জালাল আহমদ: বড়লেখায় লাইসেন্সবিহীন ১২ টি ইটভাটায় অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশ আইন অমান্য করে প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পুড়ছে কাঠ। ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী হওয়ায় প্রশাসন অথবা কোন সরকারের আমলেই এ ব্যাপারে তেমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গোটা বিশ্বের মানুষ যখন পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার, তখন এশিয়ার বৃহত্তম হাওরপারের পরিবেশ হুমকির মুখে। কেননা ইসিএ এলাকায় রয়েছে দু’টি ইটভাটা। পরিবেশের স্বার্থে এসব ইটভাটার অনুমোদন যাচাই করার দাবি এলাকাবাসীর। ইটভাটার মালিকরা লাইসেন্স নবায়ন এবং উন্নত প্রযুক্তিতে রূপানত্মরের নির্দেশ উপেক্ষা করে ইট পোড়াচ্ছেন। পৌর শহর থেকে শুরম্ন করে উপজেলার প্রত্যনত্ম এলাকার ইটভাটাগুলোতে কাঠ পুড়ানো হলেও প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। তাছাড়া পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও বড়লেখায় ঘটেছে ঠিক উল্টো। এখানে ইসিএ (ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া) এলাকায় রয়েছে দু’টি ইটভাটা। এতে হাকালুকি হাওরের পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। তাই হাওরের আগের মতো অবস্থা নেই। দেশীয় মাছ বিলুপ্তি ও অবাধে পাখি শিকারের পাশাপাশি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদও হারিয়ে যাচ্ছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ অবৈধ ইটভাটাগুলো হচ্ছে মেসার্স সওদাগর ব্রিক্স কাঁঠালতলী, ষাটমা ব্রিক্স গ্রামতলা, চান্দগ্রাম ব্রাদার্স ব্রিক্স চান্দগ্রাম, মেসার্স বিএমএস ব্রিক্স চরিয়া, আলী ব্রিক্স বোয়ালী, ব্রাদার্স ব্রিক্স সুজাউল, ন্যাশনাল ব্রিক্স কাঁঠালতলী, নজরম্নল ব্রিক্স ভোলারকান্দি, সোনালী ব্রিক্স মহারাণী, মেসার্স এনএসএস ব্রিক্স টেকাহালী, মেসার্স আদর্শ ব্রিক্স চাঁনপুর এবং মেসার্স গাংকুল ব্রিক্স। এসব ইটভাটার একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। নেই জেলা প্রশাসন কর্তৃক নবায়ন করারও কোনো কাগজপত্র। পরিবেশ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এসব ইটভাটায় একযোগে চলছে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব। বনবিভাগের সাথে আঁতাত করে ইটভাটার মালিকরা স্থানীয় পাহাড় উজাড় করে জ্বালানির জন্য কাঠ পোড়াচ্ছেন।
সূত্র জানায়, বড়লেখায় সরকারি হিসেবে ইটভাটা রয়েছে ১৩টি। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে ১৯টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে দু’একটিতে পূর্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় লোক দেখানো হিসেবে। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরও রয়েছে উদাসীন।
সনাতন পদ্ধতির এসব ব্রিকস ফিল্ডগুলোকে উন্নত প্রযুক্তিতে রূপানত্মর ও লাইসেন্স নবায়নের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মৌলভীবাজার গত বছরের ২৫ অক্টোবর লিখিত নোটিশ প্রদান করেন। কিন্তু ব্রিক্স ফিল্ড মালিকগণ নোটিশের এ আদেশ উপেক্ষা করে অবৈধভাবে ব্রিক্স ফিল্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এবং অবাধে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়াচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আমিনুর রহমান জানান, কাঠ পোড়ানোর ব্যাপারে ইটভাটাগুলোর বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুড়ী রেঞ্জ-বড়লেখার বন কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান জানান, তিনি এখানে নতুন এসেছেন। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বন বিভাগের কেউ জড়িত থাকলে সেটা খতিয়ে দেখা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় সহকারী পরিচালক (কারিগরী) আবুল বাসার মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, শীঘ্রই পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের যৌথ টাস্কফোর্স ইট পুড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে এসব ইটভাটার বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply