শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৩

পূর্ব লন্ডনে চাঞ্চল্যকর আতেক হত্যাকান্ডে ৩০ বছরেও ধরা পড়েনি কোনো আসামী, বিচারের দাবীতে মেয়ের সংবাদ সম্মেলন

পূর্ব লন্ডনে চাঞ্চল্যকর আতেক হত্যাকান্ডে ৩০ বছরেও ধরা পড়েনি কোনো আসামী, বিচারের দাবীতে মেয়ের সংবাদ সম্মেলন

পূর্ব লন্ডনে ৩০ বছর যাবত পিতা হত্যার দাবী জানিয়ে আসছেন মেয়ে । ১৯৯৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ইস্টহ্যামে নিজ বাসার সামনে নিহত হয়েছিলেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশী ব্যবসায়ী শাহ আতেক হোসাইন সেলিম।

সেই থেকে যুক্তরাজ্য পুলিশের কাছে বাবা হত্যার বিচার দাবী জানিয়ে আসছেন তার মেয়ে বিজনেস এনালিস্ট ইয়াসমিন হোসাইন। এ বছর তাঁর পিতা হত্যার ৩০ বছর পূর্তিতে লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে আবারও বিচার দাবী করলেন।

২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবী জানান। তিনি জানান, তাঁর বাবা হত্যাকান্ডের তদন্ত স্থবির হয়ে পড়েছে। তাই এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চান যেন তারা বাবা হত্যার তদন্ত  অব্যাহত রাখে।

সংবাদ সম্মেলনে বাবা হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তাঁর বাবা ৭ বছর বয়সে পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন। তাঁর দেশের বাড়ি সিলেটের জগন্নাথপুর উপজেলায়। ৩০ বছর বয়সেই তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। সারে এলাকায় তাদের পরিবারিক ব্যবসা ওয়ারলিংহাম তন্দুরি পরিচালনা করতেন।

তিনি ছিলেন ধর্মপরায়ন, পরোপকারি ও পরিবার-বান্ধব একজন মানুষ। ঘটনার রাত দেড়টার দিকে রেস্টুরেন্টে কাজ শেষে বাসার সামনে পৌছতেই তিনি হামলার শিকার হোন। তিনি বাড়ির ড্রাইভওয়েতে গাড়ি থেকে বের হতেই দুই ব্যক্তি তার বুকের বাম দিকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তিনি রক্তাক্ত জখম অবস্থায় বাসার পাশের একটি টেলিফোন বুথে জরুরী ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করেন। এরপর ফিরে এসে তাঁর বাড়ির দরজায় নক করেন।

ইয়াসমিন হোসাইন ও তার মা ঘরের দরজা খুলে দিলে রক্তাক্ত যখম আতেক হোসাইন ঘরে প্রবেশ করেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন।  রাত ৩টার দিকে পুলিশ ও অ্যাম্বুল্যান্স ঘটনাস্থলে পৌছে। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যূর আগে তিনি বলতে সক্ষম হোন, তাঁকে দুইজন এশিয়ান ছুরিকাঘাত করেছে।

এরপর পোস্ট মর্টেম শেষে ৭ নভেম্বর ইস্ট লন্ডন মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পূর্ব লন্ডনের উডগ্রেঞ্জ রোড গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। বাবার মৃত্যুর পর ১০ বছর বয়সী ইয়াসমিন হোসাইন, ৭ মাস ও ৭ বছর বয়সী দুই ভাই ও মাকে দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করতে হয়েছে । অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে তারা বড় হয়েছেন।

পুলিশ তদন্ত শুরু করে কিন্তু হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা করতে না পেরে হাল ছেড়ে দেয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে  ৫ বছর, ১০ বছর, ২০ বছর পূর্তিতে তিনি বিভিন্নভাবে পুলিশের ওপর চাপ অব্যাহত রাখেন। এবার ১৮ সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পূর্তিতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বাবা হত্যার বিচার চাইলেন। তিনি মৃত্যুর আগে তার বাবার হত্যার বিচার দেখে যেতে চান।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পেরিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলেও হয়তো আগে বলেন নি। কিন্তু সত্য কখনো চাপা থাকে না। একদিন প্রকাশ হবেই। আমি আশা করি আমার বাবার হত্যাকাণ্ডের রহস্য একদিন উন্মোচন হবেই। যদি এ ব্যাপারে কারো কিছু জানা থাকে তাহলে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, একটি পরিবারকে মানসিকভাবে শান্তনা দেওয়ার জন্য প্রকৃত সত্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। আপনার নাম পরিচয় গোপন রেখে পুলিশকে অবহিত করুন।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পার হলেও তার বাবার স্মৃতি সবসময় অম্লান হয়ে আছে। বাবার স্মৃতি মুহুর্তের জন্য ভুলতে পারেন না। তারা এখনও মানসিক যন্ত্রনার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। পুলিশ যদি আসামীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করে তাহলে তার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।

ইয়াসমিন হোসাইন আরো জানান, পুলিশ তাঁকে জানিয়েছে যে, আতেক হোসাইন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বর্তমানে সচল নয় । তবে কোনো হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম কখনো একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয় না।

এই মামলাটি পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম রিভিউ গ্রুপ গত ১৩ আগস্ট পর্যালোচনা করেছে। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাদের হাতে এলে তারা সেটি পর্যালোচনা করবেন এবং হত্যাকান্ড সম্পর্কে কারো কাছে কোনো তথ্য জানা থাকলে পুলিশকে অবহিত করতে আহবান জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইয়াসমিন হোসাইনের স্বামী শাহনূর সোবহান, মামা এমদাদ রহমান, ফুফাতো ভাই রাসেল মজুমদার ও মাওলানা আব্দুর রহমান মাদানী উপস্থিত ছিলেন।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024