শীর্ষবিন্দু নিউজ: আজ সোমবার ১৭ মার্চ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। দিনটি উপলক্ষে সোমবার বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এছাড়া বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংগঠন নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে থাকছে নানা অনুষ্ঠান। পত্রিকাগুলোতেও থাকছে বিশেষ বিশেষ লেখা। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার শেখ বাড়িতে পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা শেখ সাহেরা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মধুমতি আর বাঘিয়ার নদীর তীরে এবং হাওড়-বাঁওড়ের মিলনে গড়ে ওঠা বাংলার অবারিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি টুঙ্গীপাড়ায় কাটে মহান এ নেতার বাল্যকাল। সেখানেই তিনি ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা শস্য শ্যামলা রূপসী বাংলাকে দেখেন। তিনি আবহমান বাংলার আলো-বাতাসে লালিত হয়েছেন। তিনি শাশ্বত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছেলেবেলা থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। কারণ গ্রামের মাটি আর মানুষ তাঁকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতো।
চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাবা-মার তৃতীয় সন্তান। সাত বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল এবং পরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করেন। মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার সময় তিনি চোখের দুরারোগ্য ‘বেরিবেরি’ রোগে আক্রান্ত হলে কলকাতায় তাঁর চোখের অপারেশন হয়। এই সময়ে কয়েক বছর তাঁর পড়াশোনা বন্ধ ছিল।
১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাস করে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে বেকার হোস্টেলে আবাসন গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে বিএ পাশ করেন। শেখ মুজিবুর রহমান এই সময়ে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এসময় তিনি হোসেন সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সংস্পর্শে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।
শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজ জীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজাপীড়ন দেখেছেন। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িকতার। আর পড়শি দরিদ্র মানুষের দুঃখ, কষ্ট তাঁকে সারাজীবন সাধারণ দুঃখী মানুষের প্রতি অগাধ ভালবাসায় সিক্ত করে তোলে। বস্তুতপক্ষে সমাজ ও পরিবেশ তাঁকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে তিনি কোন শক্তির কাছে আত্মসমর্পন বা মাথানত করেননি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কিউবার জনক ফিদেল কাস্ট্রো তার পোয়েট অব পলিটিক্স এ লিখেছেন, আমি হিমালয় দেখিনি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। তার ব্যক্তিত্ব ও নির্ভীকতা হিমালয়ের মতো, এভাবেই তার মাধ্যমে আমি হিমালয়কে দেখেছি। এমনকি ব্রিটিশ লর্ড ফেন্যার ব্রোকওয়ে বরেছেন, শেখ মুজিব জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী ও দ্যা ভেলেরার থেকেও মহান নেতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া। যার জন্য জীবনে তিনি জেল-জুলুম-হুলিয়া কোনকিছুই পরোয়া করেননি। শত যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট-বেদনাকে তিনি সহ্য করেছেন। ফাঁসির মঞ্চও যাঁর কাছে ছিল অত্যন্ত তুচ্ছ।
এক কথায় বলতে গেলে বাংলা, বাঙালি, শেখ মুজিব একবৃন্তে তিনটি চেতনার ফুল। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মাঝে চিরদিন অম্লান ও শোষিত-বঞ্চিত-নির্যাতিত-মেহনতি জনতার হৃদয়ে চিরভাস্বর থাকবেন মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে নির্মম ভাবে নিহত হন। প্রতিবারের মতো এ বছরও আওয়ামী লীগ যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ করবে মহান এ নেতাকে। এমনকি এ দিনে পালন করা হবে বিভিন্ন কর্মসূচি।
এই মহান নেতার জন্মদিনটি আমাদের জাতীয় শিশুদিবস। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শিশুদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশুদিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ দিবসটি পালন শুরু হয়। ২০০১-০৬ মেয়াদে জাতীয় শিশুদিবস পালনের রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় এসে আবারও ১৭ মার্চ জাতীয় শিশুদিবস পালনের ঘোষণা দেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান টুঙ্গীপাড়ায় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য টুঙ্গীপাড়ায় যাবেন। রাষ্ট্রপতি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে রওনা হয়ে সকাল ১০টায় টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনকের মাজারে পৌঁছাবেন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
তিন বাহিনীর চৌকস একটি দল এসময় রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করবে। এরপর তিনি সেখানে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত শেষ করে ঢাকায় ফিরে যাবেন। সকাল ১১টার দিকে, রাষ্ট্রপতি ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গীপাড়া ত্যাগ করবেন। এদিকে, রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে টুঙ্গীপাড়া মাজার কমপ্লেক্সসহ আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে টুঙ্গীপাড়াসহ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য টুঙ্গিপাড়ায় যাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটের সময় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করবে। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের সময় মাজার কমপ্লেক্স পাবলিক প্লাজায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন আয়োজিত শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করবেন এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন ভিত্তিক একটি গীতি-কাব্য-নাট্যানুষ্ঠান উপভোগ করবেন। পরে তিনি সেখানে ঢাকাস্থ গোপালগঞ্জ জেলা সমিতির উদ্যোগে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে বইমেলার উদ্বোধন করবেন। এর আগে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
টুঙ্গীপাড়ার কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন।
মঙ্গলবারের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দুপুর ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।