কয়েক দিন আগে সিলেটের অগ্রগামী স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
গতকাল বিক্ষোভ-আন্দোলনের মুখে সিলেটের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্লুবার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হুসনে আরা বেগম পদত্যাগ করেছেন। কয়েকদিন ধরে ব্লুবার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করে আসছেন।
সিলেটের স্কুলে স্কুলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। চলছে বিক্ষোভও। স্কুল প্রধানের পদত্যাগসহ নানা দাবিতে শিক্ষার্থীরা সরব হয়েছে। চেয়ার দখলে রাখা প্রধানদের সরিয়ে দিতে দেয়া হচ্ছে আল্টিমেটামও। পাশাপাশি যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে।
গতকাল সকাল থেকে তা প্রকট আকার ধারণ করে। সকাল থেকেই ছাত্রছাত্রীরা অধ্যক্ষকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে বাধ্য হয়ে হুসনে আরা বেগম অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে ব্লুবার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের অংকের শিক্ষক দীপক চৌধুরী বুলবুল ক্যাম্পাস থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যান। এ সময় কিছু শিক্ষার্থী মারমুখী হলে অন্য ছাত্রছাত্রীরা তাকে আগলে রিকশায় তুলে দেন।
এদিকে- সিলেটের পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয়েও বিক্ষোভ হয়েছে। নানা দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন। দুপুরে সিলেট নগরীর ঝর্ণারপাড়ের কাজী জালাল উদ্দিন বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করে।
এ সময় তারা এসএসসি ২০২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানিহা আক্তার সূচনার হত্যার বিচার দাবি করে। সকাল থেকে নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা নানা দাবিতে বিক্ষোভ করে। এদিকে- জালালাবাদ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষককদের অযৌক্তিকভাবে অপসারণের দাবির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সিলেটের গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণ সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এরশাদ আলী পদত্যাগ করেছেন। বেলা ১১টার দিকে তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। এরশাদের পদত্যাগের জন্য গত কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, গত ১লা আগস্ট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এরশাদ আলী কলেজে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সভা করেছেন।
এ ছাড়াও অধ্যক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে পোস্ট করেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ এরশাদ আলীর পদত্যাগ দাবি করেন।
একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে কলেজ ত্যাগ করেন। অধ্যক্ষ এরশাদ আলী ২০২৩ সালের ১৫ই অক্টোবর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছিলেন।
গতকাল সকালে জালালাবাদ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নগরীর মির্জাজাঙ্গাল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভিন্ন প্রড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে মানবন্ধন পালন করে। পরে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। মানবন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে এদেশের শিক্ষার্থীরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে।
কিছু কুচক্রী মহল আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে জালালাবাদ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. এম এ মুজাহিদ খান, উপাধ্যক্ষ ডা. ইমদাদুল হক ও সিনিয়র প্রভাষক ডা. শফিকুল ইসলামকে অপসারণে নান ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব আলম, সাদিকুল ইসলাম, ছালিম উদ্দিন, আতাউর রহমান, জাহিদুল ইসলাম রিমন, মো. আলম খান, হোসাইন আহমদ, মো. ওয়াহিদ, আবু সুফিয়ান, মোা. জিহাদ, মো. তৈমুল হক, খাদিজা আক্তার, মাহি আক্তার, পলি রানী নাথ, কনিকা দাস প্রমুখ।
Leave a Reply