১৮ দলীয় জোটের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ ও নাশকতা ঠেকাতে মোড়ে মোড়ে মাইক লাগিয়ে সমাবেশ, গণসঙ্গীত পরিবেশন করছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি লাঠি হাতে পাহারা দিতেও দেখা যাচ্ছে তাদের।
রোববার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, সাইনবোর্ড, সাদ্দাম মার্কেট, কাঁচপুর, ধোলাইপাড়, জুরাইন, শনির আখড়া এলাকায় লাঠি হাতে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় নেতাকর্মীদের সহিংসতা প্রতিহত করতেই এ পাহারার ব্যবস্থা বলে জানা যায়।
তবে পাহারার নামে অনেককে হয়রানিরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের সামনে আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হয়রানি করলেও পুলিশ নিশ্চুপ। নেতাকর্মীদের হাত থেকে সংবাদকর্মীরাও রেহাই পাচ্ছেন না।
ছবি তুলতে গেলেও ফটো সাংবাদিকদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তবে যাত্রাবাড়ী এলাকার মধ্যে পোস্তগোলা ব্রিজের পশ্চিম মাথায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা।
সেখানে সরকার দলীয় কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, এয়ারপোর্ট এলাকায় গাড়ির পার্টসের ব্যবসা করেন তিনি। কিন্তু সকলে আসার পর পুলিশ তাকে ছেড়ে দিলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হয়রানি করেন। সামনে থাকা পুলিশকে বলার পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন ওই ব্যবসায়ী।
এদিকে কোনো গাড়িকেই ঢাকা মুখে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি খাবার, ওষুধ ও সংবাদপত্রবাহী গাড়িও আটকে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
ঢাকায় প্রবেশের বেশ কয়েকটি রাস্তা আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আটকে দিয়েছেন। সন্দেহ হলেই মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা যায়।
ওই এলাকায় দায়িত্বে থানা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন।
তবে তারা কাউকে হয়রানি করছেন না বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে সকাল পৌনে ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে জামায়াতকর্মী সন্দেহে আলী আজ্জম (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ।
পোস্তগোলা ব্রিজের পশ্চিম মাথায় কয়েকজন আ’লীগ নেতা বাংলানিউজকে বলেন, কোনো গাড়ি ঢাকা ঢুকতে দেওয়া হবে না। এমনকি মিডিয়ার গাড়িও না।
জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনো অবস্থায়ই ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
যাত্রাবাড়ী মোড়ে অস্থায়ী মঞ্চ করে মাইক বাজিয়ে গণসংগীতের পাশাপাশি বক্তব্য রাখছেন যুবলীগের ঢাকা মহানগর নেতারা। তারা মাইকে বারবার ঘোষণা দিচ্ছেন, যেকোনো মূল্যে নাশকতা ঠেকানো হবে।
তারা বলছেন, বিএনপি নেত্রীর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করা হবে। যুবলীগ সারাদিন, এমনকি প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা লাঠি হাতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পাহারা দেবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
অপরদিকে প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ঢাকামুখী সকল যানবাহন, এমনকি রিকশা যাত্রীদের তল্লাশি, রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করে ঢাকা আসতে দিচ্ছে পুলিশ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বেশ কিছু সড়কে র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি, সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। সড়কের পাশে সেনাবাহিনীকে অস্থায়ী বালির ঢিবি করে সশস্ত্র অবস্থায় পাহারা দিতে দেখা গেছে।
সাইনবোর্ড এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশের এসি নুরুল আমিন বাংলানিউজকে জানান, নাশকতাকারীরা গাড়িতে মানবাধিকারকর্মী, প্রেস ও সংবাদপত্র কিংবা অ্যাম্বুলেন্স লিখে ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় প্রবেশ করে নাশকতা চালাতে পারে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এজন্যই তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
সৌজন্য: বাংলানিউজ২৪