আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘রজব মাসের আমল’। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ‘ইসলাম বিভাগ প্রধান’ ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান।
রজব’ শব্দের অর্থ সম্মানিত। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম মাস রজব। এ মাস মুমিনের দরজায় রমজানের আগমনী বার্তা পৌঁছায়। ইসলামে রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক।
বছরের যে চারটি মাসকে আল্লাহতায়ালা শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য দিয়েছেন, সেগুলোকে ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত মাস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রজব এই চার মাসের অন্যতম।
ইসলামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে রজব মাসের যোগসূত্র ও সম্পৃক্ততা রয়েছে। প্রিয় রাসুল (সা.) রজব মাসে বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে আকাশপথে মেরাজে গমন করেছিলেন। তার নবুয়ত লাভের পরবর্তী ঘটনাগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বিস্ময়কর ও অভাবনীয় ঘটনা।
ইসলামপূর্ব জাহেলিয়াতের যুগে আরবরা এ মাসকে অন্য মাসের তুলনায় অধিক সম্মান করত। এজন্য তারা এ মাসের নাম রেখেছিল- রজব।
ইসলাম আগমনের পর বছরে ১২ মাসের মধ্য থেকে রজবসহ ৪টি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা সম্মানিত মাস বলে ঘোষণা করা হয়।
এ সম্পর্কে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি, তন্মধ্যে ৪টি (সম্মানিত হওয়ার কারণে) নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।’ -সূরা তাওবা: ৩৬
নিষিদ্ধ ও সম্মানিত মাসগুলোর মধ্যে রজব একটি। সাহাবি হজরত আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন যেভাবে সময় নির্ধারিত ছিল তা ফিরে এসেছে।
১২ মাসে এক বছর। এর মধ্যে ৪ মাস নিষিদ্ধ ও সম্মানিত। তিনটি মাস পরপর জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং মুজারের মাস রজব- যা জমাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, ‘এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে, বাকি মাসগুলোয় ইবাদত করা সহজ হয়। এ মাসগুলোতে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্য মাসেও গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়।’ -আহকামুল কোরআন: ৩/১৬৩
তাই আশহুরে হুরুমের অন্তর্গত রজব মাসের মর্যাদা রক্ষায় অধিক যত্নবান হতে হবে।
রজব ও শাবান মাসে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি দোয়া বেশি বেশি পড়তেন। যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।
রজব ও শাবান মাস এলেই পবিত্র রমজানের আগমনী ঘোষিত হয়। বেশি ফজিলত ও মর্যাদার কারণে রজব ও শাবান মাসজুড়ে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দিষ্ট একটি দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন।
যে দোয়ায় রজব ও শাবান মাসের বরকত ও পবিত্র রমজান পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধির আবেদন ফুটে উঠেছে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এ দোয়াটি পড়তেন এবং মুসলিম উম্মাহকেও পড়তে বলেছেন-
اَللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান; ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শা’বান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত (হায়াত দিন) পৌঁছে দিন।’ (মিশকাত, বায়হাকি)
রজব মাস সব ঝগড়া-ফাসাদ, অন্যায় ও অনাচার থেকে মুক্ত। কুরআন-হাদিসে এ মাসসহ আশহুরে হারাম মাসে সব ধরনের রক্তপাত, যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ ঘোষণা করেছেন। এ মাসের শিক্ষাকে বছরের বাকি মাসগুলোতে বাস্তবায়নের প্রশিক্ষণও এ মাস।
Leave a Reply