শীর্ষবিন্দু নিউজ: উপজেলা নির্বাচনের উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের তথ্যসমূহ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য লিখিত অনুরোধ জানালেও পত্রপত্রিকায় বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে খবর প্রকাশের আগ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা জানান সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কর্তৃপক্ষ।
গণমাধ্যমকে সুজন জানায়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলের দিকে ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ করা হলেও ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি উপজেলার তথ্য আমরা পাইনি। রোববার পর্যন্ত পাওয়া যায়নি সিলেটের জৈন্তাপুর ও হাটহাজারী উপজেলার তথ্য। এ কারণে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার জন নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনের সচিবকে পৃথকভাবে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য প্রকাশ ও প্রচার না করার জন্য কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা করা হবে না, এই মর্মে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সেখানে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, নির্বাচন কমিশন নিজেরাই যদি নির্বাচন বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করতো, তবে তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা হওয়ার কথা ছিল না। সুজনের প্রত্যাশা, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী জনস্বার্থের দিকটি বিবেচেনায় রেখে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের দাখিলকৃত তথ্যাদি যত দ্রুত সম্ভব ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং ভোটাররা যাতে প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে, শুনে ও বুঝে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে তথ্যসমূহ ভোটারদের মধ্যে প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্যায়ে ৯৭টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রংপুরের পীরগঞ্জে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। এ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সর্বমোট এক হাজার ৬২৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬৯০ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৫৬ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৮০ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
চূড়ান্তভাবে ৯৮টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪৩২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫১৩ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩২৯ জন অর্থাৎ তিনটি পদে সর্বমোট ১২৭৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত ২৫ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের এবং ৩ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ঘোষিত হলেও সুজনের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে অনুরোধ করেও সব উপজেলা প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি।
সোমবার সুজন ৯৮টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুধুমাত্র উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের তথ্য প্রকাশ করা হলেও সময়ের অভাবে তারা প্রথম পর্যায়ের সব প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারেনি বলেও জানানো হয়। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট সম্পর্কে তারা বলেন, সেখানে প্রকাশিত তথ্যগুলোর মাধ্যমে প্রার্থীদের ধরন সম্পর্কে ধারণা করা গেলেও প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এ সব তথ্য কোনো কাজে আসবে না। এ জন্য তারা নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, প্রার্থীদের তথ্যসমূহ নির্বাচনের উদ্যোগে উপজেলাভিত্তিকভাবে ভোটারদের সুবিধার জন্য লিফলেট আকারে তুলে ধরা হলে ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে-শুনে-বুঝে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন। সুজন আশা করছে, নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের তথ্যসমূহ প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। একই সঙ্গে ব্যানার লাগানো, পোস্টার ছাপানো, মিছিল এবং গণসমাবেশ থেকে প্রার্থীদের বিরত রাখার বিধান করা হলে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় অনেক কমানো সম্ভব হবে।
সম্মেলনে বলা হয়, বিধিবিধান অনুযায়ী স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন করছে। এতে স্থানীয় পর্যায়ে গণতান্ত্রিক চর্চার পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে। একই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য একক প্রার্থী নির্ধারণের জন্য রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য প্রার্থীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে; যা সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সব রাজনৈতিক দলের আইন-কানুন ও বিধি-বিধান মেনে চলা একান্ত জরুরি। তথ্য কমিশন আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তথ্য প্রচার না করলে সেটা আইনের বরখেলাপ এবং এ জন্য তারা নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন করছে না বলে ধারণা করবেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, সুজনের নির্বাহী সদস্য বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সুজনের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হক, ঢাকা জেলা কমিটির সহসভাপতি আবুল হাসনাত।