে, তোমাকে কে হত্যা করেছে? সে বলল ‘আমার এই ভ্রাতুষ্পুত্র’।
এ কথা বলেই সে পুনরায় মারা যায়। ফলে তাকে মৃত ব্যক্তির কোনো সম্পদ দেয়া হয়নি। বনিইসরাঈলকে লক্ষ করে বলা হচ্ছে,
‘তারা যেন আল্লাহ তায়ালার এ নেয়ামতকে ভুলে না যায়, তিনি এমন এক স্বভাববিরুদ্ধ ঘটনাঘটালেন যার ফলে গরুর এক টুকরা গোশত দিয়ে মৃত ব্যক্তির শরীরে আঘাত করায় সে জীবিত হয়ে যায় এবং সে তারহত্যাকারীর নাম বলে দেয়। ফলে একটি বড় বিবাদের নিষ্পত্তি ঘটে।
উল্লেখ্য, এ ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সতর্ক করলেন যে, ‘এ রূপে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং স্বীয়নিদর্শনসমূহ প্রদর্শন করেন যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম করো।’সুতরাং আমাদের সব প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কর্ম আল্লাহ তায়ালাজানেন ও দেখেন। তাঁকেই ভয় করে আমাদের সব অপকর্ম বর্জন করা উচিত। সেখান থেকেই বাকারাহ নামে সূরার নামকরণ করাহয়েছে।
সূরা বাকারা ফজিলত
সূরা বাকারা পড়ার মধ্যে রয়েছে অনেক বরকত ও ফজিলত। সূরা বাকারা পাঠ করার জন্য হুজুর সা: উৎসাহিত ও তাগিদদিয়েছেন এবং পাঠ না করা দুর্ভাগ্য ও অনুতাপের কারণ সাব্যস্ত করেছেন। যেমন নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, তোমরা সূরাবাকারা বেশি বেশি পাঠ করো। কারণ এই সূরা পাঠ করলে বরকত লাভ হয় ও পাঠ না করা অনুতাপ ও দুর্ভাগ্যের কারণ। যেব্যক্তি এ সূরা পাঠ করে, কোনো জাদুকরের জাদু কখনো তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না (বুখারি)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘তোমরা নিজেদের ঘরকে কবরে পরিণত করো না, যে ঘরে সূরাহ্ আলবাক্বারাহ্ পাঠ করা হয় সেখানে শায়তান প্রবেশ করতে পারে না।’ (হাদীসটি সহীহ।
সহীহ মুসলিম ১/২১২, ৫৩৯, মুসনাদআহমাদ ২/২৮৪, ৩৩৭, জামি’ তিরমিযী ৫/২৮৭৭, নাসাঈ ৫/১৩/৮০১৫। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) একে হাসান সহীহ বলেছেন) আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ)-এর উক্তি আছে যে, যে ব্যক্তি রাতে সূরাহ্ আল বাক্বারার দশটি আয়াত তিলাওয়াত করে, সেরাতে উক্ত ঘরে শায়তান প্রবেশ করেনা।
আর সে আয়াতগুলো হলো উক্ত সূরার প্রথম চারটি আয়াত, আয়াতুল কুরসী, তারপরবর্তী দু’টি আয়াত এবং সবশেষের তিনটি আয়াত।
অন্য বর্ণনায় আছে যে, শায়তান সে ঘরে ঐ রাতে যেতে পারে না এবংসেদিন ঐ বাড়ীর লোকদের শায়তান অথবা কোন খারাপ জিনিস কোন ক্ষতি করতে পারে না।
এ আয়াতগুলো পাগলের ওপর পড়লে তার পাগলামীও দূর হয়ে যায়। (দারিমী ২/৩২২) সহীহুল বুখারীতে রয়েছে, ‘উসাইদ ইবনুহুজাইর (রাঃ) একবার রাতে সূরাহ্ বাকারাহ পাঠ করেন।
তাঁর ঘোড়াটি, যা তাঁর পার্শ্বেই বাঁধা ছিলো, হঠাৎ করে লাফাতে শুরুকরে। তিনি পাঠ বন্ধ করলে ঘোড়া সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আবার তিনি পড়তে আরম্ভ করলে ঘোড়াও লাফাতে শুরু করে।তিনি পুনরায় পড়া বন্ধ করেন এবং ঘোড়াটিও স্তব্দ হয়ে থেমে যায়। তৃতীয় বারও এরূপই ঘটে। তাঁর শিশু পুত্র ইয়াহ্ইয়া ঘোড়ারপাশেই শুইয়ে ছিলো। কাজেই তিনি ভয় করলেন যে, না জানি ছেলের আঘাত লেগে যায়।
সুতরাং তিনি পড়া বন্ধ করে ছেলেকেউঠিয়ে নেন। তারপর তিনি আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করেন যে, ঘোড়ার চমকে উঠার কারণ কি? সকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু’আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে হাযির হয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করেন।
তিনি শুনতে থাকেন ও বলতে থাকেনঃ ‘উসাইদ! তুমিপড়েই যেতে! ‘উসাইদ (রাঃ) বলেনঃ ‘হে মহান আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তৃতীয় বারের পরে প্রিয় পুত্রইয়াহ্ইয়ার কারণে আমি পড়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
অতঃপর আমি মাথা আকাশের দিকে উঠালে ছায়ার ন্যায়একটি জ্যোতির্ময় জিনিস দেখতে পাই এবং দেখতে দেখতেই তা ওপরের দিকে উত্থিত হয়ে শুন্যে মিলে যায়।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ ‘তুমি কি জানো সেটা কি ছিলো? তাঁরা ছিলো গগণ বিহারী অগণিত জ্যোতির্ময় ফিরিশতা।
তোমার পড়ার শব্দ শুনেতাঁরা ত্রস্তপদে নিকটে এসেছিলো।
যদি তুমি পাঠ বন্ধ না করতে তাঁরা সকাল পর্যন্ত এরকমই থাকতো এবং মাদীনার সকল লোকতা দেখে চক্ষু জুড়াতো। একটি ফিরিশতাও তাদের দৃষ্টির অন্তরাল হতো না।
সহীহ বুখারী ৮/৫০১৮, সহীহ মুসলিম ১/২২৪/৫৪৮
কোন আয়াতগুলো মুখস্ত থাকা জরুরি?
১. সূরার ২৫৫তম আয়াত তথা আয়াতুল কুরসি।
২. সূরার শেষ দুই আয়াত।
এই সূরার ফজিলত কী?
১. যে বাড়িতে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় সে বাড়িতে শয়তান প্রবেশ করে না (তিরমিজি-২৮৭৭, সহিহ)।
২. রাসূল সা: বলেন, সূরা বাকারা হলো একটি জ্যোতির্ময় নূরবিশিষ্ট সূরা, যে এই সূরা পাঠ করবে কিয়ামতের ময়দানে মেঘমালাও পাখির ঝাকের মতো ছায়া দান করবে।’ (মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ৩৪৮-৩৬১)।
এ ছাড়া এই সূরা পাঠকারীর জন্যকিয়ামতের ময়দানে জোরালো সুপারিশ করবে। (সহিহ মুসলিম হাদিস নং ৫৫৩)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার তৌফিক দান করুক এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দিন। আমীন।
Leave a Reply