শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৮

টাওয়ার হ্যামলেটসে হোমলেসনেস এর প্রস্তাবিত নতুন পলিসি সাসপেন্ড

টাওয়ার হ্যামলেটসে হোমলেসনেস এর প্রস্তাবিত নতুন পলিসি সাসপেন্ড

গৃহহীনতার শিকারদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের হোমলেসনেস প্লেসমেন্ট পলিসিতে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর বাস্তবায়ন সাসপেন্ড করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।

বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের কেবিনেট মিটিংয়ে এই পলিসি বা নীতিতে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে মেয়র বলেন, প্রস্তাবিত পলিসিতে পরিবর্তনগুলো প্রসঙ্গে আমরা বারার বাসিন্দাদের কাছ থেকে বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি ঘনিষ্ঠভাবে শুনেছি। আমি সব সময় এটা দৃঢ়তার সাথে বলি যে আমি একজন শ্রোতা বা লিসেনিং মেয়র, এটি হচ্ছে একটি লিসেনিং কাউন্সিল এবং এখানে আমরা যা কিছু করি তার মূলে থাকেন বাসিন্দারা।

এই শোনার ফলস্বরূপই, আমি হোমলেসনেস  একোমোডেশন প্লেসমেন্ট নীতিতে প্রস্তাবিত পরিবর্তনের বাস্তবায়ন স্থগিত করছি, যাতে আমাদের সঠিকভাবে পর্যালোচনা এবং মানুষের জন্য এর প্রভাব মূল্যায়ন করার জন্য আরও সময় দেওয়া যায়।

মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে এই প্রস্তাবিত পলিসিতে আনা পরিবর্তন সম্পর্কে অনেক ভীতিকর এবং ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।  প্রায়শই এমনটা করা হয় এমন একটি উপায়ে যে — আমাদের বাসিন্দাদের জীবন নিয়ে রাজনীতি করে। নির্বাহী মেয়র হিসেবে আমার ভূমিকা হল রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের বাসিন্দারা আসলে কী বলছে তা শোনা এবং সেই অনুযায়ি সিদ্ধান্ত নেয়া।

উল্লেখ্য, বাড়িঘরের তীব্র ঘাটতি এবং সংশ্লিষ্ট আর্থিক চাপের কারণে, টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিল কয়েক মাস আগে লন্ডনের অন্যান্য কাউন্সিলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তার বাসস্থান প্লেসমেন্ট নীতির পর্যালোচনা করে।

জাতীয়ভাবে বাড়ি নির্মাণের নিম্ন হার, সরকারী বেনিফিট ক্যাপ, এবং নো ফল্ট এভিকশন (‘কোন দোষ নেই’ উচ্ছেদ) বৃদ্ধি আমাদের হোমলেসনেস সার্ভিসের ওপর ভীষণভাবে চাপ তৈরি করেছে এবং ইতিমধ্যে সম্প্রসারিত অস্থায়ী আবাসন আমাদের হাউজিং স্টকের ওপর অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি করেছে।

এই চাপের ফলাফলের অর্থ হল — যেমনটি লন্ডন এবং বিস্তৃত যুক্তরাজ্য জুড়েই দৃশ্যমান — টাওয়ার হ্যামলেটসের অনেক পরিবার উপযুক্ত, উচ্চ—মানের আবাসিক সুবিধার পরিবর্তে অস্থায়ীভাবে হোটেলে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।

কেবিনেট মিটিংয়ে  নির্বাহী মেয়র অস্থায়ীভাবে দীর্ঘদিন হোটেলে থাকার প্রসঙ্গে বলেন, “এই ব্যবস্থাটি যেমন আর্থিকভাবে টেকসই নয়, তেনি এটি কিছু কাউন্সিলকে দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং এর একটি মানবিক মূল্য রয়েছে যা আমার কাছে সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য, এবং আমি সমাধান করার চেষ্টা করেছি।”

পলিসিটি পর্যালোচনা করার একটি স্বাভাবিক ক্ষেত্র ছিল এবং আমি নীতিটি যত্ন সহকারে মূল্যায়ন করার জন্য অফিসারদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। পর্যালোচনার প্রধান সুপারিশ ছিল যে আমরা টাওয়ার হ্যামলেটসে গৃহহীন ব্যক্তি এবং পরিবারগুলির স্থানান্তরের উপর বর্তমানে আরোপিত ৯০—মিনিটের সীমা অপসারণ করি।

“কাউন্সিলের হোমলেসনেস পলিসিতে প্রস্তাবিত সংশোধনীর সুপারিশ করার পর থেকে দুটি উল্লেখযোগ্য বিষয় পরিবর্তিত হয়েছে” উল্লেখ করে মেয়র বলেন, “প্রথমত— সরকারে পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকার স্থানীয় সরকারের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের বিষয়ে বিস্তৃত এবং প্রতিশ্রুতিপূর্ণভাবে কথা বলেছে, যার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল আমাদের শহরগুলিকে ধ্বংস করে এমন আবাসন এবং গৃহহীনতার সংকট মোকাবেলা এবং সমাধানের জন্য কাউন্সিলগুলির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা।

আর দ্বিতীয়টি হলো — আমি ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত যে আমরা নতুন যে উপাত্ত পেয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে যে, গত এক বছরে, আমাদের বিশেষ প্রচেষ্ঠায় আমরা ২০২৩ সালের অক্টোবরে টাওয়ার হ্যামলেটসের হোটেলগুলিতে বাসস্থানের জন্য অপেক্ষারত পরিবারের সংখ্যা ৪৩ থেকে কমিয়ে এনেছি। চলতি সপ্তাহে এই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ১ টি পরিবারে।

যদিও একটি পরিবার স্থায়ী আবাসনের জন্য অনেক বেশি দিন ধরে হোটেলে অপেক্ষা করছে বলে আমি উদ্বিগ্ন, তবে তা সত্ত্বেও গত বছর আমরা এই সময় কোথায় ছিলাম তা বিবেচনা করে আমি বলতে পারি এটি অসাধারণ অগ্রগতি।

ইউকে’র কাউন্সিলগুলোর হোমলেসনেস ব্যয় দ্বীগুন হয়ে ২.৪৪ বিলিয়ন পাউন্ড
শুধু লন্ডন নয়, গোটা ইংল্যান্ডের অন্যান্য বারার মত টাওয়ার হ্যামলেটসেও হাউজিংয়ের স্বল্পতার সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। বর্তমানে প্রায় ২১ হাজার পরিবার অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে। অন্যদিকে হোমলেস পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দাসহ ইউরোপ ও অন্যান্য  দেশ থেকে আগত টাওয়ার হ্যামলেটসে বসবাসকারী শত শত বাসিন্দা হোমলেস হচ্ছেন।

তারা যে সব বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিবার পরিজনসহ থাকছেন সেখানে বাড়ির মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধির ফলে ও উচ্ছেদের ফলে বিপুল সংখ্যক ভাড়াটিয়া গৃহহীন হওয়ার ঝুকিতে পড়ছেন। হোমলেস ইস্যু মোকাবেলায় প্রতি বছর ৭ মিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।

হোমলেস ইস্যুতে বিভিন্ন কাউন্সিল দেউলিয়া হওয়ার পথে। পার্শ্ববর্তী নিউহ্যাম কাউন্সিল চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। গোটা লন্ডনের মধ্যে নিউহ্যাম ও ব্রেন্ট কাউন্সিলে গৃহহীনদের সংখ্যা বেশী।

ন্যাশনাল অডিট অফিস অনুসারে ২০০০ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে হোমলেসনেস বা গৃহহীনতা সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবেলায় স্থানীয় কাউন্সিলগুলোর ব্যয় ২০১০/১১ সালে যেখানে ছিলো ১.১৪ বিলিয়ন পাউন্ড, তা বেড়ে ২০২২/২৩—এ দাঁড়িয়েছে ২.৪৪ বিলিয়ন পাউন্ড।

টাওয়ার হ্যামলেটসের হোমলেস একোমোডেশন প্লেসমেন্ট পলিসি হচ্ছে কাউন্সিলের হাউজিং বিষয়ক বহু পদক্ষেপের একটি। যেমন-
— কেসগুলি আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে এবং সময়মত সিদ্ধান্ত নিতে ৩৪ জন অতিরিক্ত ফ্রন্ট—লাইন কর্মী নিয়োগ
— ডিসেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে বাণিজ্যিক হোটেল থেকে বের হয়ে আসার কৌশল গ্রহন
— ক্রাইসিস প্লেসমেন্ট এবং আরও সময়োপযোগী হস্তক্ষেপ এড়াতে আমাদের রেসিডেন্টস হাবের খোলার সময় বর্ধিত করা হয়েছে।
— প্রতিরোধ এবং অন্যান্য আবাসন বিকল্পগুলির উপর ফোকাস সহ কর্মীদের জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ প্যাকেজ।
— ল্যান্ডলর্ডদের সাথে সম্পৃক্ততা, দীর্ঘকালীন লীজের ব্যবস্থার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা সংক্রান্ত ক্রয় কৌশল
— বাসিন্দাদের জন্য দুটি প্রিভেনশন গ্র্যান্টস বা অনুদান তহবিল
— বারায় স্থায়ী এবং অস্থায়ী একোমোডেশন বাড়ি কেনার জন্য ৪৭ মিলিয়ন পাউন্ডের সরকারি তহবিল দ্বারা সমর্থিত অধিগ্রহণ কর্মসূচি।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024