শীর্ষবিন্দু নিউজ: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডে সব দুর্নীতির দায় চাপানো হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন বা সিবিএ নেতাদের ওপর। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও কেভিন জন স্টিল এই দায় চাপানোর সব ব্যবস্থা পাকাপাকি করে ফেলেছেন। এরই মধ্যে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির সব দোষ সিবিএ নেতাদের উপর চাপিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে নালিশ জমা দিয়েছেন কেভিন। এতে তিনি নিজেকে সৎ আর সিবিএ নেতাদের অসৎ এবং অবৈধ সম্পদের অধিকারী দাবি করেছেন।
বিমানে নতুন নিযুক্ত প্রথম বিদেশি এমডি ও সিইও জন স্টিল কেভিন চিঠিতে বলেছেন, এয়ারপোর্ট এবং অন্যান্য এলাকায় অবৈধ কর্মকাণ্ড বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে ক্ষমতাধর সিবিএ নেতাদের দেয়া হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। সিবিএ নেতাদের দুর্নীতির তদন্ত করতে দুদককে অনুরোধ করেছেন কেভিন। তিনি বলেন, এতে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।
কেভিনের এমন অনুরোধকে আমলে নিয়ে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান কমিটি গঠণ করেছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা দুদক। উপ-পরিচালক মো: নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম গত এক সপ্তাহ ধরে সিবিএ নেতাদের দুর্নীতির খোঁজে মাঠে রয়েছেন।
এসব বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মো: বদিউজ্জামান বলেন, একটি চিঠি তিনি (বিমানের এমডি) দিয়েছেন। মূলত বিমানের দুর্নীতি নিয়েই এ চিঠি। তিনি যেসব অভিযোগ এনেছেন আমরা এখন সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তা খতিয়ে দেখছি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেভিন স্টিল এরইমধ্যে সিবিএ নেতা-কর্মীদের একটি তালিকা দুদককে দিয়েছেন। এ তালিকা ধরেই দুদক সংশ্লিষ্টদের সম্পদের অনুসন্ধান করবে। চলতি মাসেই সিবিএ নেতাদের জিজ্ঞাসাদের জন্য নোটিশ পাঠানো হবে বলেও জানায় সূত্রটি।
দুদক চেয়ারম্যানকে লেখা চিঠিতে কেভিন নিজেকে সিবিএ নেতাদের কাছে অসহায় হিসেবে তুলে ধরেছেন। আর দুর্নীতির বিষয়ে তার অবস্থান জিরো টলারেন্স বলেও উল্লেখ করেছেন। অভিযুক্ত সিবিএ নেতাদের ব্যাংক হিসাব ও সম্পদের পরিমাণ তাদের মাসিক বেতনের সমতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
বিমানে দুর্নীতির মাত্রা নিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানিয়ে এমডি কেভিন স্টিল বলেন, উদ্বেগের অন্যতম দিকটি হচ্ছে- ট্রেড ইউনিয়নের (বিশেষ করে সিবিএ) নেতাদের বিমান বন্দর ও বাইরে অবৈধ কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে বাইরের কারো কারো সঙ্গে সিবিএ নেতাদের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। তার অভিযোগ, সিবিএর প্রতিশোধের আতঙ্কে বিমানকর্মীরা এ বিষয়ে মুখ খোলেন না। এমনকি বিমান ব্যবস্থাপনা অথবা নিরাপত্তারক্ষী পর্যন্ত এ নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না। গায়ে হাত তোলা এখানে সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন বিমানের এমডি।
তিনি বলেন, বিমান ক্যাটারিং সেন্টার ভবন (বিএফসিসি) জ্বালিয়ে দেবার হুমকি দিতেও শোনা গেছে সিবিএ নেতাদের মুখে। কেভিন বলেন, ঘটনাগুলো এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। দুদক চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ করে বিমান এমডি আরও বলেন, আমি আপনার কাছে বিমানের এসব প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব ও সম্পদের পরিমানের সঙ্গে তাদের মাসিক বেতনের সঙ্গতি আছে কি না, তা তদন্তের অনুরোধ জানাচ্ছি এবং আপনার সমর্থন চাইছি। প্রয়োজন মনে করলে দুদক অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও তদন্ত সম্প্রসারণ করতে পারবে উল্লেখ করে কেভিন বলেন, এ ক্ষেত্রে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা দিতে তিনি প্রস্তুত।