বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ১২:০৯

শেখ হাসিনার আমলে গোষ্ঠীই নির্ধারণ করত ডলারের দাম

শেখ হাসিনার আমলে গোষ্ঠীই নির্ধারণ করত ডলারের দাম

শেখ হাসিনার আমলে ডলারের আসল বিনিময় হার চেপে রেখে করা হয় কৃত্রিম মূল্য নির্ধারণ। উদ্দেশ্য, একটি গোষ্ঠীকে পাচারের সুবিধা দেয়া। আর এই কাজটিই হতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে দিয়ে। এমন অভিযোগ আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টদের।

তাদের অভিমত, ডলারের দাম বাজার ভিত্তিক না করায় আসেনি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রেমিট্যান্সও। এভাবেই অর্থনীতিকে চাপে ফেলা হয়েছিল বলে মত অর্থনীতিবিদদের।

বিগত সরকারের আমলে ডলারের বিনিময় হার চেপে রেখে কৃত্রিম মূল্য নির্ধারণের যে অভিযোগ, তার চিত্র স্পষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণে। আওয়ামী সরকারের টানা চারবার ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম মেয়াদ শেষে ২০১৫ সালে টাকার অবমূল্যায়ন ছিল ১০.৯৫ শতাংশ, পরের পাঁচ বছর শেষে ৮.০২ শতাংশ এবং শেষ পাঁচ বছরে দাঁড়ায় সাড়ে ৪১ টাকা।

বিনিময় হার চেপে রাখার কারণে কোভিডের পর হঠাৎ একেবারে বড় ধরনের ডলারের দাম বৃদ্ধি ব্যয় বাড়িয়ে দেয় জীবনযাত্রায়। এমন পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী সরকারের দায় ছিল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংক পিএলসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ করেই ডলারের দাম বাড়ানো হলে বড় একটি ধাক্কা তৈরি হয় দেশে।

ব্যাংক খাতের কোনো পরামর্শ কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রহণ করেনি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল বাশার বলেন, বিনিময় হার নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে সমালোচনা আছে। ডলারের বিনিময় হার ধরে রাখা ঠিক হয়নি। যদি ধীরে ধীরে আমরা সমন্বয় করতাম বাজারের সঙ্গে, সেটা চাপে পড়তো না।

জনতা ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.  ‍মুজিবর রহমান বলেন, আমরা ব্যাংকিং কমিউনিটি থেকে অনেক আগে থেকেই বাজারে বিনিময় হার ওপেন করে দেয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু করা হয়নি।

আইএমএফের ঋণের শর্ত হিসেবে- মুদ্রা বিনিময় হার বাজার ভিত্তিক করার চাপ সামাল দিতে, গত বছরের মে মাসে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হয়। এর আগ পর্যন্ত দাম ধরে রাখার উদ্দেশ্য ছিল একটি গোষ্ঠীকে সহায়তা করা, এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। ব্যাংক খাতের কোনো পরামর্শও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রহণ করেনি বলে জানান তারা।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর রেমিট্যান্সে যে গতি এসেছে তা আগে ছিল না। ডলারের দাম বাজারে ছেড়ে দেয়া ও হুন্ডি ব্যবসা থমকে যাওয়ায় এই আস্ফালন বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ডলার কোণঠাসা করে রেখে কম টাকায় ডলার কেনার সুযোগ দিয়ে একদিকে পাচারে সহায়তা করেছে বিগত সরকার। অন্যদিকে যারা ডলার আনতে চেয়েছেন, তাদের হিসাবে কম দিয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশ, অর্থনীতি।

বিনিময় হার নিয়ে সরকারের এমন নীতির ফলে দেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষতি হয়েছে বলে মত ব্যবসায়ীদের। মোটেক্স ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ কবির বলেন, দেশজ উৎপাদন না বাড়লে ডলারের দাম যতোই বেশি থাকুক না কেন, আমদানি বাড়াতেই হয়। এজন্য বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেশের উৎপাদন বাড়াতে হবে।

ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে ডলারকে শতভাগ বাজার ভিত্তিক করতে আইএমএফের চাপ কৌশলে সামাল দেয়ার কথা বলেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025