সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১১:৫১

কংগ্রেসের পর মুসলিম ভোটের প্রত্যাশায় বিজেপি

কংগ্রেসের পর মুসলিম ভোটের প্রত্যাশায় বিজেপি

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: সার্বিকভাবে ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে নরেন্দ্র মোদি অপছন্দের নাম হলেও প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তাকে সমানে রেখেই মুসলমানদের ভোট প্রত্যাশা করছে বিজেপি। ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলমান ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের আগে দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন একাধিকবার।

দিল্লি জামে মসজিদের ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারির সঙ্গে সোনিয়া গান্ধী দেখা করার পর বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংসহ নেতারা ছুটে যান উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে মুসলিম নেতা মাওলানা কালবে জাওয়াদ ও মাওলানা খালিদ রশিদের  কাছে। তবে তাতে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির ওপর মুসলিমদের মন গলবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান একদশক আগের গুজরাট দাঙ্গা এখনো ভুলতে না পারা মমতাজ বেগম। ছুটির দিন রোববার লাল কেল্লায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে বেড়াতে আসা এই মুসলিম নারী বলেন, ভোটের ফল আগাম বলা কঠিন, তা বোঝা যাবে ১৬ মে ফল প্রকাশের পরই।

১২০ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ মুসলিম, ফলে ভোটের লড়াইয়ে তাদের গুরুত্ব সবসময়ই থাকে; ব্যতিক্রম নয় এবারো। রাজধানী দিল্লির চাঁদনি চকসহ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা ঘুরে দেখা গেল, এই এলাকার ভোট টানতে কংগ্রেস-বিজেপি উভয় দলের বিশেষ নজর রয়েছে। তবে বিজেপি এখন যতই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলুক, মুসলমানদের আস্থা পাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিজেপি নেতা অমিত শাহ অবশ্য মোদিকে নিয়ে মুসলিমদের ভয়কে ‘অমূলক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি শুক্রবার বলেন, মোদি একবার প্রধানমন্ত্রী হলেই দেখবেন, তাকে নিয়ে সব ভয় কেটে যাবে।

ভারতের নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ১৯৯৬ সালে বিজেপি ২ শতাংশ মুসলিম ভোট পেয়েছিল। ১৯৯৮ সালে অটল বিহারি বাজপাই ১৩ দিনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তা বেড়ে হয়েছিল ৫ শতাংশ। ১৯৯৯ সালে বিজেপি মুসলিম ভোটারদের ৬ শতাংশ ভোট পায়। ২০০৪ সালে তা বেড়ে হয় ৭ শতাংশ। ২০০৯ সালে আবার বিজেপির মুসলিম ভোট কমে ৪ শতাংশ হয়। ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে আসামে জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ, বিহারে সাড়ে ১৬ শতাংশ, কেরালায় ৬ শতাংশ, রাজস্থান ও  মহারাষ্ট্রে ৯ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গে ২৮ শতাংশ, উত্তর প্রদেশে ১৮ শতাংশ মুসলিম ভোট আছে। এসব ভোটারের মধ্যে ৪০ শতাংশই তরুণ।

ভারতের নির্বাচন বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে ২২টিতে মুসলিম ভোটে ফলাফল নির্ধারিত হয়। ২০০৯ সালে পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে জোট নিয়ে সরকার গঠনকারী কংগ্রেস মুসলিমদের ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ভারতে মুসলিমদের ভোটের পাল্লা কংগ্রেসের দিকে ভারী বহুকাল ধরে। তবে পশ্চিমবঙ্গে যেমন বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল কংগ্রেস মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট যায়, তেমনি আঞ্চলিক বিভিন্ন দলও কংগ্রেসের এই ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাচ্ছে।

দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে এবার কংগ্রেসকে হটিয়ে সরকার গঠনকারী আম আদমি পার্টিও যে মুসলিমদের ভোটে ভাগ বসিয়েছে, যা স্পষ্ট হল চাঁদনী চকের রিকশাচালক মুসলিম আলীর কথায়। তিনি বলেন, সম্প্রদায়গত হানাহানির অতীতের তিক্ত বিষয়গুলো এবার ভোটে তেমন গুরুত্ব পায়নি। আমরা চাই, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগোতে। দারিদ্র্যমুক্ত একটি ভারত চাই। এটা যে দল নিশ্চিত করতে পারবে, তাদেরই ক্ষমতায় যেতে দেয়া উচিৎ।

নয়া দিল্লি থেকে চাঁদনী চকে যাওয়ার সহজ পথ হচ্ছে মেট্রো রেল। নগরীর অধিকাংশ মানুষের চলাচলের প্রধান বাহন এটি। রোববার বন্ধের দিন মেট্রো রেলে উঠে দেখা গেছে, মুসলিম যাত্রীরাও সংখ্যায় কম নয়। মেট্রো রেলের যাত্রী নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাহিদা ইয়াসমীনের কাছে ভোটের খবর জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্থিতিশীল ভারতের জন্য কংগ্রেসের মতো দলই ক্ষমতায় থাকা উচিৎ। সরকারে থেকে নানা ব্যর্থতার জন্য কংগ্রেসের চেয়ে এবার বিজেপি এগিয়ে আছে বলেও  স্বীকার করেন এই ভোটার।

পুরনো দিল্লির চাঁদনী চকে যেমন মসজিদ রয়েছে, প্রতিদিন মাইকে নামাজের আজান শোনা যায়। তেমনি পাশাপাশি অনেক মন্দিরও রয়েছে, সেইসঙ্গে রয়েছে শিখ সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ও। চাঁদনী চক জামে মসজিদ এলাকায় বসবাসরত মৌলভী আহমেদ উল্লাহ বলেন, হিন্দু-শিখদের সঙ্গে মিলে-মিশে আমরা এই এলাকায় বসবাস করি। উগ্র সম্প্রদায়িক কোনো দল ক্ষমতায় যাক, তা আমরা মনে-প্রাণে চাই না। নির্বাচনে কে জিতবে এবার- জানতে চাইলে তার উত্তর আসে, বলা মুশকিল। প্রচারণায় মোদি এগিয়ে থাকলেও গোপন ভোটে ভোটাররা কাছে ভোট দিয়েছে, তা কে জানে? সবুর করুন, ১৬ মে জেনে যাবেন।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025