বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৭

ব্রিটেনে প্রান্তিক পর্যায়ের অসুস্থ মানুষকে মৃত্যুতে সহায়তা বিষয়ক বিল পাস

ব্রিটেনে প্রান্তিক পর্যায়ের অসুস্থ মানুষকে মৃত্যুতে সহায়তা বিষয়ক বিল পাস

তীব্র সমালোচনা, বিতর্কের পর ব্রিটেনে নতুন একটি আইন পাস হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

যেসব প্রবীণ ভয়াবহ অসুস্থতায় ভুগছেন চাইলে তারা ৬ মাসের মধ্যে তাদের জীবনাবসান ঘটাতে পারেন। এমন প্রত্যাশার পক্ষে রায় দিয়ে শুক্রবার এমপিরা আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংক্রান্ত বিলে ভোট দিয়েছেন।

ফলে একদিকে কান্না, অন্যদিকে আশা এবং ভীতি দেখা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, লেবার দলের এমপি কিম লিডবিটার ঐতিহাসিক এই আইনের প্রস্তাবক।

বিবিসি লিখেছে, বিলটি পাস হওয়ার আগে পার্লামেন্টের বাইরে পক্ষ ও বিপক্ষে উভয়ে আলাদা স্থানে সমবেত হতে থাকেন।

এমপি লিডবিটারসের বিলের পক্ষে যারা তারা অধিকারকর্মী মিলিসেন্ট ফসেটের মূর্তির কাছে পার্লামেন্ট স্কয়ারের পশ্চিম পাশে অবস্থান নেন। সেখানে সবার মাথায় ছিল গোলাপি হ্যাট ও জাম্পার। এসব সরবরাহ দিয়েছে ডিগনিটি ইন ডাইং গ্রুপ।

তার মধ্যে আমান্ডা অন্যতম। তিনি যোগ দিয়েছেন ব্রাইটন থেকে। ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন বন্ধু সহ যেসব মানুষ জীবনের শেষ প্রান্তে রয়েছেন তাদের দেখাশোনা করেন তিনি।

স্মরণ করে, তার বন্ধু তাকে অনুরোধ করেছেন- আর সহ্য করতে পারছিনা। আমাকে এখনই মেরে ফেলো। কোনো প্রিয়জনের কাছ থেকে এমন কথা শোনা যে কারো জন্য খুব কষ্টের।

সু নামে আরেকজন নারী মাথায় গোলাপী হ্যাট পরে অবস্থান নেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি এই দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন হয়ে থাকবে। তার কাছ থেকে অর্ধ মিনিট হাঁটার দূরত্বে এক প্রান্তে দাঁড়ানো বিলের বিরোধীরা।

বিধ্বস্ত একজন বিচারকের ১০ ফুট লম্বা পাপেটের পাশে যোগ দিয়েছেন তারা। ওই বিচারকের হাতে একটি বিশাল আকারের সিরিঞ্জ। আকাশের দিকে একটি আঙ্গুল তুলে দাঁড়িয়ে আছেন।

সেখানে উপস্থিতরা স্লোগান দিচ্ছেন- এই বিলকে বন্ধ করো। অসুস্থ মানুষদের হত্যা করো না। হান্নাহ একটু দূরে দাঁড়িয়ে। তিনি আশঙ্কা করেন এই বিল পাস হলে বিকলাঙ্গ মানুষগুলোকে আমরা যেভাবে দেখি তার ধারা বদলে যেতে পারে।

নিজের পিতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তাকে ৬ মাস সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি চার বছর বেঁচে ছিলেন। এই যে চার বছর বেঁচে ছিলেন এর অর্থ হলো তিনি তার নাতিপুতিদের সঙ্গ দিতে পেরেছেন।

ওই বিক্ষোভে যোগ দেয়া উভয়পক্ষের প্রতিজন মানুষেরই ব্যক্তিগত কাহিনী আছে। তাদের ওয়েস্টমিনস্টারে শুক্রবারে জমায়েত হওয়ার কারণ ছিল। গত বছর পর্যন্ত নিজের মায়ের দেখাশোনা করেছেন জেন।

তিনি বলেন, ওই সময়টা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু তা ছিল মূল্যবান সময়। তিনি মনে করেন এই বিল পাস হলে তার মায়ের মতো মানুষদেরকে একটি প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়া হবে। জানতে চাওয়া হবে, তিনি মারা যেতে সহায়তা চান কিনা।

তিনি বলেন, আমি জানি এসব সিদ্ধান্তে একজন বিচারকের সংশ্লিষ্টতা থাকবে। কিন্তু কিভাবে কার ভাগ্যে কি আছে তা নির্ধারণ করবেন তারা।

কেউ হয়তো মুখে বলতে পারেন যে, তিনি মারা যেতে চান। কিন্তু একজন বিচারক কিভাবে জানবেন যে, ওই ব্যক্তির মাথায় আসলে কি চলছে।

ওদিকে পার্লামেন্টের ভিতরে এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা হয়েছে। লেবার দলের এমপি লিডবিটার তার বিলের ওপর বিতর্ক শুরু করেছেন। স্পেন ভ্যালি থেকে নির্বাচিত তিনি।

এর আগে এই আসনে প্রতিনিধিত্ব করছিলেন তার বোন জো কক্স। তাকে ২০১৬  সালে হত্যা করা হয়। পার্লামেন্টের পরিবেশ সাধারণ সময়ের মতোই পাল্টাপাল্টি ছিল। তবে তার মধ্যে ছিল চিন্তা ও শ্রদ্ধা।

কিন্তু পার্লামেন্টের বাইরে ছিল উত্তেজনা। পক্ষ-বিপক্ষ উভয়েই তাদের নিজেদের এলাকায় অবস্থান নেয়। কেউ অবস্থান নেয় পার্লামেন্ট গেটের কাছে।

কেউ কেউ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। মারা যাওয়ায় সহায়তা বিষয়ক এই বিলের পক্ষে থাকা এক নারী তার পিতার ভয়াবহতার ছবি উপরে তুলে ধরেছিলেন। তার পিতা বেঁচে আছেন। তবে তিনি বেদনায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন।

তিনি পার্লামেন্টের দিকে এবং তারপর ছবির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, পার্লামেন্টে থাকা ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাই আমাকে তারা বলুক কেন এটা চলতে থাকবে। পাশেই এই বিলের বিরোধিতা করে একটি প্লাকার্ড তুলে ধরেছেন একজন নারী।

তার দিকে প্রথম নারী চিৎকার করে বললেন- আপনি যা দেখাচ্ছেন তা অপরাধ। আপনি কি বলতে চাইছেন আমার পিতার দেখাশোনা করা উচিত নয় আমার।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024