বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৪৭

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সংবাদ সম্মেলন

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সংবাদ সম্মেলন

দক্ষিণ এশিয়দের মধ্যে আক্রান্তের হার ৫০ শতাংশ বেশী

নিউজ ডেস্ক, লন্ডন / ১৭৬
প্রকাশ কাল: শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩

ব্রিটেনে দক্ষিণ এশিয় মানুষদের মধ্যে হার্ট ডিজিজে আক্রান্তের হার অন্যদের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশী বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় ওঠেছে এসেছে। বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত বিশিষজ্ঞরা।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ছিলো বিশ্ব হার্ট দিবস। সারা বিশ্বের সব মানুষকে তাদের হার্টের যত্নের প্রতি মনোযোগী করতে এ দিবস পালন করা হয়। ওইদিনই লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে উক্ত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন এনএইচএস নর্থ লণ্ডন কার্ডিয়াক অপারেশনাল ডেলিভারি নেটওয়ার্কের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিলো ‘প্রথমেই আমাদের হার্টকে জানি’।

কাকতালীয়ভাবে এনএইচএস নর্থ লণ্ডন কার্ডিয়াক অপারেশনের ডেলিভারি নেটওয়ার্কের উত্তর লণ্ডনের সাউথ এশিয়ান কমিউনিটিতে এ সংক্রান্ত প্রচারাভিযানও এই সময়েই চলে আসছে। জীবন বাঁচাতে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন করাই তাদের এই প্রচারাভিযানের মূল লক্ষ্য। দ্রুত সাহায্য পাওয়ার জন্য হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাব্য লক্ষণ এবং নিরাপদ নয় এমন বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা যে অপরিহার্য সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা হার্ট অ্যাটাকের বিভিন্ন লক্ষণ এবং কারো হার্ট অ্যাটক হলে করণীয় সম্পর্কে সবিস্তারে তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ‘ফেইস অব এনএইচএস’ খ্যাত বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত জিপি ডা. ফারজানা হোসাইন এবং হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর সেরে ওঠার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন আসিফ হক।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে এনএইচএস ইংল্যাণ্ড প্রকাশিত এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, লণ্ডনে দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত এই সমীক্ষায় দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশী (৫২%) হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো চেনার ব্যাপারে খুব একটা আত্মবিশ্বাসী নন। তারা মনে করেন, লক্ষণগুলো তারা নাও চিনতে পারেন।

এছাড়াও লণ্ডনে বসবাসকারী প্রায় অর্ধেক (৪৬%) দক্ষিণ এশীয় জানিয়েছেন, তাদের বা তাদের কাছের মানুষের বুকে ব্যথা উঠলেও তারা ৯৯৯-এ ফোন করবেন না। সবাই জানে, বুকে ব্যথা হচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ।

উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যক্তিভেদে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে বুক চেপে আসা বা অস্বস্তি হওয়া হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে প্রায় সবাই অনুভব করেন। প্রতি ক্ষেত্রেই যে এই লক্ষণগুলোই গুরুতরভাবে দেখা যাবে তা নয়। কেউ কেউ অন্য রকমও অনুভব করতে পারেন, যেমন শ্বাসকষ্ট, অসুস্থ বোধ করা এবং পিঠ বা চোয়ালে ব্যথা। এসব ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা নাও থাকতে পারে। কেউ যদি হার্ট অ্যাটাকের এসব লক্ষণ অনুভব করেন তাহলে তার অবশ্যই ৯৯৯-এ ফোন করা উচিত।

দ্রুত চিকিৎসা পেলে হার্ট অ্যাটাক থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে বলেও তারা মত প্রকাশ করেন। তারা আরো বলেন, সাধারণত প্রতি ১০জনের মধ্যে অন্তত সাতজন হার্ট অ্যাটাক থেকে সেরে ওঠেন। এই হার প্রতি ১০জনের মধ্যে নয়জনে উন্নীত করা যেতে পারে যদি রুগীকে সময় মতো হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- হার্ট অ্যাটাকের শিকার সাউথ উডফোর্ডের ইংরেজি শিক্ষক আসিফ হক। তিনি তাঁর হার্ট অ্যাটাকের ধরণ এবং সেরে ওঠার বর্ণনা দিয়ে বলেন, মধ্য চল্লিশে হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। সময় মতো চিকিৎসা তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছে। তিনি বলেন, ‘কী ঘটছে তা অস্বীকার না করে চিকিৎসা নেয়া অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে আপনার লক্ষণগুলো খুব গুরুতর মনে হচ্ছে না। তবে বিষয়টি আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে। আমার মনে হচ্ছিল (হার্ট অ্যাটকের সময়) আমার ফুড পয়জন বা খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়েছে। ঘাড়ের ঠিক পেছনে পাকস্থলির ওপরের অংশে ব্যথা হচ্ছিল। পরবর্তী তিনদিন এই ব্যথা একই ভাবে অব্যাহত ছিল। এরপরই আমার মনে হয়, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উঠিত। ইসিজি করার পর আমি বুঝতে পারি, বিষয়টি কতটা গুরুতর। আমি যদি আরো আগে সাহায্য চাইতাম তাহলে আমার হার্ট ৩০ শতাংশ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারত।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এনএইচএস ইংল্যাণ্ড পরিচালিত সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, হার্ট অ্যাটাক ও কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা নিয়েই সন্দিহান বহু মানুষ। লণ্ডনে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী দুই-তৃতীয়াংশ দক্ষিণ এশীয় এই দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। প্রতি চারজনে একজন (৩৮%) মনে করেন, হার্ট অ্যাটকেরই আরেক নাম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। যা গুরুতর ভুল।

হার্টে রক্ত সরবরাহ কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক হয়। এমন পরিস্থিতি হলে হার্টে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় । যা পেশিকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি জ্ঞান হারান না, তার নিশ্বাসও বন্ধ হয় না।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। হঠাৎ করে এ সংকট দেখা দেয়। কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই ওই ব্যক্তি জ্ঞান হারান। তাদের হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তাদের পালস খুঁজে পাওয়া যায় না। এ সময় কোনো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না হলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে।

তারা বলেন, অন্যদের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা মানুষের মধ্যে করোনারি হার্ট ডিজিজে আক্রান্তের হার ৫০ শতাংশ বেশী হার্ট অ্যাটাকের প্রধানতম ঝুঁকি এটি। কাজেই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ এবং এর থেকে দ্রুত সুস্থতা পাওয়ার জন্য সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরী।

লণ্ডনের বার্টস হার্ট সেন্টার এবং ইউসিএলের কনসালটেন্ট কার্ডিওলোজিস্ট অধ্যাপক রিয়াজ প্যাটেল লণ্ডনবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাব্য লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আপনার বা আপনার কাছের কারো মধ্যে যদি হার্ট অ্যাটাকের কোনো লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে প্রথমেই আপনার উচিত ৯৯৯-এ ফোন করা। চিকিৎসক হিসেবে আমরা আপনাদের দ্রুততর সময়ের মধ্যে আমাদের সামনে দেখতে চাই। খুব বেশী দেরী হয়ে যাওয়ার আগেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা এবং সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হলে প্রাণ বাঁচানো সহজ হয়।

হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ বুকে ব্যথা । যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের বাকি লক্ষণগুলোর মধ্যে আছেণ্ড বুকে ব্যথা, চাপ, ভার অনুভব করা, শরীরের অন্য অংশে ব্যথা অনুভব করা (এমন মনে হতে পারে, বুক থেকে শরীরের অন্য অংশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ছে) যেমন দুই হাত, কাঁধ, চোয়াল, পিঠ ও পেট, মাথা হালকা হয়ে যাওয়া বা মাথা ঘোরা, ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট, বমি বমিভাব বা বমি হওয়া, তীব্র অস্থিরতা, কফ বা কাশি।

এনএইচএস থেকে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইংল্যাণ্ডে ২০২১/২২ সালে হার্ট অ্যাটাকের কারণে ৮৪ হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়। যা এর আগের বছরের তুলনায় ৭ হাজার বেশী। কোভিড-১৯ মহামারির ওই সময়ে অবশ্য অনেকেই হার্ট অ্যাটাকের অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালে যেতে ভয় পেতেন।

এ ব্যাপারে আরো জানতে nhs.uk/heartattack ওয়েবসাইট ভিজিট করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এসংক্রান্ত প্রথম সার্ভেটি পরিচালনা করে সেনসাসওয়াইড। এ বছরের ৪ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত পরিচালিত এই সমীক্ষায় ১৬ বছরের বেশি বয়সী ২ হাজার ৩ জন অংশ নেন। সেনসাসওয়াইড মার্কেট রিসার্চ সোসাইটির অধস্তন একটি সংস্থা। এটি ইসোমারের বেঁধে দেয়া নিয়মের নিরীখে চলে।

‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের আরেক নাম হার্ট অ্যাটাক’-এ মন্তব্যের সঙ্গে যারা একমত এবং ‘হার্ট অ্যাটাক ও কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মধ্যে পার্থক্য কী’-এ প্রশ্নের জবাবে যারা ‘না’ বলেছে তাদের সমন্বয়ে এই সমীক্ষা তৈরী করা হয়েছে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2023