শীর্ষবিন্দু নিউজ: দলের কেন্দ্র ও অঙ্গ সংগঠনে ব্যাপক রদবদল নিয়ে আগামী সপ্তাহ থেকেই আসছে বিএনপির নতুন কমিটি। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের বেশ কয়েকজন নেতার বক্তব্য অনুসারে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে এই রিপোর্টে।
জানা যায়, দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ হিসেবে দ্রুত এগিয়ে চলেছে কমিটি চূড়ান্তকরণের কাজ। চেয়ারপার্সন (খালেদা জিয়া) স্থায়ী কমিটির গত বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। নতুন কমিটির কাজ জোরেসোরে চলছে। কমিটিগুলোতে রদবদল থাকবে, থাকবে নতুনের পদচারণা। শিগগিরই কমিটি ঘোষণা শুরু হবে। কালবিলম্ব না করে প্রতিটি কমিটির দুর্বলতা কাটাতে দলীয় চেয়াপার্সন নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত এবং আগামী সপ্তাহে নতুন কমিটির ঘোষণা এসে যাবে। নতুন এই কমিটি থেকে সংগঠনের বর্তমান আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সদস্য সচিব আবদুস সালাম বাদ পড়ছেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। কর্মীদের তীব্র দাবির মুখে উভয় নেতারই বাদ পড়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। আর দুইজনের মধ্যে যে কোনো একজনের বাদ পড়ার সম্ভাবনা শতভাগ।
সূত্র জানায়, এই কার্যক্রমে এবার স্বজনপ্রীতি বা চেনা চেহারার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে রাজনৈতিক কারণে কারাভোগী, দলের কর্মসূচিতে আহত নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে নেতাকর্মীদের মনোবল কমেছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই দলের কার্যক্রমকে গতিশীল করতেই কমিটির কাজে দ্রুত অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, দলে দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পরিবর্তে পরিপূর্ণ দায়িত্বে আসতে পারেন স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। সূত্রের দাবি, এবারের কমিটিতে দল নতুন পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব পাবে। তরিকুলকে এর আগেও খালেদা জিয়া কয়েকবার এই দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা ও নিজ বাসভূমের প্রতি মায়ায় সেই আহ্বান বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছেন তরিকুল। সূত্রের দাবি, বিগত কয়েক মাস ধরে তার চিকিৎসা চলছিল। খালেদার সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাতেই তরিকুল বাধ্য হয়েছেন এই দীর্ঘ চিকিৎসা প্রক্রিয়ায়।
দলের নির্বাহী কমিটির এক সদস্য জানান, দায়িত্ব পাওয়ার পরে ফখরুলের পারফরমেন্সে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী খুশি নন বলে খালেদা জিয়ার গোচরে এসেছে। নানা সময় সমালোচিত হয়েছেন তিনি। বিশেষ করে আটকের ভয়ে পালিয়ে থাকা, আন্দোলনের মূল সময়গুলোতে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখাসহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে তার প্রতি ক্ষোভ রয়েছে নেতাকর্মীদের মনে। যার ফলই দেখা যাবে এবারের কমিটিতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক নেতা জানান, এবারের কমিটিগুলোতে ত্যাগীরাই গুরুত্ব পাবেন। তরিকুলের ত্যাগ নিয়ে প্রশ্নের সুযোগ নেই।
তবে ফখরুলের বাদ পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুব। তিনি বলেন, মির্জা ফখরুলের পরিবর্তনের কথা শুনিনি। আর ভারমুক্ত হওয়াটা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। দলের জন্য যারা কাজ করেছেন নতুন কমিটিতে তাদের স্থান থাকবে।
ছাত্রদলের সঙ্গে এক বৈঠকে খালেদা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি নতুন কমিটিতে অছাত্রদের দেখতে চান না। কমিটির নেতাদের কঠোর শাসনের সুরে তিনি বলেছেন, পড়ালেখা না করে, কাজ না করে রাজনীতির নামে টাকা কামানোর ফন্দি-ফিকির করলে দলে তাদের স্থান হবে না। দলের জন্য নিবেদিত, ভালো ইমেজধারী ছাত্রদের নিয়ে খালেদা নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। তার সেই নির্দেশের বাস্তবায়নই নতুন কমিটিতে দেখা যাবে বলে সূত্র জানায়।
সূত্র জানায়, যুবদলের বর্তমান সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ খালেদা জিয়ার কানে পৌঁছেছে। সংগঠনের তৃণমূলে নতুন নেতৃত্বের চাহিদা দেখেছেন খালেদা। তাই, নতুন কমিটিতে যুবদলের প্রধান পদে পরিবর্তন আসছে বলে সূত্র জানায়। ভিন্ন সূত্র জানায়, নতুন কমিটিতে সভাপতির দায়িত্বে সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবকে ভাবা হচ্ছে।
এই সংগঠনের বর্তমান সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বাদ পড়ার সম্ভাবনা না থাকলেও এর পরের পদগুলোতে রদবদলের গুঞ্জন রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক নেতা জানান, কমিটি গোছানোর কাজে তৃণমূলের মতো ও কাজ বিবেচনায় সোহেলকেই আবার সভাপতি পদে রাখা হতে পারে। এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা বাদ না পড়লেও বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে সভাপতি নুরে আরা সাফার- বললেন নির্বাহী কমিটির এক নেতা। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, শিরীনের নামে যতই সমালোচনা থাকুক, তার নেতৃত্ব গুণ রয়েছে। তাই, নতুন কমিটিতে তিনি থাকছেন। সাফা শারীরিকভাবে অসুস্থ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় ততটা সবল নন।
এছাড়া শ্রমিক দল, কৃষক দল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস), মুক্তিযোদ্ধা দল, মৎস্যজীবী দল, ওলামা দল ও তাঁতী দলের নতুন কমিটি গঠনের কাজও সমানতালে চলছে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন,
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ হিসেবে দ্রুত এগিয়ে চলেছে কমিটি চূড়ান্তকরণের কাজ। চেয়ারপার্সন (খালেদা জিয়া) স্থায়ী কমিটির গত বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, প্রতিক্ষেত্রে তৃণমূলের চাহিদার প্রতি সম্মান দেখাচ্ছেন খালেদা –বলেন গয়েশ্বর।
প্রথমেই ঢাকা মহানগর
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি