শীর্ষবিন্দু নিউজ: পারলেন না কামরান। মুহিতের সঙ্গে পাল্লা দিয়েও পারলেন না কামরান। দলের মনোনয়ন বোর্ডে লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতই পেলেন মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট। পিছিয়ে পড়লেন কামরান। সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের পর কামরান সিলেট-১ আসনের দিকে অপেক্ষায় তাকিয়ে ছিলেন। সেই লক্ষ্যে তিনি দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমাও দেন। কিন্তু মনোনয়ন কপালে জুটল না তার।
গতকাল রাতে এ খবর সিলেটে পৌঁছার পর সিলেটের কামরান অনুসারীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। একই সঙ্গে আরেক প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজের অনুসারীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর আনন্দের বন্যা বইছে সিলেটের মুহিত অনুসারীদের মধ্যে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল দুপুর পর্যন্ত সিলেটেই ছিলেন। তাকে হঠাৎ তলব করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়। ৬ মাস আগেও সিলেটে সরকার ও দলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। টানা ১৭ বছর তিনি শাসন করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশন। সিলেটের জনপ্রিয় নেতা হিসেবে কামরান অনেকটা পরিচিত ছিলেন। এ কারণে ২০০৮ সালে কামরান কারাগারে থেকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
এর আগে ২০০৩ সালে বিএনপির জামানায়ও কামরান সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে জয়লাভ করেন। ওই নির্বাচনে মেয়র কামরানের বিরুদ্ধে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান মাঠে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে কামরানই জয় ঘরে তুলে নিয়েছেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কামরান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নিয়ে উন্নয়নের জুটি গড়তে পারেননি। উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই হয়েছে। এ কারণে দুই হাত খুলে কামরানকে উন্নয়ন সহায়তা করেননি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে কামরান উন্নয়ন ঘটাতে মন্ত্রীকে পাস কাটিয়ে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কাজ ভাগিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু তাতেও সফল হতে পারেননি তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আড়াই বছরের শাসনের পর অর্থমন্ত্রী সিলেটে যে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেছিলেন তাতে কামরানের উন্নয়নকে সংযুক্ত করেন। এ কারণে সিলেটে অর্থমন্ত্রী ও মেয়রের উন্নয়নকে পৃথকভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে, রাজনৈতিকভাবে সিলেটের তিন নেতা তিন দিকে অবস্থান নেন। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী তার অনুসারীদের নিয়ে, কামরান ও মিসবাহ তাদের অনুসারীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এতে করে দলের মধ্যে টিমওয়ার্ক গড়ে উঠেনি। তবে, কামরান যেমন গত ৫ বছরে সিলেট নগরে ৫০০ কোটি টাকা কাজ করেছেন তেমনি অর্থমন্ত্রীও সিলেটে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। এই উন্নয়নের বেশির ভাগই এখন দৃশ্যমান হতে শুরু হলেও এখন কাজ শেষ হতে অনেক বাকি।
এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিলেটের বাদাঘাটে নতুন কারাগার স্থাপন, কুশিঘাটে পানি শোধানাগার স্থাপন ও কাজির বাজার সেতুর অসমান্ত কাজ সমাপ্ত করা। তবে, এই কাজগুলো শেষ হতে আরও ৬-৭ মাস লেগে যেতে পারে। বিগত সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কামরান একা হয়ে পড়েছিলেন। একে তো হেফাজতি ঝড় তার ওপর দলের নেতাদের বিরুদ্ধাচারণ তার পরাজয়কে অনেকটা ত্বরান্বিত করে। নির্বাচনের পর কামরান নিজেই স্বীকার করেছিলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল তার পক্ষে কাজ করেনি।
এছাড়া এই পরাজয়ে মুহিত ও মিসবাহর পিছুটানও ছিল। তবে পরাজয়ের পর থেকে কামরান ফের রাজনৈতিক ময়দানে নেমেছিলেন। তিনি সিলেট নগরীতে বিশেষ করে আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে চাঙ্গা করে রেখেছিলেন। এ কারণে সিটি নির্বাচনের পর স্বল্প দিনেই কামরান আবার আলোচনায় চলে আসেন। তিনি সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হতে পারেন এমন রব দলের ভেতর থেকেই তোলা হয়। কামরান জানিয়েছেন, দলীয় সভানেত্রীর সিদ্বান্ত চূড়ান্ত। এখানে সবাই নৌকার পক্ষে থাকবে। একই কথা অপর প্রার্থী এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজেরও। তিনিও জানিয়েছেন, নৌকার পক্ষে সবাই এক সঙ্গে মাঠে থাকবে। এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মনোনয়ন খবরে সিলেটের কামরান অনুসারীদের হতাশা নেমে এসেছে। তবে, রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে তারা কোন প্রতিক্রিয়া দেখাননি।