প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে দেখা করেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
সিলেটে কাজ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার দোয়া নিয়েছি। সিলেটের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর গণমাধ্যমের কাছে এমন কথা জানিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
এর আগে বিকালে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও দেখা করেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। তাদেরও দোয়া নেন।
সিলেট-২ আসনে নৌকার টিকিট প্রত্যাশী ছিলেন আনোয়ারুজ্জামান। লন্ডনের বাসিন্দা। দীর্ঘ ৩ যুগ ধরে ওখানেই বসবাস করছেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক তিনি। মেয়র পদে আনোয়ারুজ্জামানের নাম হঠাৎ করেই আসে আলোচনায়। প্রধানমন্ত্রী সিলেটের নেতাদের কাছে তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন।
এরপর থেকে ঘটতে থাকে নাটকীয়তা। আনোয়ারুজ্জামান সপ্তাহখানেক আগে লন্ডন থেকে দেশে আসেন। তাকে নিয়ে সিলেটে শোডাউন দিয়েছেন নেতারা। সিলেটে কয়েকদিনের বিরতি দিয়ে গত বুধবার ঢাকায় যান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার তিনি প্রথমে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আনোয়ারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর দোয়া নিতেই আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ঢাকায় যান। এর আগে যতবারই তিনি নিজ এলাকায় আসেন ততবারই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। এবারো গেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে সিলেটে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট আওয়ামী লীগের কোনো বলয়ের নেতা নন। তার কাছে সবাই সমান। এ জন্য তিনি সবাইকে নিয়ে কাজ করবেন। সেই প্রস্তুতিই তিনি চালাচ্ছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পরদিনই গতকাল সকালে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন আনোয়ারুজ্জামান।
শুক্রবার সকালে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করেন। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। তিনি জাতির সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করেন।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেনসহ অল-ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মোস্তাক আহমদসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।
এদিকে সিলেটের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের টিকিট আনোয়ারের কাছে যাচ্ছে, এমন আভাস পাওয়ার পর থেকে নীরব রয়েছেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মধ্যে একমাত্র শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ছাড়া সিলেট আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
বিষয়টি নিয়ে তারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করছেন না। তবে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এ নিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। এ ব্যাপারে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শও চাইছেন।
নৌকার টিকিটের জন্য তারা মাঠে থাকবেন কি-না, এ নিয়েও মতামত জানতে চাইছেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের তরফ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ ৪ নেতাসহ কয়েকজন নেতা ইতিমধ্যে ঢাকায় যাওয়ার মনোস্থির করছেন বলে জানিয়েছেন সিলেটের নেতারা। এ নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনার জন্য তারা দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, আনোয়ারুজ্জামান মেয়র প্রার্থী হলে খুশি হবেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী। কারণ, এ আসনে এতদিন নৌকার টিকিটের জন্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন আনোয়ারুজ্জামান। এখন আনোয়ার সিটিতে চলে আসায় পথ সহজ হলো শফিকুর রহমান চৌধুরীর।
এক্ষেত্রে দু’জন দীর্ঘদিনের দূরত্ব ঘুঁচিয়ে কাছাকাছিও চলে আসার আভাস মিলেছে। আনোয়ারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন ইতিমধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী টেলিফোনে শফিকুর রহমান চৌধুরীর দোয়া নিয়েছেন। শফিক চৌধুরী আনোয়াকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রার্থী তালিকায় থাকা কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন আনোয়ারুজ্জামান। তাদের সহযোগিতাও কামনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে সিলেটে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তাকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিশ্লেষণ।
Leave a Reply