মনিরুজ্জামান: প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী বলতেই আমরা সবাই কোনো চিন্তা না করেই বলে ফেলি ডাইনোসরদের কথা যাদের সবাই শত শত কোটি বছর আগেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
কিন্তু শুনলে কি অবাক হবেন, সেই ডাইনোসরদের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত বেঁচে রয়েছে কিছু প্রাণি প্রজাতি? কল্পনা নয়, সত্যিকার ভাবেই এমন দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীর পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেঁচে আছে গভীর সমুদ্রের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি।
আরও অবাক করা বিষয় হলো, শত শত কোটি বছর ধরে বেঁচে থাকা প্রাণিদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এসব সর্বসহা মাছ এখনও বাস করছে সমুদ্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন জলাভূমিতে।
অ্যালিগেটর গার (কুমির সদৃশ মাছ): উত্তর আমেরিকার সাধু পানির বৃহত্তম মাছ যার দৈর্ঘ ১০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। লম্বা মুখ ও ধারালো দাঁতের কারণে নামকরণ হয়েছে অ্যালিগেটর গার। এরা পানির বাইরে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এসব বিভিন্ন বৈশিষ্টের কারণে সহজেই বলা যায়, কী ভাবে এরা যুগের পর যুগ টিকে আছে।
হ্যাগফিশ: সমুদ্রের সবচেয়ে ঘৃণিত প্রাণি এবং প্রাগৈতিহাসিক প্রাণিদের মধ্যেও সবচেয়ে ঘৃণিত হ্যাগফিশ। এদের বিশ্রী খাদ্যাভ্যাসের জন্য এরা এতো ঘৃণিত। এরা আঠালো পদার্থ তৈরি করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে আরো আঠালো বানায়। পরে সেই আঠালো পদার্থ ছুড়ে মারে শিকারের গায়ে। জোঁকের মতো শিকারের গায়ে লেগে থেকে ভেতর থেকে মাংস ছিঁড়ে খায় এরা। এদের বয়স প্রায় ৫০ কোটি বছর।
ল্যান্সেটফিশ: সাড়ে ছয় ফুট পর্যন্ত হতে পারে এ মাছ। এরা পৃথিবীতে এসেছে প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে। এদের পৃষ্টদেশে দীর্ঘ পাখা আলাদা বৈশিষ্টের প্রকাশ করে। মেরু অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর সব মহাসাগরেই এদের দেখা পাওয়া যায়।
অ্যারাপাইমা: সাধু পানির সবচেয়ে বড় মাছ গুলোর মধ্যে অন্যতম এ মাছের ওজন ৪০০ পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রধানত দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান নদীতে পাওয়া যায়।
বাউফিন: ২৫০ এর মতো রেখাযুক্ত দীর্ঘ পৃষ্ট পাখনার জন্য এর নামকরণ হয়েছে বাউফিন। ডায়নোসরদের যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত টিকে আছে এমন তিনটি সাধু পানির মাছের একটি বাউফিন। এই মাছ প্রায়শই বরশি দ্বারা মাছ শিকারীদের হাতে ধরা পড়ে।
স’ফিশ (করাত মাছ): মাথার সম্মুখে করাত আকৃতির বাড়তি অংশের উপস্থিতিতে এর নাম হয়েছে স’ফিশ। এই করাত সমুদ্রের নিচের নরম মাটি খুড়ে শিকারীর হাত থেকে বাঁচতে সহায়তা করে। শিকারকে আঘাত দিয়ে অচেতন করতেও ব্যবহৃত হয় এই করাত।
ড্রাগন ফিশ: এরা জুরাসিক যুগ থেকে পৃথিবীতে টিকে আছে। এরা যেকোন প্রাণিকেই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে যদি তাকে ধরতে পারে। শিকার ধরার জন্য এরা পানি থেকে দুই মিটার উচুতে লাফ দিতে পারে। দেখতে পাওয়া যায় আমাজান নদীসহ আফ্রিকা, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অংশে।
ফ্রিল্ড শার্ক (কুঁজিত হাঙ্গর): বিশেষ ধরনের ফুলকার উপস্থিতি একে সামনে থেকে দেখতে বড় সাপের মতো দেখা যায়। এরা কোটি বছর ধরে তাদের শারীরিক গঠন অপরিবর্তিত রেখেছে। এদের বিশেষত্ত্ব হচ্ছে- এরা সমুদ্রের ৫০০০ ফুট গভীরে সাঁতার কাটতে পারে।
স্টারজিওন (Sturgeon): ২০ কোটি বছর ধরে টিকে আছে এ মাছটি। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ফ্রেজার নদীতে আপনি ইচ্ছে করলেই ধরতে পারবেন এদের।
কেওলাক্ষা (Coelacanth): ৩৫ কোটি বছর থেকে পৃথিবীতে অপরিবর্তিতভাবে বসবাস করছে এ মাছটি। তবে এটি বর্তমানে লুপ্তপ্রায়। আফ্রিকা উপকূল ও ভারত মহাসাগরের এরা বসবাস করছে তবে, এদের প্রকৃত সংখ্যা অজ্ঞাত।
গবলিন শার্ক (অপদেবতা হাঙ্গর): ১৪ ফুট দীর্ঘ এই হাঙ্গর হাজার ফুট নিচে সাঁতার কাটতে পারে। শিকার কামড়ে যখন এটি তার দীর্ঘ মুখে পুরে নেয়, তখন সিনেমার দেখা এলিয়েনদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
ডায়নোসর ইল (বানমাছ): পলিটেরাস সেনেগেলাস নামের এ মাছটি আফ্রিকায় ডায়নোসর ইল নামে পরিচিত। তাদের সরীসৃপ আকৃতির চেহারা এবং করাত আকৃতির পৃষ্টীয় পাখনা ডায়নোসরের কথা স্মরণ করে দেয়। তারা পানির বাইরে দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে।