শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: মালয়শিয়ার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বিমানটির যোগাযোগ ব্যবস্থা সচেতনভাবে অকার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। শনিবার দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ২৩৯ যাত্রী নিয়ে নিখোঁজ মালয়েশীয় এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটের উড়োজাহাজটির যোগাযোগ ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ বন্ধ করে দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। স্যাটেলাইট ও রাডারের বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই করে মালয়েশীয় সরকার এ সিদ্ধান্তে আসে বলে তিনি জানান।
উপগ্রহ ও রেডার তথ্যের সূত্র ধরে রাজাক জানান, বিমানটি তার গতিপথ পরিবর্তন করে সম্ভবত পরবর্তী সাত ঘন্টা ধরে টানা উড়েছে। তিনি বলেন, বিমানটির চলাচল থেকে এটি বোঝা যায় কেউ একজন বিমানটি সচেতনভাবে পরিচালনা করছিলেন। তিনি আরো বলেন, উপগ্রহের মাধ্যমে পাওয়া নতুন প্রমাণে প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে, বিমানটির যোগাযোগ ব্যবস্থা সচেতনভাবে অকার্যকর করা হয়েছে এরপর এটি গতিপথ পরিবর্তন করে বিপরীত পথে মালয়শিয়ার উপর দিয়ে ভারতের দিকে গেছে। কর্তৃপক্ষ এখন দুটি সম্ভাব্য করিডোরে বিমানটি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন রাজাক।
উড়োজাহাজটির খোঁজে তদন্ত এখন নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে। ক্রু ও যাত্রীদের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত এগোবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুটি সম্ভাব্য করিডোরে মাধ্যমে উড়োজাহাজটি খোঁজার চেষ্টা করছি। একটি থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল থেকে কাজাখস্তান ও টুর্কেমেনিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত। আরেকটি ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ ভারতীয় সাগর। এর আগে নিঁখাজ মালয়েশীয় উড়োজাহাজটি পাইলট কিংবা অন্য কারো দ্বারা ছিনতাই হয়েছে মালয়েশীয় এক তদন্ত কমর্কর্তা জানান।
এতোদিন নিখোঁজ উড়োজাহাজ সন্ধানের বিষয়ে অনেকে অনেক ধরনের কথা বললেও কার্যত চুপ ছিল মালয়েশিয়া সরকার। উপরন্তু নিখোঁজ বিমানের সন্ধান পাওয়ার সকল দাবি তারা নাকচ করে দিয়ে আসছে। এই প্রথমবারের তদন্ত কাজে নিয়োজিত দেশটির উচ্চপদস্থ কেউ নিখোঁজ উড়োজাহাজ সম্পর্কে এসব মন্তব্য করলেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, তদন্তকারীরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, যোগাযোগের সকল ডিভাইস বন্ধ করে এক বা একাধিক ব্যক্তি উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞতা আছে এমন কেউই বিমানটি ছিনতাই করেছে।
তবে ছিনতাই হয়ে থাকলে কি উদ্দেশ্যে তা করা হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু জানতে পারেনি বলে দাবি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা ছিনতাই করে প্লেনটি কোথাও নিয়ে যাওয়া হতে পারে সে সম্পর্কেও কিছু বলেননি।
ছিনতাই হয়েছে এর যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, এক সপ্তাহের তদন্ত প্রমাণ শেষে আমাদের কাছে যে তথ্য প্রমাণ আছে তাতেই বিমানটির ছিনতাইয়ের প্রমাণ দেয়। কারণ ইচ্ছাকৃতভাবে উড়োজাহাজটির সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রাডার এড়ানোর জন্য উড়োজাহাজটি অন্য পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা এপি’কে নিখোঁজ উড়োজাহাজটির মানুষের হস্তক্ষেপ ছিল বা দস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
সাতদিন আগে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের উদ্দেশে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর ছেড়ে যায়। কিন্তু এর ঘণ্টাখানেক রাডার থেকে হারিয়ে যায় উড়োজাহাজটি। কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংগামী উড়োজাহাজটিতে ১৪টি দেশের নাগরিক ছিলেন। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের উড়োজাহাজে চীনের ১৫৩, মালয়েশিয়ার ৩৮, ইন্দোনেশিয়ার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ৭, ফ্রান্সের ৩, যুক্তরাষ্টের ৩, নিউজিল্যান্ডের ২, ইউক্রেনের ২, কানাডার ২, রাশিয়ার ১, ইতালির ১, তাইওয়ানের ১, নেদারল্যান্ডসের ১ ও অস্ট্রিয়ার ১ নাগরিক রয়েছেন। এদের মধ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই শিশু রয়েছে। এছাড়াও উড়োহাজাহটিতে ১২ জন ক্রু ছিলেন।