বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩৩

অর্থাভাবে আটকে গেছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ

অর্থাভাবে আটকে গেছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ

শফিক শামীম: প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান না হওয়ায় আটকে আছে কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প। ফলে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা থাকলেও কর্তৃপক্ষের ঢিলেমির কারণে এ সুযোগ হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে কক্সবাজার মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল আব্দুল নাসের বাংলানিউজকে জানান, প্রথম ধাপের কাজ শুরুর অর্থের উৎস না পাওয়া যাওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

২০১২ সালের ২ জানুয়ারিতে কক্সবাজার মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন-২০১১’র খসড়া অধ্যাদেশ গঠন অনুমোদন করে মন্ত্রীসভা। যাতে ৫৮টি জেটির জন্য ১১ কিলোমিটার লম্বা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।

বিভিন্ন দেশের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে পারছে না। তবে বাংলাদেশে গভীর বন্দর নির্মাণের সুযোগ থাকলেও অর্থাভাবে তা কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল জাপান প্রণীত অর্থ ও কারিগরী সমীক্ষা এবং বন্দর বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন অনুসারে, গভীর বন্দর ও আন্তঃদেশীয় সড়ক, রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলে এ অঞ্চলের সবাই উপকৃত হবে। রাজস্ব বৃদ্ধি, সারচার্জ, সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে বাংলাদেশের আয়ও বাড়বে অনেকগুণ।
Sonadiya_1
গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা সম্ভব হলে সরাসরি রেল ও সড়কপথে পণ্য পরিবহনে তিনগুণ সময় কম লাগবে এবং আর্থিকভাবেও অনেক সাশ্রয়ী হওয়া যাবে। তাই বাংলাদেশের জন্য বিশ্বমানের একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রথম পর্যায়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০১৬ সাল। ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। সরকার এ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের বার্ষিক মুনাফা বাবদ সঞ্চিত নিজস্ব তহবিলের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ও অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে চারটি সাধারণ কার্গো জেটি ও পাঁচটি কন্টেইনার বার্থ স্থাপন করা হবে।

চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরের কোনোটিই সমুদ্রে অবস্থিত নয়। বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্রবন্দরে ২০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ নোঙর করতে পারলেও কর্ণফুলী নদীর তীরে চট্টগ্রাম বন্দরে মাত্র সাড়ে নয় মিটার এবং পশুর নদীর পাশে মংলায় সাত মিটার ড্রাফটের জাহাজ নোঙর করতে পারে।

সোনাদিয়ায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হলে স্বাভাবিক অবস্থায় ১৪ মিটার ও জোয়ারের সময় ১৬ থেকে ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ নোঙর করতে পারবে।

পৃথিবীতে সর্বোচ্চ ড্রাফটের জাহাজ হচ্ছে ১৯ মিটার। সে জাহাজ বাণিজ্যিক নয়, যুদ্ধজাহাজ। সিঙ্গাপুর বন্দরে যেসব জাহাজ নোঙর করতে পারবে সে সব জাহাজ সোনাদিয়া সমুদ্রবন্দরেও নোঙর করতে পারবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলেও এই প্রকল্পে কোনো অগ্রগতি নেই।  স্থানই এই প্রকল্পের বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে বলে মনে করে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়।

গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার নেতৃত্ব দেবে দাবি করে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে চীন, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারসহ নিকট প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সেতুবন্ধনও রচিত হবে। এছাড়া এ সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে প্রতিটি কন্টেইনারে এক হাজার ডলার সাশ্রায়ী হবে। ফলে আমদানি-রফতানি ব্যয় অনেক কমে যাবে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025