আমিনুল ইসলাম:
বেশ কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশের বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো কেমন যেন ‘তারিখ’ নির্ভর হয়ে গেছে। এই যেমন ২৫ অক্টোবর সমাবেশে কি হবে না হবে এই নিয়ে জল্পনা কল্পনার কমতি ছিল না। যদিও ওই তারিখে আমরা তেমন কিছু হতে দেখিনি কিংবা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও এমন কোন বড় পরিবর্তন হয়নি। এরপর আমরা দেখলাম বিজয়ের মাসে আরেকটি তারিখ ধার্য করা হয়। ২৯ ডিসেম্বর; আর এই কর্মসূচির নাম দেয়া হয় “মার্চ ফর ডেমোক্রেসি” রোববার কি হবে এই নিয়ে সকল মহলে উৎকণ্ঠার শেষ নেই। আবারও সেই চলতে থাকে নানা রকম জল্পনা কল্পনা। কেমন যেন ভীতিকর পরিবেশ। রোববারে কোন সমাবেশ হয়নি; দেখা যায়নি বিরোধীদলের নেতা নেত্রীদের। এখন প্রশ্ন আসতে পারে বিরোধী দলের নেতা নেত্রীদের যদি গ্রেফতার করা হয়, কর্মীদের যদি বাধা দেওয়া হয় তাহলে তারা সমাবেশে আসবে কিভাবে?
বিএনপি-জামায়াত কিংবা অন্যান্য বিরোধীদলের নেতা-কর্মীরা কি মনে করেছিলো তাদের আন্দোলন সংগ্রামের পথ মসৃণ থাকবে? আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস যদি লক্ষ করেন তাহলে দেখতে পাবেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় যে দলই থাকুক না কেন তারা বিরোধী দলগুলোকে সেই অর্থে ছাড় দিতে চান না। বিএনপি যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল তখন কি দলটি বিরোধীদল গুলোকে ছাড় দিয়েছে? এছাড়া “মার্চ ফর ডেমোক্রেসি” ঘোষণা দেয়ার পর দলটির নেতারা বলেছিল সব বাধা বিপত্তি পেরিয়েই তারা সমাবেশ সফল করবে। যদি তারা জেনেই থাকে বাধা আসবে; আর এর পরও সমাবেশ তারা সফল করতে পারবে; তাহলে সমাবেশ স্থলে তাদের কোন নেতা কর্মিকে দেখা গেলো না কেন?
এমন তো নয় এই দেশে বিরোধীদলগুলোকে এর আগে কখনো গ্রেফতার- নির্যাতন করা হয়নি; তারপরও দলগুলোর নেতা কর্মীরা কিন্তু ঠিকই মাঠে নেমেছে; আন্দোলন সমাবেশ করেছে।
এবার দেখা যাচ্ছে ব্যতিক্রম। একটি তারিখ ধার্য করে দিয়ে মানুষের মনে নানা জল্পনা কল্পনার বাসা তৈরি করে দিয়ে দেখা গেলো সমাবেশটি তো হয়নিই, কোন নেতা কর্মীও মাঠে নেই। এর মানে তাহলে কি দাড়ায়? হয় দলগুলোর নেতা-নেত্রীরা তাদের কর্মীদের ঠিকভাবে বুঝাতে অক্ষম হয়েছেন কিংবা নেতা-নেত্রীদের উপর দলগুলোর আস্থা নেই।
শনিবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমরা দেখলাম বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সমাবেশ স্থলে যেতে না পেরে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কথোপকোথন এক পর্যায়ে আমরা টেলিভিশনে দেখলাম জনৈক নারী নিরাপত্তাকর্মীকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেছেন : “এই যে মহিলা, আপনি এখন কথা বলছেন না কেন? এতক্ষণ তো অনেক কথা বললেন। দেশ কোথায়? গোপালি? গোপালগঞ্জ জেলার নামই বদলিয়ে দেব। গোপালগঞ্জ আর থাকবে না।”
একজন নেত্রী যিনি দু’বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা তিনি কি করে এ কথা বলেন ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। একটি জেলা নিয়ে কেন তার এতো ক্ষোভ থাকবে? আর ক্ষোভ যদি থাকেও তাই বলে কি সেই জেলাই আর থাকবে না? কিংবা জেলার নাম পরিবর্তন করে ফেলতে হবে? এ কেমন ক্ষোভ?
খালেদা জিয়াই তো বলেছেন নতুন ধরনের রাজনীতি করবেন; তো এই হচ্ছে নতুন ধরনের রাজনীতির নমুনা? নতুন ধরনের রাজনীতি যেহেতু আমাদের দেখতেই হবে তাহলে একটু কষ্ট করে যদি বিষয়টিকে আরও একটু পরিষ্কার করে বলতেন তাহলে মনে হয় আমাদের সবার জন্য সুবিধা হতো। এই যেমন ঠিক কি কারণে গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তন করতে চাইছেন? কিংবা পরিবর্তন করে ঠিক কি নাম রাখতে চাইছেন? কিংবা এই নাম পরিবর্তনের বিষয়টিও কি একটু গণতান্ত্রিক উপায়ে হওয়া উচিত না? এতোই যখন গণতন্ত্রের কথা বলছেন তাহলে ওই জেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ না করেই জেলার নাম পরিবর্তন করার কথা বলে বসা ঠিক কতোটা গণতান্ত্রিক; ভেবে দেখার দরকার আছে।
আমিনুল ইসলাম: শিক্ষক; আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, tutul_ruk@yahoo.com