শীর্ষবিন্দু নিউজ: সরকার ও রওশনপন্থী নেতারা বলছেন, পূর্ণ আরোগ্য লাভ করলেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে ছুটি পাবেন। আর দলের নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন এমন কয়েকজন নেতা বলেছেন, ‘আরোগ্য’ পেতে সরকার ও এরশাদের মধ্যে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি। একটা সমঝোতায় পৌঁছলেই এরশাদ সুস্থ হয়ে যাবেন।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর তিন জন সদস্য বলেছেন, রংপুরের পীরগঞ্জ আসন থেকে ভাই জি এম কাদেরকে জিতিয়ে আনলেই এরশাদ সাংসদ হিসেবে শপথ নেবেন। এ ছাড়া এরশাদ তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুটি মামলা নিয়েও ভয়ে আছেন। এরশাদের বিরুদ্ধে রাডার ক্রয়-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের ধার্য তারিখ ৯ জানুয়ারি। আর আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলার যুক্তিতর্কের শুনানির ধার্য তারিখ ২২ জানুয়ারি। এরশাদ মামলা দুটির ব্যাপারে আশ্বস্ত হতে চান। সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেছেন, আমরা শপথ নিচ্ছি। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের পূর্ণ সম্মতি রয়েছে।
এ ছাড়া সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, দলের চেয়ারম্যানই রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে দেখতে চান। তিনি নিজে দলীয় প্রধান হিসেবে থেকে যাবেন।
রওশনপন্থী অংশের প্রভাবশালী নেতারা জানান, নির্বাচনে না যাওয়ার প্রশ্নে এরশাদ অনড় ছিলেন। তিনি সত্যিই নির্বাচন করেননি। এরশাদ ঢাকা-১৭, রংপুর-৩ ও লালমনিরহাট-১ তিনটি আসন থেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন। একমাত্র ঢাকার আসনটি ছাড়া বাকি দুটি আসনে তাঁর মনোনয়ন বহাল রাখে নির্বাচন কমিশন। রংপুরে জিতলেও লালমনিরহাটে তিনি পরাজিত হন। দলের ৬৬ জন নেতা এরশাদের নির্দেশের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করেন। কিন্তু নির্বাচন করেননি জি এম কাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্বাচনের কয়েক দিন আগে রংপুরে মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা নিজ উদ্যোগে এরশাদের পক্ষে প্রচার ও জনসংযোগ করেন। আর দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এরশাদ ও রওশন এরশাদ দুই শিবিরেই নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। রুহুল আমিন হাওলাদার পর পর সাত দিন সকালে হেলিকপ্টারে নির্বাচনী এলাকায় যান, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত্ করেন।
আবার বিকেলে ঢাকায় সিএমএইচে এরশাদের সঙ্গে দেখা করে তাঁর প্রতি আনুগত্যের কথা জানান। হাওলাদার পটুয়াখালী-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। দলের প্রভাবশালী অংশের সবাই প্রায় নির্বাচিত হয়ে আসায় ভাইয়ের জন্য এরশাদ এখন ‘শোকাতুর’। তবে ভাইকে সাংসদ করে আনার ব্যাপারে এরশাদের এই মনোভাব জানতে পেরে দলের মধ্যে এখন নতুন করে বিরোধ দানা বেঁধে উঠেছে।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেছেন, এরশাদ ২৯৯টি আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছিলেন। তাঁর কথায় বেশির ভাগ প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলে নেন। এখন শুধু ভাইয়ের জন্য এরশাদ সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করছেন। দলের নেতা-কর্মীদের কথা ভাবছেন না।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর প্রভাবশালী একজন সদস্য ও সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, এরশাদের ধারণা ছিল নো এরশাদ, নো ইলেকশন। শেখ হাসিনা যে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত করে ফেলতে পারবেন, এটি এরশাদ ধারণাও করতে পারেননি। তিনি নিজেকে খুব চতুর ভাবেন। তাঁর ধারণা যে ভুল হবে, সেটা তিনি কল্পনাও করেননি।
৩ ডিসেম্বর এইচ এম এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। এর আগে তাঁর দলের সাতজন নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেন ও এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর তিনি ১২ ডিসেম্বর জাপার দলীয় প্রতীক লাঙ্গল কাউকে বরাদ্দ না দিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেন। ওই রাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর ২৬ দিন ধরে তিনি সেখানে আছেন।