আদিত্য আরাফাত: ৪ বছর বয়সেই মেহজাদ হোসেনের বাবা-মা হঠাৎ লক্ষ্য করলেন তাদের সন্তানকে নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দিচ্ছে না। চোখের দিকে তাকালেও সন্তান চোখ রাখছেন না। মেহজাদের বয়সী অন্য আট-দশটি শিশু যেমন খেলছে, কথা বলছে সেখানে মেহজাদ চুপচাপ। এক সময়ে সন্তানকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার পরই জানতে পারলেন অটিজমে আক্রান্ত। মেহজাদের মতো অনেক শিশুর অটিজম শনাক্ত হচ্ছে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজম কোনো রোগ বা প্রতিবন্ধিত্ব নয়। অটিজম হচ্ছে শিশুদের একটি মনোবিকাশগত জটিলতা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সচেতনতা আর ভালোবাসাই পারে শিশুর স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে। পরিবার ও সমাজ যদি সচেতন হয়, তাহলে অটিস্টিক শিশুরাও হয়ে উঠতে পারে স্বাভাবিক শিশুদেরই একজন। অটিজম সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমরা সবাই -এই স্লোগান নিয়ে বুধবার সারাদেশে পালিত হচ্ছে সপ্তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। বাংলাদেশ চতুর্থ বারের মতো বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করছে।
বাংলাদেশে সরকারিভাবে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যাগত কোনো তথ্য নেই। অটিজম বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে অটিস্টিক শিশু কত আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা বাড়িয়েও লাভ হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী; যাদের অধিকাংশই অটিস্টিক শিশু।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট ডা. মাজহারুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, অনেক মা-বাবাই অটিস্টিক বাচ্চাদের কথা প্রকাশ করতে চান না। এজন্য অটিস্টিক শিশুদের শনাক্ত করাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সামাজিক সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, অভিভাবকরা সচেতন হলে অটিস্টিক শিশুরাও এক সময় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।
অটিজম বিশ্বে এতই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে, জাতিসংঘ প্রতিবছর ২ এপ্রিলকে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করছে। সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই ২০০৮ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও প্রতিবছরের মতো এবছরও সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত হচ্ছে।
অটিজম সম্পর্কে জানতে হবে; জানাতে হবে
অটিজমে আক্রান্তদের অটিস্টিক বলা হয়। অটিজমকে সাধারণভাবে শিশুর মনোবিকাশগত জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অটিজম শিশুর এমন একটি সমস্যা, যাতে শিশু পরিবেশের সঙ্গে যোগাযোগ করার পদ্ধতি, যেমন—কথায় অসংলগ্নতা, ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে না পারা।
অটিজমে আক্রান্ত শিশু নিজের ভেতর গুটিয়ে থাকে, সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না, আচরণে সমস্যা দেখা দেয় এবং একই কাজ বারবার করতে থাকে বা হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অটিজম কোনো সাধারণ রোগ নয়। এটি শিশুদের একটি মনোবিকাশগত জটিলতা। যার ফলে সাধারণত ৩টি সমস্যা দেখা দেয়। যেগুলো হচ্ছে- প্রথমতঃ মৌখিক কিংবা অন্য কোনো প্রকার যোগাযোগ সমস্যা, দ্বিতীয়তঃ সমাজিক বিকাশগত সমস্যা, তৃতীয়তঃ খুব সীমাবদ্ধ ও গণ্ডিবদ্ধ জীবন-যাপন ও চিন্তা-ভাবনা এবং পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ এছাড়া অতি চাঞ্চল্য (Hiper Activity), জেদী ও আক্রমণাত্মক আচরণ (Aggressiveness), অহেতুক ভয়ভীতি, খিচুনী ইত্যাদি ও থাকতে পারে।
অটিজম প্রতিষ্ঠান স্কুল ফর গিফটেড চিলড্রেনের পরিচালক মারুফা হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বিশেষ পদ্ধতিতে শিক্ষা এবং অকুপেশনাল থেরাপির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, অটিজম মোকাবেলায় সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, অটিস্টিক ব্যক্তিদের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের বিত্তবান ও মানব হিতৈষী ব্যক্তিরা এগিয়ে আসবেন।