আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা ও ফজিলত’। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ‘ইসলাম বিভাগ প্রধান’ ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান।
ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রমজান মাসের রোজা অন্যতম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় হিজরিতে কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা উম্মতের উপর সাওম ফরজ করেছেন।
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়; শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। ‘ (বুখারি, খণ্ড: ৩, হাদিস: ১,৭৭৮)। মাহে রমজান বছরের বাকি এগারো মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ মাস।
রমজানের রোজা কেউ যদি অস্বীকার করলে- সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এছাড়াও শরিয়ত সমর্থিত ওজর (অপারগতা) ছাড়া ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গকারী— মৌলিক ফরজ লংঘনকারী ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারীরূপে গণ্য। নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো ওজর বা অসুস্থতা ছাড়া রমজানের একটি রোজা পরিত্যাগ করবে- সে যদি ওই রোজার পরিবর্তে আজীবন রোজা রাখে তবু ওই এক রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না। (তিরমিজি, হাদিস: ৭২৩)
রমজানের রোজার ফজিলত: রোজার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীগণের ওপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা খোদাভীরু তথা তাকওয়াবান হতে পারো। (স–রা বাকারাহ, আয়াত ১৮৩)
শান্তি, অফুরন্ত রহমত, বরকত ও ফজিলতে পরিপূর্ণ এই রমজান মাস। এ রমজান মাসের রোজা রাখার ফজিলত অনেক। পবিত্র কোরআনের স–রা বাকারার অন্য আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যেই রমজান মাসে উপস্থিত থাকে, অর্থাৎ যে রমজান মাস পায়, তাকেই রোজা পালন করা আবশ্যক। কারণ এতে অশেষ কল্যাণ ও সমৃদ্ধি নিহিত রয়েছে। (সুরা বাকারাহ আয়াত: ১৮৬)
পবিত্র রমজানের ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি বিভিন্ন হাদিসের কিতাবগুলোতে অনেক হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে রমজানের রোজা রাখে, তার অতীত জীবনের যাবতীয় গুনাহগ–লো ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে রমজানে ইবাদত করে, তার অতীতের পাপগ–লো ক্ষমা করে দেয়া হবে। (এই হাদিসটি বুখারি ও মুসলিম শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে।)
রমজান ধৈর্য ও সবরের মাস:
এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিগণ খাওয়া-দাওয়া, বিবাহ-শাদি ও অন্যান্য সকল আচার-আচরণে যে ধৈর্য ও সবরের এত অধিক অনুশীলন করেন তা অন্য কোন মাসে বা অন্য কোন পর্বে করেন না। এমনিভাবে সিয়াম পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেয়া হয় তা অন্য কোন ইবাদতে পাওয়া যায় না।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন- إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ. الزمر: ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবে। সূরা যুমার: ১০
রমজান দোয়ার মাস:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা আমাদের সকলের সিয়াম সাধনাকে কবুল করুন। আমাদের ভাল কাজগুলোকে আমাদের জন্য নাজাতের উসিলা হিসেবে গ্রহন করুন। হে আল্লাহ! সিয়াম পালনকারীদের সিয়াম কবুল করুন, দানকারীদের দান কবুল করুন, রাত্রি জাগরণকারী ইবাদতকারীদের ইবাদত কবুল করুন, প্রার্থনা কারীদের প্রার্থনা কবুল করুন, আমাদের পূর্বের এবং পরের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন, এ মাস যেন আমাদের সকলের জন্য ক্ষমার মাস হয়। আমীন! আমীন, ইয়া রব্বাল আলামীন।
Leave a Reply