শীর্ষবিন্দু নিউজ: রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আরো এক কোটি ডলার অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রাইমার্ক। রানা প্লাজায় নিউওয়েভ বটমস নামের একটি কারখানা থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতো প্রাইমার্ক। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যেই অনুদানের অর্থ চলতি সপ্তাহে বিতরণ করা হবে বলে এর আগে জানিয়েছিল প্রাইমার্ক।
প্রথমদফায় প্রাইমার্ক ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহযোগিতা ও খাদ্য সরবরাহে ২০ লাখ ডলার দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তখনি জানিয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সহায়তায় তারা আরো এক কোটি ডলার অনুদান দেবে। এর মধ্যে রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫৮০ জন শ্রমিকের পরিবারের হাতে সরাসরি ৯০ লাখ ডলার তুলে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে প্রাইমার্ক। আর বাকি ১০ লাখ ডলার আইএলও’র শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা দেবে বলে জানিয়েছে তারা।
গত বছরের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার ধসের ওই ঘটনায় ১১০০ শ্রমিক নিহত এবং অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর পোশাক বিক্রেতা সবকটি বড় প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশের কারখানায় শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ উন্নয়নের ব্যাপারে একাট্টা হয়। কিন্তু ওই দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহত হয়েছেন এমন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক কিংবা তাদের পরিবারকে ৪০ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানই এখনো কোনো সাড়া দেয়নি। রানা প্লাজায় থাকা কারখানাগুলো থেকে পোশাক বা এ সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি করে এমন ২৭টি ব্র্যান্ডের কাছ থেকে ওই তহবিলের অর্থ জোগাড়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ( আইএলও) নেতৃত্বে শ্রমিক সংগঠনগুলোর জোর দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র জানান, রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকরা বেঁচে থাকলে যা আয় করতেন তা হিসাব করে এবং আহতদের পঙ্গুত্বের মাত্রা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের বর্ষপূর্তিতে আমরা আমাদের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের প্রতি দায়িত্ববোধের বিষয়টি পূরণ করতে চাই। আমরা খুশি যে, অবশেষে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ সহযোগিতা করতে পারছি। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাতের বাজার ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যা দেশের মোট রপ্তানির পাঁচ ভাগের চার ভাগ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ তৈরি পোশাক ইউরোপে এবং ২৩ শতাংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
অ্যাসোসিয়েটেড ব্রিটিশ ফুডের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান প্রাইমার্ক কম দামে পোশাক বিক্রির জন্য যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে দ্রুত প্রসার লাভ করেছে। এসব জায়গায় প্রতিষ্ঠানটির ২৫০টি দোকান রয়েছে। আইএলও তহবিলে অর্থ জোগানের বিষয়ে প্রাইমার্ক অন্যান্য পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছেও এর আগে আবেদন জানিয়েছে, যাতে দুর্ঘটনা কবলিত সবাইকে আথির্কভাবে সাহায্য করা সম্ভব হয়।
তবে গত সপ্তাহে ক্লিন ক্লথসেস মুভমেন্ট, শ্রমিক ইউনিয়ন ইড্রাস্টিঅল, ইউনিগ্লোবাল ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, সব শ্রমিককে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে লক্ষ্যমাত্রা হিসাবে ঠিক করা চার কোটি ডলারের তহবিল জোগাড় করার জন্য এখনো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে ওই তিনটি শ্রমিক প্রতিষ্ঠান জানায়, তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু হবে ২৪ মার্চ থেকে। অল্প কিছু ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠান এতে অর্থ দেয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত সাড়া দিয়েছে।
এগুলো হলো- কানাডার লব ল, যুক্তরাজ্যের বন মার্শে ও প্রিমিয়ার ক্লদিং, ডেনমার্কের মাসকট এবং স্পেনের এল কোতে ইঙ্গলস, ম্যাংগো এবং জারা ব্র্যান্ডের মালিকানায় তাকা ইন্ডিটেক্স। রানা প্লাজা থেকে কারখানাগুলো থেকে পোশাক আমদানিকারক বেশ কটি ব্র্যান্ড বলেছে, তারা আইএলও’র তহবিলে অর্থ দিতে ইচ্ছুক নয়। এর কারণ হিসেবে তারা বলছে, রানা প্লাজা থেকে যে তাদের পোশাক আউটসোর্সিং হত, তা তারা জানত না।